ভ্যাকসিন সংকট

ভেস্তে যেতে পারে বৈশ্বিক লড়াই

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২১, ১০:১৯ পিএম
ভেস্তে যেতে পারে বৈশ্বিক লড়াই

ঢাকা : এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বজুড়ে চলছে এক অদৃশ্য জীবাণুর বিরুদ্ধ লড়াই। নাম কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষায় ৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত গবেষকরা বের করেন বেশ কয়েকটি টিকা।

এসব টিকা শতভাগ সুরক্ষা দিতে না পারলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন ও ভারত এরই মধ্যে ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন করছে কোটি কোটি ডোজ টিকা।

কিন্তু এসব টিকার এতো বিপুল চাহিদা যে কোনো দেশই নিজের দেশের নাগরিকের জন্য পর্যাপ্ত টিকাই উৎপাদন করতে পারেনি। তাই নানা কৌশলে তারা টিকা রপ্তানি করতে চাচ্ছে না। 

আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞরা জানান, টিকা উৎপাদনে বর্তমানে সবচেয়ে বড় কারখানা আছে ভারতে। কিন্তু তাদের শঙ্কা, ভারত সরকারের টিকা রপ্তানিতে স্থগিতাদেশের কারণে মহামারীর বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াই ভেস্তে যেতে পারে। পাশাপাশি টিকার বিপুল মজুত গড়ে তোলা ধনী রাষ্ট্রগুলোর উচিত তাদের মজুত করা টিকা দ্রুত অন্য দেশের সাথে বিনিময় করা। তা না হলে দীর্ঘায়িত হবে মহামারী।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য টিকা পাওয়া নিশ্চিত করতে কোভ্যাক্সের টিকার ঘাটতি পূরণে ধনী রাষ্ট্রগুলো এগিয়ে না এলে মহামারী পরিস্থিতি আগের স্থানে ফিরে যেতে পারে।

কারণ, দরিদ্র দেশগুলোর জন্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইআই) মাধ্যমে অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ডের কোভিশিল্ড টিকা পাওয়ার ভরসায় ছিল কোভ্যাক্স। কিন্তু গত মাসে ভারতের পরিস্থিতির দ্রুত অবনতিতে দেশটির সরকার টিকা রপ্তানিতে স্থগিতাদেশ দিলে ১০ কোটি ডোজ টিকার ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা অক্সফামের স্বাস্থ্যনীতি ব্যবস্থাপক অ্যানা ম্যারিয়ট বলেন, এটা খুব উদ্বেগের বিষয়। টিকার উৎপাদন ও সরবরাহ হাতেগোনা ওষুধ কোম্পানির একক নিয়ন্ত্রণ ও কোভ্যাক্সের মাধ্যমে দাতব্য কার্যক্রমের ওপর নির্ভরশীল বর্তমান উদ্যোগ ব্যর্থ হতে যাচ্ছে। এর ফলে মানুষ মারা যাচ্ছে।

তার মতো অনেকেই বলছেন, উন্নত দেশ ও অঞ্চলগুলোর উচিত তাদের আলোচনা ফলপ্রসূ করা এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে টিকার মজুত ভাগাভাগি করা। রয়টার্স প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে জানায়, ভারত টিকা রপ্তানিতে স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়াচ্ছে, যার অর্থ হচ্ছে সেদেশ থেকে অক্টোবরের আগে বড় আকারে রপ্তানি শুরু করা সম্ভব হবে না।

ওয়েলকাম গ্লোবাল হেলথ ট্রাস্টের আন্তর্জাতিক নীতি ব্যবস্থাপক উইল হল বলেন, রপ্তানিতে ভারতের স্থগিতাদেশ বাড়ানোর ফলে এখন ধনী দেশগুলোর টিকার ভাণ্ডার ভাগাভাগি করার বিষয়টি আরো জরুরি হয়ে উঠেছে। ছয় মাসের মধ্যে নয়, এক মাসের মধ্যেও নয়, বরং এখনই তা করা উচিত।

এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, বৈশ্বিকভাবে ভাইরাসটিকে দ্রুত পরাস্ত করতে না পারলে পরিস্থিতি আগের জায়গায় চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ, এটি যত ছড়াবে তত অভিযোজনের সুযোগ বাড়বে। এক পর্যায়ে এমন পরিস্থিতি হতে পারে, যখন টিকা বা চিকিৎসা-কোনোটাই কাজে আসবে না।

কোভ্যাক্সের লক্ষ্য হচ্ছে তাদের এই উদ্যোগে অংশ নেওয়া ৯০টিরও বেশি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের কমপক্ষে ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনা, যা মূলত দাতব্য সহায়তা হিসেবে পাওয়া। এই উদ্যোগ এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় কোটি ডোজ টিকা বিতরণ করেছে মূলত আফ্রিকার দেশগুলোতে যার বেশিরভাগই অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকা।

কোভ্যাক্সের যৌথ নেতৃত্বে থাকা গ্যাভি টিকা জোটের একজন মুখপাত্র বলেন, সরবরাহ ঘাটতি পোষাতে তারা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। রয়টার্সকে তিনি বলেন, যেসব দেশের নাগরিকেরা প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছে তাদের জন্য দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করায় গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। বিভিন্ন বিকল্প উৎস থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের চাহিদা পূরণের জন্য ডোজ বিনিময় করা দরকার।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র গত বুধবার জানিয়েছে জুনের শেষ নাগাদ তারা ফাইজার, মডার্না ও জনসনঅ্যান্ডজনসনের দুই কোটি ডোজ টিকা বিনিময় করবে, যার একটি উল্লেখযোগ পরিমাণ সরবরাহ করা হবে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। এর বাইরে বাইডেন প্রশাসন আরো ছয় কোটি ডোজ টিকা অন্যান্য দেশে সরবরাহ করার পরিকল্পনা নিয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য কমিশনার ভালদিস ডোমব্রোভস্কিস এ সপ্তাহে জানিয়েছেন, কোভ্যাক্সের মাধ্যমে তারা এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে টিকা সরবরাহ বাড়াতে কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত ইইউর সদস্য দেশগুলোর পক্ষ থেকে এক কোটি ১১ লাখ ডোজ টিকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে ৯০ লাখ দেওয়া হবে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে।

অন্যদিকে গত সপ্তাহে ইউনিসেফের যুক্তরাজ্য কার্যালয়ের একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ব্রিটেনে সব প্রাপ্তবয়স্ককে টিকা দেওয়া হয়ে গেলে তাদের হাতে পাঁচ কোটি ডোজ টিকা উদ্বৃত্ত থাকবে; যা গরিব দেশগুলোর জনগণকে দেওয়া সম্ভব।

গ্যাভির মুখপাত্র বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউটের ওপর কোভ্যাক্সের নির্ভরশীলতার বড় কারণ হলো মূলত এর বিপুল উৎপাদন সক্ষমতা, কম দামে টিকা সরবরাহের সামর্থ্য এবং দ্রুততার সঙ্গে লাখ লাখ ডোজ টিকা উৎপাদনের আশ্বাস।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!