ঢাকা : দেশে করোনার মধ্যে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু। চলতি মাসে তিন সপ্তাহে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫ হাজারের অধিক রোগী। এ সময় আক্রান্তদের মধ্যে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশে গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৭৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার ৫০৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে শনিবার (২১ আগস্ট) বিকেলে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে রেকর্ড ৮০ শিশু ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭টি শিশু আইসিইউতে ভর্তি আছে। গতকাল ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সফি আহমেদ গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান। গত জানুয়ারিতে ৩২ জনের দেহে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বছর শুরু হয়েছিল। জুনে এটা ১৭২ জনে ওঠে। জুলাই মাসে সেটিই হয়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ২৮৬ জনে। তাতে সব মিলিয়ে এ বছরের প্রথম সাত মাসে ডেঙ্গুতে মোট শনাক্ত দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৫৮ জন। জুলাই থেকেই পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে। আগস্টে এসে চিত্রটি উদ্বেগজনক হয়ে পড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম গতকাল শনিবার থেকে বিকালে জানানো হয়, পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে শুধু ঢাকা বিভাগের হাসপাতালগুলোতেই ভর্তি হয়েছে ২৫৭ জন। অন্য বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে ২১ জন।
চলতি বছর এ নিয়ে ডেঙ্গু শনাক্ত হলো ৭ হাজার ৭৫০ জনের শরীরে। এসব রোগীর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ৬ হাজার ৫০৯ জন। বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ১ হাজার ২০৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৪১টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১ হাজার ১১৯ ডেঙ্গু রোগী।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে চলতি বছর ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত সাত মাসে ১২ জনের হয়েছে। আর তিন সপ্তাহে দিনে ২৩ জনের মৃত্যু হয়।
২০১৯ সালে ডেঙ্গু রোগে ১৭৯ জনের মৃত্যু ও লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর গত বছর সতর্ক অবস্থানে ছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তারপরও ২০২০ সালে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ১ হাজার ৪০৫ জন, যাদের মধ্যে ৬ জন মারা যায়। গত বছর সংক্রমণের মাত্রা কম থাকলেও এ বছর পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড মহামারির মধ্যে করোনা ও ডেঙ্গু নিয়ে যেসব রোগী হাসপাতালে আসছেন, তাদের অনেকেরই স্বাস্থ্য জটিলতা বেশি। আগামী দিনে এ ধরনের রোগী বাড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ডেঙ্গু নিধনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত মার্চ মাসে সিটি করপোরেশনগুলোতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে মশার উৎপত্তিস্থলগুলো ধ্বংস করে দিতে বলা হয়েছিল। তবে তাতে কোনো কাজ হয়নি।
ডেঙ্গু যেন না হয় তার ব্যবস্থা নিতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘ডেঙ্গু হলে নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগ সেবা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। তবে ডেঙ্গু যেন না হয়, সে জন্য সিটি করপোরেশনকে কাজ করতে হবে।’
রেকর্ড ৮০ ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু হাসপাতালে : ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সফি আহমেদ বলেন, বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালে একদিনে সর্বোচ্চ ৮০ শিশু ভর্তি হয়েছে।
সফি আহমদ বলেন, নগরী ও বাসাবাড়ির চারপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থাকা, নোংরা ড্রেন পরিষ্কার না করায় চলতি বর্ষা মৌসুমে মশার প্রজনন বেড়ে গেছে। অথচ নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে এবং মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করলেই মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডেঙ্গু থেকে রক্ষায় বাসা ও আশপাশের ড্রেন, ফুলের টব ইত্যাদিতে জমে থাকা পানি ফেলে দিয়ে সেগুলো পরিষ্কার রাখার আহ্বান জানান অধ্যাপক ডা. সফি আহমেদ।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আজ (২০ আগস্ট) পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে সর্বমোট সাত হাজার ৪৭২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ছয় হাজার ২৫১ জন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে নয়জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মে-তে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন, জুলাইয়ে দুই হাজার ২৮৬ জন ও ২০ আগস্ট পর্যন্ত চার হাজার ৮১৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :