ঢাকা : দেশে উদ্ভাবিত ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধানের চাল হাস্কিং মিলে ছাঁটাই শেষে বস্তাবন্দি হলেই হয়ে যায় মিনিকেট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে করে দেশে উদ্ভাবিত ধানের জাত ব্র্যান্ড ভ্যালু হারাচ্ছে। অন্যদিকে ভোক্তারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন।
খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য বাংলাদেশে উদ্ভাবিত স্ব স্ব জাতের ধানের নাম চালের বস্তায় উল্লেখ করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। চালের বস্তায় ধানের গুণাগুণসহ বিস্তারিত তথ্য থাকবে। এতে দেশে উদ্ভাবিত ধানের জাতের ব্র্যান্ডিং হবে। পাশাপাশি ভোক্তাও জানবেন কোন জাতের চালের ভাত খাচ্ছেন। খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়।
সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি জরিপ পরিচালিত হয়েছে। একাধিক সেমিনারে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কৃষিবিদদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়কেও আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা জানাব।’
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের ১৫টি জেলায় এ বিষয়ে একটি জরিপ চালানো হয়। এতে দেখা যায়, ব্রি-২৮ ও ২৯সহ বিভিন্ন জাতের ধানের চাল ছাঁটাই করে মিনিকেট, নাজিরশাইলসহ নানা নামে বাজারজাত করা হচ্ছে। কিন্তু মিনিকেট, নাজিরশাইল জাতের ধানের আবাদ আমাদের দেশে হয় না। এ ছাড়া চাল ছাঁটাই করতে গিয়ে অনেক বেশি ছাঁটাই করা হয়, এতে পুষ্টির মানও কমে যায়। ভিন্ন ভিন্ন নামে এসব চাল বাজারজাত করায় নিজেদের উদ্ভাবিত ধানের জাতের নামও জানতে পারছেন না দেশের মানুষ।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে কর্মরত অবস্থায় বিষয়টি নজরে আসে ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুমের। নিজ উদ্যোগে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেন। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন খাদ্য সচিব।
তিনি বলেন, ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। পাশাপাশি নিজেদের দেশে উদ্ভাবিত ধানের জাতের তথ্যও সবাইকে জানানো। আপনি খাচ্ছেন ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধানের চাল; কিন্তু বাজারে গিয়ে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে অন্য নামের চাল কিনছেন। এ ক্ষেত্রেও ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন।
আমরা এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (ব্রি) চিঠি দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রচারের আহ্বান জানাব। পাশাপাশি নিজেরাও পদক্ষেপ নেব, বলেন ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম।
একদিনেই এটি ঠিক করা যাবে না-উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ছাঁটাই করা ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধানের চাল স্থানীয় পর্যায়ে মিনিকেট নামে পরিচিত। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের কাছ থেকে এ বিষয়ে ডাটা সংগ্রহ করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা করছি। সবখানেই মিনিকেট ধান বা চালের কথা জানা গেছে। আমরা একটি ছাঁটাই নীতিমালা করতে চাচ্ছি, সেখানে এ বিষয়ে আরো স্পষ্ট বার্তা থাকবে।
বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম বলেন, এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। সবাইকে নিয়ে কাজটি শুরু করতে পারলে দ্রুত সফলতা পাওয়া যাবে। আমাদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এতে আমাদের সমর্থন থাকবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ২৩ মে মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পসমূহ নিয়ে বাস্তবায়ন অগ্রগতির পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। ভার্চুয়াল ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ওয়াহিদা আক্তার বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমি সভায় জানিয়েছি, বাজারে সম্ভবত ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধানের চাল থেকেই মিনিকেট চাল উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এসব জাতের ট্রেডমার্ক চালের বস্তার গায়ে আমরা দেখতে পাই না। এ বিষয়ে কিছু করা যায় কি না, তা বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানাই।’
ওই সময় কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মিলমালিক, কৃষি মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগে চালের বস্তায় স্ব স্ব ধানের জাতের নাম উল্লেখপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। সভা শেষে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে নীতিগত সিদ্ধান্তে উপনীত হন সবাই।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর এ বিষয়ে বলেন, আমরাও অনেক দিন ধরে বলে আসছি, চালের বস্তায় ব্রি উদ্ভাবিত স্ব স্ব জাতের ধানের নাম উল্লেখ করা হোক। পরীক্ষামূলক কিছু কিছু জায়গায় আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। অনেক এলাকার চালকল মালিকদের সঙ্গে আলাপ করে এটি করা হচ্ছে। তবে মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এলে দেশজুড়ে কাজটি করা সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘দেশের প্রায় শতভাগ চালের জোগান আমাদের উদ্ভাবিত ধান থেকেই আসে। অথচ ধানের জাতের ব্র্যান্ডিংয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে। দেরিতে হলেও এ ধরনের উদ্যোগ আমাদের জন্য অনেক ভালো ফল বয়ে আনবে। দেশের মানুষ জানতে পারবেন তারা কোন জাতের ধানের চাল খাচ্ছেন। তারা তাদের পছন্দ ও চাহিদা জানাতে পারবেন। এতে ওই জাত নিয়ে গবেষণার কাজও আরো ভালোভাবে করা যাবে।’
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :