ঢাকা : প্রতি মাসে এক কোটি বা তারও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি বয়সসীমা কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গণটিকাদান কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগামী সাত আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচির জন্য সব কাজ সম্পন্ন করে আনছেন তারা। এখন টিকাদান কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এই কর্মসূচিতে যুক্ত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, আগামী ছয় আগস্ট পর্যন্ত ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ চলবে। প্রশিক্ষণের শেষ দিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটি সংবাদ সম্মেলন করবেন। সেদিনই এ বিষয়ে সম্পূর্ণ পরিকল্পনা জানানো হবে। গ্রাম পর্যায়ে টিকা গ্রহণে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য স্থানীয় সরকার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সহায়তা চেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর- জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এতে যুক্ত করেছি। কারণ জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত না করলে সমস্যা হতেই পারে। এজন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্থানীয় পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সংসদ সদস্যদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি মিটিং করবেন- এমন একটি পরিকল্পনা রয়েছে।
এক কোটি টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। কিন্তু এত পরিমাণ টিকা দেশে আসবে কিনা প্রশ্নে অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, আমরা প্ল্যান করে রেখেছি, কিন্তু প্ল্যান প্রতি মুহূর্তেই বদলাবে টিকা পাওয়ার সাপেক্ষে। আমাদের মতো দেশে যদি প্ল্যান না করে রাখি, তাহলে তো কাজ করা যাবে না। আর প্ল্যান তো ফিক্সড কিছু না। আমরা মনে করি, প্ল্যান প্রতি মুহূর্তেই কাস্টমাইজড করা হবে কতটুকু পাওয়া গেল, কত বুথে টিকা দেওয়া যাবে- সবকিছুর ওপর।
স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক বলেন, আমরা পরিকল্পনা করে রেখেছি, যখন যেভাবে টিকা আসবে, সেভাবে আমরা কাজ করবো। তবে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, মাসে এক কোটির অধিক টিকা দেওয়া। তা না হলে আমরা সারা দেশকে কাভারে আনতে পারবো না। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হলে সেটাই করতে হবে।
অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের টিকাদান নিয়ে একেবারে একটি মাইক্রো প্ল্যান ঠিক করা হয়েছে। সে অনুযায়ীই কাজ হবে। সবাইকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা হলেও সেখানে ৫০ বছরের বেশি নারী এবং পুরুষদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে আর সকাল নয়টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত টিকা দেওয়া হবে।
টিকা কেন্দ্রের স্থান ঠিক করবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে। তবে কমিউনিটি ক্লিনিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের মতো স্থানগুলোকে টিকা কেন্দ্র করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে সাড়ে চার হাজারের মতো বা তারও বেশি টিকাকেন্দ্র হবে। একইসঙ্গে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে আর সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে কেন্দ্র করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ডা. শামসুল হক বলেন, সপ্তাহে তিন দিন টিকা দেওয়া হবে। কেন্দ্রগুলোতে দুজন থাকবেন টিকা দেওয়ার জন্য আর তিনজন ভলান্টিয়ার থাকবেন। তারাই টিকাদানের প্রতিদিনের কার্যক্রম মনিটর করবেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতি যেখানে মিলে যায়, সেখানে বিজ্ঞান বলছে বেশি বয়সী-অসুস্থ-গর্ভবতী নারী এবং ঝুঁকিগ্রস্ত যারা তাদের টিকা দিলে মৃত্যু এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কমবে। কারণ প্রোটেকশন তাদের বেশি দরকার। বর্তমানে এই যে ২৫ বা ৩০ বছর টিকার জন্য বয়স কমানো হয়েছে, এটা কমানো হোক। রেজিস্ট্রেশন হোক। কিন্তু সর্বস্তরে যেন এই সংস্কৃতি বহাল থাকে, যেহেতু এটা বিজ্ঞানের সঙ্গে মানানসই।
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, একটি ইউনিয়নে ৬০ বছরের কাউকে বাদ দিয়ে যেন ৫০ বছর বয়সীদের টিকা না দেওয়া হয় জ্ঞানত। কেউ অসুস্থ হয়ে ঘরে থাকলে যেন তাকে অন্তত টিকাদান কেন্দ্রে এনে টিকা দেওয়া হয়। গর্ভবতী এবং যেসব মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, তাদেরকে টিকা দেওয়া হোক। এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। অগ্রাধিকার যদি বদলে যায়, কেবল সংখ্যায় ভ্যাকসিন কাভার করলে কিন্তু তেমন বড় কোনো অগ্রগতি হবে না-বলেন তিনি।
তিনি বলেন, যারা তরুণ তাদের তুলনায় বৃদ্ধ এবং অসুস্থদের কেউ আক্রান্ত হলে মৃত্যুর সম্ভাবনা চার থেকে পাঁচগুণ বা কোথাও কোথাও আটগুণ বেশি থাকে বয়স্ক মানুষটির। তাই এবারে যখনি টিকাদান কর্মসূচি সম্প্রসারিত হবে সেখানে ঝুঁকিগ্রস্ত যারা বয়স-রোগ-প্রসূতি এবং দুগ্ধ দানকারী- এই চার গ্রুপ, যারা ঝুঁকিগ্রস্ত তাদেরকে টিকা দেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় প্রতিনিধিরা যেন খুঁজে খুঁজে এনে টিকা দেন। আর নারীরা যে টিকাদানে পিছিয়ে গেছে- এবারের টিকাদানে যেন সেটা কাভার করার জন্য নজর থাকে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :