বিপাকে বন্যাদুর্গতরা

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২১, ১২:৪১ পিএম
বিপাকে বন্যাদুর্গতরা

ঢাকা : দেশের ছয় জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া একাধিক নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। কিছু নদীর পানি বিপৎসীমায় অবস্থান করছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন বন্যা দুর্গতরা।

শনিবার (২১ আগস্ট) বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, সুরমা, কুশিয়ারা ছাড়া দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ে তিস্তা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, কুড়িগ্রাম, পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।  

এ সময়ে যমুনা নদী আরিচা পয়েন্টে এবং আত্রাই নদী বাঘাবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এছাড়া দুধকুমার নদীর পানি ৪ সে.মি., যমুনার পানি ৮ সে.মি. পদ্মার পানি ৪২ সে.মি., গড়াই নদীর পানি ২০ সে.মি. বিপৎসীমার উপরে রয়েছে।

ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ও কাজীপুর উপজেলার মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি উঠে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্যাদুর্গতরা। বন্যা কবলিত এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে রোপা আমন খেত, বীজতলা, আখ, পাট, তিল ও সবজি বাগানসহ বিভিন্ন ফসল।

পানি বাড়ায় তলিয়ে গেছে শাহজাদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ গো-চারণভূমি ও সবুজ ঘাস। ফলে দুই লক্ষাধিক গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গো-খামারিরা। বাড়ির ছোট ছোট খামারে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে গবাদি পশু। এতে নানান রোগ দেখা দিচ্ছে বলেও জানা গেছে।

জেলার কাজীপুর উপজেলার চরাঞ্চলের নাটুয়ারপাড়া, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, তেকানি, মুনসুরনগর ও খাসরাজবাড়ি ইউনিয়ন এবং চৌহালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শুরু হওয়া ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও বসতভিটা। নদীর পাড় থেকে ঘড়-বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন ভাঙন কবলিতরা।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, আরো দুদিন যমুনা নদীর পানি বাড়বে। তবে বিপৎসীমা অতিক্রম নাও করতে পারে। দু-চারদিন পর থেকে পানি কমতে থাকবে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, যমুনা নদীতে পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর রাখছি। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো বিতরণ করা হবে। এদিকে এক সপ্তাহ ধরে রাজবাড়ীতে পদ্মার পানি বেড়েই চলছে। গতকাল শনিবারও জেলার তিনটি পয়েন্টে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানি বাড়ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানা গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ৬টায় জেলার তিনটি গেজ স্টেশন পয়েন্টে পানি বেড়েছে। এর মধ্যে পাংশা সেনগ্রাম গেজ স্টেশন পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সদরের মহেন্দ্রপুর গেজ স্টেশন পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ও গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া গেজ স্টেশন পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পদ্মানদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এ ছাড়া নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে রাজবাড়ীর জেলার কয়েকটি গ্রামের হাজারো পরিবার।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ বলেন, পদ্মা নদীর পানি ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাটসহ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে। বিশেষ করে কালুখালী উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের হরিনবাড়িয়া ও রতনদিয়া, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়ন, সদরের বরাট, সেলিমপুর, খানগঞ্জ, মিজানপুরের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়বে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আরিফুল হক বলেন, কোনো এলাকা প্লাবিত হয়েছে এমন খবর পায়নি। তবে নদীর তীরবর্তী এলাকায় পানি ওপরে উঠে এসেছে। আমাদের বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নেওয়া আছে।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তা দেওয়া হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মানদীতে আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহে সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গোয়ালডুবি গ্রামের প্রায় ২০০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন শুরুর পর নদীতীরবর্তী এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। হুমকির মধ্যে রয়েছে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের বাখের আলী, মোড়লপাড়া, ফাটাপাড়া, চাকপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙন দেখে এই গ্রামের বাড়িঘর ভেঙে অনত্র নিয়ে যাওয়ায় ব্যস্ত গ্রামবাসী। কাটা হচ্ছে ছোট-বড় সব ধরনের গাছ। ইতোমধ্যেই পদ্মায় বিলীন হয়েছে এই গ্রামের পাকা-আধাপাকা কয়েকটি ঘরবাড়ি। স্থানীয়রা জানায়, হঠাৎ করে এক সপ্তাহ থেকে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। কয়েকদিন বিরতি দিয়ে গত মঙ্গলবার পুরোদমে তাণ্ডব চলে গোয়ালডুবি গ্রামে।

ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর পাড়ে জিওব্যাগ ফেলা শুরু করেছে। তবে জিওব্যাগ নয়, বাঁধ নির্মাণ করাই স্থায়ী সমাধান বলছেন স্থানীয়রা। শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ নির্মাণ করা গেলে এখনকার ভাঙন রোধ করা সম্ভব হতো বলে মনে করেন তারা। ক্ষতিগ্রস্তদের খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ভারতের দুটি রাজ্য উত্তর প্রদেশ ও বিহারে অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে সেখানে সবগুলো পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এর ফলে পদ্মানদীতে অধিক স্রোতের কারণে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী ভাঙনকবলিত ও হুমকিতে থাকা এলাকায় নদীর পাড়ে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান জানান, এই মুহূর্তে উত্তাল পদ্মা নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করা কঠিন কাজ। পাউবো কর্তৃপক্ষ নদী রক্ষায় সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গোয়ালডুবি গ্রামে ভাঙনের খবর পাওয়ার সাথে সাথেই জিওব্যাগ ডাম্পিং কাজ শুরু করা হয়েছে। এই গ্রামে হঠাৎ করে নদীর পাশ দিয়ে জায়গা নিয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে এবং তা অনেকদূর পর্যন্ত গেছে। সাধারণত নদী ভাঙনের এমন ধরন দেখা যায় না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গবেষক দল সরেজমিনে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!