এবার আসছে না ভারতীয় পশু

কোরবানির ঈদে দেশি গরু-মহিষে ভরসা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২১, ০১:৪০ এএম
কোরবানির ঈদে দেশি গরু-মহিষে ভরসা

ঢাকা : এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে মহামারি করোনার মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা।

তাই কোরবানির ঈদকে ঘিরে সরব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, প্রশাসন, সিটি করপোরেশন এবং পশু ব্যবসায়ীরা।

এদিকে সীমান্তের বেশ কয়েকটি জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এবার কোনোভাবেই যাতে ভারতীয় পশু দেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য কঠোর সতর্কতা জারি করেছে।

অন্যান্য বছর সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বিদেশি পশু, বিশেষ করে ভারতীয় পশু চোরাই পথে দেশে আসে।

কিন্তু গত বছর করোনায় সেটি অনেকখানি বন্ধ হয়ে যায়, যদিও অন্য বছরের তুলনায় গত বছর পশু কোরবানিতে পশু জবাই কিছুটা কম হয়। তা সত্ত্বেও সেবার শেষ মুহূর্তে রাজধানীর হাটগুলোতে পশুর সংকট দেখা দেয়। এ কারণে অনেকে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কোরবানি দিতে পারেননি। তাই রাজধানীর পশুরহাটগুলোতে এবারো কোরবানির পশু সংকটের শঙ্কা করছেন অনেকেই।

তবে সরকার জানিয়েছে, কোরবানির জন্য দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে পশু প্রস্তুত রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের খসড়া তালিকা অনুযায়ী এ বছর কোরবানির উপযোগী পশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৯ লাখ  ১৬ হাজার ৭৬৫টি। গত বছর ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি। আমরা মনে করছি দেশীয় উৎস থেকেই এবারের কোরবানিতে চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে।

এদিকে নতুন করে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে এবার কোরবানির পশুর হাট ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আগামী ২৭ জুন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে একটি সমন্বয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন অমিতাভ চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, ‘ওই বৈঠকের মাধ্যমে কার কী দায়িত্ব এবং পশুগুলোকে ঢাকায় নিয়ে আসা থেকে শুরু করে হাটসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গতবছর কোরবানি হয়েছিল ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩টি পশু।

মাঠ পর্যায় থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এবার ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার গরু-মহিষ, ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং অন্যান্য ৪ হাজার ৭৬৫ পশুসহ মোট ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি কোরবানিযোগ্য গবাদি পশু রয়েছে।

চলতি বছর মোটাতাজা গরু-মহিষের সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০টি, ছাগল-ভেড়া ২৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৮টি এবং গৃহপালিত গরু-মহিষের সংখ্যা ৬৮ লাখ ৮৮ হাজার ২০০টি, গৃহপালিত ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৪৯ লাখ ৯২ হাজার ২৫২টি।

এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৯২ হাজার ৮২১ জন খামারির ৬ লাখ ৪ হাজার ৬৬৪টি পশু, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪০ হাজার ৯৬৩ জন খামারির ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৪৩টি পশু, খুলনা বিভাগে ১ লাখ ৭ হাজার ২২৭ জন খামারির ৮ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২টি পশু, রাজশাহী বিভাগে ১ লাখ ২৭ হাজার ২৬১ জন খামারির ১৪ লাখ ১০ হাজার ৮০৯টি পশু, রংপুর বিভাগে ২ লাখ ২২ হাজার ৪১৮ জন খামারির ১৩ লাখ ৩ হাজার ২৪১টি পশু, সিলেট বিভাগে ১২ হাজার ৯৭২ জন খামারির ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭২৫টি পশু, বরিশাল বিভাগে ২০ হাজার ৩৮৭ জন খামারির ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৪টি পশু, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৪ হাজার ৬৬ জন খামারির ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩১৫টি পশু গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে গত বছর রাজধানীতে পশু সংকটের জন্য কোরবানির পশুর অর্যাপ্ততা নয়, বরং করোনার কারণে পরিবহন সংকট, নানা অনিশ্চয়তায় বেপারিরা ঢাকায় কোরবানির পশু কম আনায় সংকট তৈরি হয়েছিলো বলে জানিয়েছেন পশু ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।

টাঙ্গাইলের গরু ব্যবসায়ী হাবিবুল্লাহ জানান,  গতবছর তার মতো টাঙ্গাইলের অনেক ছোটখাটো ব্যবসায়ীই ঢাকায় গরু নেননি। তাদের ধারণা ছিলো করোনার কারণে অনেকেই কোরবানি দেবেন না।

এছাড়া করোনাকালীন নানা বিধি-নিষেধের কারণেও তারা শেষ পর্যন্ত ঢাকার হাটে গরু নেওয়া থেকে বিরত থাকেন।

করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে এবার যাতে কোনোভাবেই সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয় পশু প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের ভারতীয় সীমান্ত এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ভারত থেকে দেশে বৈধ-অবৈধ পথে অনেক পশু আসে এবং মানুষ যাতায়াত করে থাকে। ভারতীয় ভেরিয়্যান্ট আমাদের দেশে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছ।

কোনো অবস্থাতেই যেন ভারত থেকে মানুষ ও পশু না আসে, সে জন্য স্ব স্ব এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্টদের শক্ত অবস্থানে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’

মন্ত্রী স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে অনলাইনে আয়োজিত ঈদুল আজহা-২০২১ উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাট ব্যবস্থাপনা, নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাইকরণ এবং কোরবানির বর্জ্য অপসারণের প্রস্তুতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

এছাড়া তিনি জানান, এবার ঈদুল আজহায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্ধারিত জায়গায় কোরবানির পশুর হাট বসবে। এর বাইরে পশুর হাট বসতে দেওয়া হবে না।

তিনি সড়ক-মহাসড়ক এবং রেল লাইনে অবৈধ কোরবানির পশুর হাট বসানো বন্ধে কঠোর নির্দেশ দেন। তিনি এজন্য সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিসহ সবার সমন্বিত উদ্যোগে নেয়ার কথা জানান।

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর পৃথক ২৩টি স্থানে অস্থায়ী পশু হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এর মধ্যে ডিএনসিসি এলাকায় হাট বসবে ১৩টি, ডিএসসিসি এলাকায় বসবে ১০টি। ইতোমধ্যে এসব হাটের ইজারা চূড়ান্ত করতে সংস্থা দুটি পৃথক দরপত্র আহ্বান করেছে।

এই ২৩টি হাটের সঙ্গে ডিএনসিসির গাবতলী পশু হাট ও ডিএসসিসির সারুলিয়া পশু হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা চলবে। এই দুটি স্থায়ী হাটে সারা বছরই পশু বেচাকেনা হয়। তবে কোরবানির সময়টাতে এখানে পশু বেচাকেনায় সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়।

ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টরা জানান, হিজরি জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২১ জুলাই ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে অনুযায়ী তারা প্রসউতি নিচ্ছেন। তবে করোনা মহামারি পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে হাটের সংখ্যা কমতে পারে।

গত বছরও দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৪টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে করোনা সংক্রমণ বিবেচনায় ডিএনসিসিতে ১০টির পরিবর্তে ছয়টি এবং ডিএসসিসিতে ১৪টির পরিবর্তে ১১টি হাট বসানো হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!