আফগান ইস্যুতে মিজানুর রহমান আজহারী

ভাইদের বিজয় মানে আমাদেরই বিজয়

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২১, ১১:০০ পিএম
ভাইদের বিজয় মানে আমাদেরই বিজয়

ঢাকা : বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবানের সশস্ত্র অভিযানের মুখে দেশ ছেড়েছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি।

রোববার (১৫ আগস্ট) তিনি আফগানিস্তান ছেড়ে প্রতিবেশী দেশ তাজিকিস্তানের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন।

কাবুলভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টলো নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীতে তালেবানের প্রবেশের পর দেশ ছেড়েছেন আশরাফ ঘানি। দেশ ছেড়েছেন তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও।

পরে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি পালাতেই আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট প্যালেসের দখল নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা।

এদিকে তালেবানের জয়ের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন দেশের প্রখ্যাত আলেম ও সুবক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী।

রোববার রাত ৮টায় আফগানিস্তানের নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে তিনি লেখেন, “পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে আমাদের ভাইদের বিজয় মানে আমাদেরই বিজয়। কারণ— আমরা এক দেহ, এক প্রাণ। ছাত্রভাইদের স্বাগতম। তাদের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হোক।

দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা এবং উন্নয়ন অব্যাহত রাখাই হবে এখন তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দূরদর্শীতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। আল্লাহ তা’আলা তাদের সহায় হোন।”

গনি সরকারের পতন, আফগান মসনদে তালেবান : এরইমধ্যে গোটা আফগানিস্তানে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন করেছে কট্টরপন্থী বিদ্রোহীগোষ্ঠী তালেবান। বিভিন্ন সূত্রের তথ্যে এমনটাই খবর পাওয়া গেছে। তবে এরইমধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন আফগানিস্তানের সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান আশরাফ গনি। রোববার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদা দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর- রাজধানী কাবুলের দখল নিতে চারপাশ থেকে একযোগে আক্রমণ শুরু করে সশস্ত্র তালেবান সদস্যরা।

ইতোমধ্যে রাজধানীর দখল প্রায় নিয়ন্ত্রণ চলে আসে তাদের হাতে। কাবুলের কেন্দ্রে এই মুহূর্তে অবস্থান করছে তালেনবান যোদ্ধারা। এদিকে দখলদার তালেবান বাহিনীর রোষ থেকে বাঁচতে কাবুল ছেড়ে বিদেশে পালাতে চাইছেন অনেকেই, কিন্তু আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট আগে থেকেই যাত্রীতে পরিপূর্ণ থাকায় সেই উপায়ও পাচ্ছেন না তারা। ফারজানা কোচাই নামে আফগান পার্লামেন্টের এক নারী সদস্য বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সম্ভবত খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কাবুলের দখল নিয়ে নেয় তালেবানরা। আর সেই সঙ্গে পতন ঘটে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির নেতৃত্বাধীন সরকারের। কাবুলের পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠায় জরুরিভিত্তিতে হেলিকপ্টার যোগে আফগানিস্তান ত্যাগ করছেন সেখানে অবস্থানরত মার্কিন কূটনীতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

এদিকে এক সংবাদ বিবৃতিতে আফগানিস্তান ইস্যুতে মন্তব্য করতে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতিকে আফগানিস্তানের চলমান গৃহযুদ্ধ আখ্যা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, কোন রাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি প্রত্যাশিত নয়। এটি সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

আফগানিস্তানের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে একমাত্র কাবুলই তালেবানের দখলে যাওয়া বাকি ছিল; রোববার সকালের দিকে বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীর যোদ্ধারা চতুর্মুখী আক্রমণ শুরু করায় আফগান সরকারের পতন আরও ঘণীভূত হয়। শেষ পর্যন্ত রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা না করে আশরাফ গনি তার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে পক্ষান্তরে আত্মসমর্পনেরই বার্তা দেন। এমনটাই জানিয়েছে রয়টার্স।

আন্তর্জাতিক সামারিক সহায়তা প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার মধ্যেই আফগানিস্তানজুড়ে সরকারি বাহিনী ও তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা আরও বেড়েই চলছিলো। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকার দখল নিয়ে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করছিল তালেবান। এই পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত প্রধান শহর কাবুলের পতন ঘটলো তালেবান আগ্রাসনের মুখে।

রোববার ভোরে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় নানগারহার প্রদেশের রাজধানী শহর জালালাবাদ দখলে নেয় সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধারা। আফগানিস্তানের পঞ্চম বৃহত্তম এই শহরটি রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ৮০ মাইল পূর্বে অবস্থিত। আফগানিস্তানের বড় শহরগুলোর মধ্যে একমাত্র কাবুলই তখন পর্যন্ত তালেবানের দখলে যেতে বাকি ছিল। পরবর্তীতে জালাবাদ থেকে কাবুল দখলের উদ্দেশ্যে সম্মিলিতভাবে আগুয়ান হয় তালেবান যোদ্ধারা এবং দ্রুতই রাজধানীর বুকে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।

এর আগে শনিবার চতুর্থ বৃহত্তম আফগান শহর মাজার-ই-শরীফ দখলে নেয় তালেবান। বিবিসি জানিয়েছে, মাজার-ই-শরীফ শহরটি ঐতিহ্যগতভাবেই তালেবান-বিরোধী শহর হিসেবে পরিচিত। মার্কিন সেনাসহ বিদেশি সেনাদের প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার মধ্যে দ্রুতগতিতে শহরটি দখলে নেওয়াকে তালেবানের জন্য বড় ধরনের বিজয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এদিকে কাবুলের আমেরিকান দূতাবাস থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার কাজে সহায়তা করতে আফগানিস্তানে ৫ হাজার সেনা পাঠানোর কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি জানিয়েছে, বিশেষ বিমানের মাধ্যমে ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক’ দূতাবাসকর্মীকে ফিরিয়ে আনতে কাবুল বিমানবন্দরে সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তানে সহিংসতার কারণে নতুন করে আরও আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অনেকে নিরাপত্তার আশায় বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাজধানী কাবুলে পালিয়ে গেছেন।

এছাড়া দখলকৃত এলাকায় নারীদেরকে জোরপূর্বক বোরকা পরিধানে বাধ্য করছে তালেবান যোদ্ধারা। এর পাশাপাশি সামাজিক নিয়মকানুন ভঙ্গের অভিযোগে তালেবান যোদ্ধারা সাধারণ মানুষকে মারধরসহ নির্যাতন করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একেবারে কাছাকাছি এলাকায় চলে এসেছে দেশটির বিদ্রোহীগোষ্ঠী তালেবানের সদস্যরা। শনিবার কাবুলের আশপাশের এলাকায় ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে এই বিদ্রোহীগোষ্ঠী। তাদের নিরবচ্ছিন্ন অভিযানের মুখে রাজধানী অভিমুখে বেসামরিক নাগরিকদের ঢল শুরু হয়েছে।

দেশটির দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বৃহত্তম শহরগুলো তালেবানের হাতে পতন হওয়ায় এখন রাজধানী কাবুল কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইরত সরকারি বাহিনীর সদস্যরা কোনও ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।

স্থানীয় একজন আইনপ্রণেতা শনিবার মার্কিন বার্তাসংস্থা এপিকে বলেছেন, বর্তমানে রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দক্ষিণের চার আসিয়াব জেলায় পৌঁছে গেছে তালেবান যোদ্ধারা।

এর আগে ৩০ দিনের মধ্যে তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলে নিতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা আগে যে অনুমান করেছিলেন; সেটি কার্যত ভুল প্রমাণিত হতে চলেছে। মার্কিন নিরাপত্তা সূত্র বলছে, মার্কিন গোয়েন্দাদের ধারণার আগেই কাবুলের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে যাওয়ার যে আশঙ্কা করা হয়েছিল তাই সত্য হতে চলেছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!