লোকসানে ফল ব্যবসায়ীরা  

  • নিজস্ব প্রতিবেদক     | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১, ০৯:৩৪ পিএম
লোকসানে ফল ব্যবসায়ীরা  

ঢাকা : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধে ক্রেতা সংকটে লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে পাইকারি ও খুচরা ফল ব্যবসায়ীদের। 

তারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় বেশ কিছু ফল বেশি দামে কিনতে হয়েছে তাদের। ক্রেতা না থাকায় এখন তাদের লোকসান দিয়ে এসব ফল বিক্রি করতে হচ্ছে।

শনিবার (৩১ জুলাই) দেশের বৃহৎ ফলের আড়ত পুরান ঢাকার বাদামতলীর পাইকারি বাজার ও বিভিন্ন ফলের খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  পাইকারি বাজারে দেশি-বিদেশি সব ধরনের ফলেই প্রতি কার্টনে ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা বাজারে কেনা দামে বিক্রির ঘোষণা দিয়েও ক্রেতা পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা।

বাদামতলীর পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, চলমান কঠোর বিধিনিষেধের কারণে পাইকাররা আড়তে আসতে না পাড়ায় সব ধরনের ফলে লোকসান দিয়ে বিক্রি করছেন তারা। মৌসুম শেষ হওয়ায় আড়তে দেশি ফলের সরবরাহ কমেছে। ঈদের পর সরবরাহ কম থাকায় মালটা, আপেল ও দেশি আমের দাম বেড়েছে। বেশি দাম ফল কিনে তারা পড়েছেন বিপাকে। পাইকার ও ক্রেতা না থাকায় গুনতে হচ্ছে লোকসান।

আমদানিকারকরা জানান, বিধিনিষেধের কারণে ভারত, চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি কমেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন বিদেশি ফলের ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক বাদামতলীতে ঢুকতো। বর্তমানে সেখানে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক আসছে। আমাদের কোল্ডস্টোরগুলোতেও তেমন কোনো মজুত নেই। সবাই অল্প করে আমদানি করছে। দেশি ফলের মৌসুম শেষ হয়ে আসছে, এখন কিছু বিদেশি ফলের আমদানি বাড়বে। 

আড়তদাররা জানান, বর্তমানে আড়তে দেশি-বিদেশি সব ফলের সরবরাহ কমেছে। বিধিনিষেধের যা আসছে তা বিক্রির জন্য ক্রেতা নেই। এজন্য কেনা দামের থেকেও কম দামে লোকসান দিয়ে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের ফল। তবে দেশি ফলের মধ্যে আম, আনারস, লটকন, কিছু কাঁঠল আড়তে আসছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে এগুলোও শেষ হয়ে যাবে। 

বাদামতলী ঘাটে ৫২ বছর ধরে ফলের ব্যবসা করেন আহসান উল্লাহ ভান্ডারি। তিনি বলেন, চলমান কঠোর বিধিনিষেধের কারণে ফল ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা লোকসান দিচ্ছেন। আড়তে ঢাকার বাইরের কোনো ক্রেতা আসে না। ঢাকার ক্রেতারাও এক দিন ফল কিনলে ১০ দিন দেখা যায় না। তাই ক্রেতারা কি করবে। তাদের ফল বিক্রি শেষ হলেতো তারা ফল নিতে আসবে। সাধারণ মানুষের হাতেও টাকা নেই যে ফল কিনে খাবে।

জানতে চাইলে তালুকদার ফ্রুটসের ম্যানেজার মো. আনিসুর রহমান জানান, ঈদের পর দুই দিন একটু বেচাকেনা ভালো ছিল। এখন আড়তে পাইকার নেই বললেই চলে। আগে যেখানে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কার্টন ফল বিক্রি করতাম এখন সেখানে ১৫ থেকে ২০ কার্টন ফল বিক্রি হচ্ছে। আমের প্রতি কার্টনে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করছি। ঈদের পর ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি আজ পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখ টাকা লোকসানে আছি। ঈদের পর দুই দিন বাজার ভালো যাওয়ায় সব ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করেছে এখন সবারই লাখ লাখ টাকা ধরা। 

ফল ব্যবসায়ী মো. হাবিব বলেন, ১৬০ টাকা কেজিতে আম কিনে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। আগে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ কার্টন আম বিক্রি করতাম এখন সেখানে ৫ থেকে ৬ কার্টন বিক্রি করছি। তারপর পুলিশের ঝামেলাতো আছেই। বিধিনিষেধে সব শেষ করে দিয়েছে। ঋণ করে ব্যবসা করছি। এখন লোকসান দিচ্ছি। ভবিষ্যতে কি হবে জানি না। 

গুলিস্তানের খুচরা ফল বিক্রেতা মো. হোসেন বলেন, পাইকারিতে দাম কমলেও আমরা দাম কমাতে পারি না। কারণ আমাদের মালমাল আনার ভাড়া বেড়ে গেছে। অনেক ফল কার্টনে পচা পড়ে, ওজনে কম থাকে সব মিলিয়ে আমরা বেশি লাভ করছি না। এছাড়া বিধিনিষেধে ক্রেতাও নেই। দোকানও ঠিক মতো খুলতে পারি না। যে ফল আনছি তা কতো দিনে বিক্রি করবো জানি না। এরপর দোকান ভাড়া কর্মচারী সব কিছু দিয়ে আমরা লোকসানে আছি। শুধু দোকান ভাড়া উঠানোর জন্য এখন ব্যবসা করছি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে বছরে সোয়া এক কোটি টন ফল উৎপাদন হয়। এছাড়া দেশে প্রায় ১৩০ রকমের ফলের সন্ধান রয়েছে, তার মধ্যে প্রচলিত ও অপ্রচলিত প্রায় ৭২টি ফলের চাষাবাদ হয়। মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশের।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!