ঢাকা : তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এমন তথ্য জানিয়েছে।
নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তাপাড়ে ঢুকেছে বানের পানি। আপাতত পানি স্থিতিশীল থাকবে। তবে মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। এছাড়া দক্ষিণ অঞ্চলে নতুন করে বানের পানি দেখা দিতে পারে।
পাউবোর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মেঘনা অববাহিকার নদীগুলো ছাড়া দেশের সব প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী বুধবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি বাড়ার শঙ্কা না থাকায় তিস্তা অববাহিকার অঞ্চলগুলোর বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
তিস্তার পানি বাড়া-কমায় বিপাকে পড়েছে জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ১৫টি চর গ্রামের পাঁচ সহস্রাধিক পরিবার। এসব পরিবারের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন।
স্থানীয়রা জানান, জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেখানকার মানুষজন গরু-ছাগল নিয়ে নিরাপদে সরে গেছেন। বন্যায় প্রায় ১০ হাজার পরিবার বন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তার চরাঞ্চলের প্রতিটি বাড়ি কোমর থেকে হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে। কারো বাড়িতে রান্না করে খাবার কোনো উপায় নেই। জরুরিভাবে শুকনো খাবার বিতরণ প্রয়োজন বলে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, গত শুক্রবার নদীর পানি বিপৎসীমা অক্রিম করায় ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেরশ্বর ও পূর্ব ছাতনাই গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। শনিবার সকালে কিছুটা কমলেও বিকেলে বাড়তে শুরু করে।
রোববার ফের বিপৎসীমা অতিক্রম করায় স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার তিস্তাবেষ্টিত ১৫টি চর গ্রামের বাসিন্দা। চলতি বছরের ৯ জুলাই তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে উঠে। এরপর পানি কমলে এক মাসের বিরতির পর ফের বিপৎসীমার ওপরে পানি উঠা-নামা করতে শুরু করে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, পদ্মানদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানির সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলসমূহে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারত আবহাওয়া অধিদপ্তরের গাণিতিক মডেলের তথ্য অনুযায়ী, আগামীকাল নাগাদ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় অঞ্চলসমূহে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। এর ফলে এই সময়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কক্সবাজার জেলা ও দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় অঞ্চলের নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
পাউবো জানিয়েছে, তাদের পর্যবেক্ষণাধীন বিভিন্ন নদ-নদীর ১০৯টি স্টেশনের মধ্যে গত সোমবার পানির সমতল বেড়েছে ৬৮টিতে। কমেছে ৩৭টি স্টেশনে পানির সমতল। তিনটিতে অপরিবর্তিত আছে। একটির তথ্য সংগ্রহ এখনো শুরু হয়নি। চলতি বছর ইতোমধ্যে তিন দফা স্বল্পমেয়াদি বন্যা হয়ে গেছে উত্তরাঞ্চলে। এখনো পর্যন্ত বড় বন্যার কোনো আভাস দেখছে না পাউবো।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :