ঢাকা : জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। এই সেবা কার্যক্রম ইসি থেকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরে কাজ বেড়েছে বলে দাবি ইসি কর্মকর্তাদের।
আর সেবা কার্যক্রম হস্তান্তরের প্রক্রিয়া কতোদূর তা নিয়ে মাঠপর্যায় থেকে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা আছেন ধোঁয়াশায়। ইসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছিলেন, এনআইডি সেবা হস্তান্তরের বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। এই সেবা নির্বাচন কমিশনের কাছে রাখার জন্য আমাদের যুক্তি তুলে ধরবো, বাকিটা সরকারের সিদ্ধান্ত।
এনআইডি সেবা কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তরের অগ্রগতি কতো দূর, জানতে চাইলে ইসি সচিব মো. হুমায়ূন কবীর খোন্দকার বলেন, এই বিষয়ে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি টেকনিক্যাল কমিটি, আরেকটি আইন সংশোধনী বিষয়ে কমিটি। কমিটি কাজ করছে, তারা কাজটি শেষ করুক তারপর দেখা যাবে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) ও ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, এনআইডি সংশোধন এবং নতুন ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আবেদন বেড়েছে। এনআইডি সেবা হস্তান্তরের বিষয়ে যে আলোচনা চলছে, এই কারণে এতো পরিমাণ আবেদন পড়তে পারে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, করোনাকালে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও কমিশন এনআইডি সেবা কার্যক্রম চালু রেখেছে। এই মহামারিতে ইসির ২৫০ জনের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন। দশজন কর্মকর্তা-কর্মচারী মারাও গেছেন।
গত ১৭ মে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম ইসির পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্ত করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বরাবর চিঠি দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-১০ একেএম ফজলুর রহমান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই চিঠির প্রেক্ষিতে ২৪ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব শফিউল আজিম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইসি সচিব ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই চিঠির অনুলিপি পাওয়ার পর এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ১৯ মে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার কাছে স্মারকলিপি এবং ২৭ মে (বৃহস্পতিবার) নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে ইসি সচিবের কাছে আরেকটি প্রস্তাবনা জমা দেয় বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। ২৩ মে একই বিষয়ে সিইসির কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।
এরপর ৩০ মে আবারো সিইসির কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় ইসি কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। এরপর ৭ জুন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম নিজেদের কাছে রাখার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয় ইসি।
ইসি চিঠি দেওয়ার পরও ২০ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই বিষয়ে ইসি সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠান। ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্তকরণ’ শিরোনামে পাঠানো সেই নির্দেশনায় বলা হয়-১৭ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঠানো পত্রের আলোকে ‘সরকার জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম আইনানুগভাবে নির্বাচন কমিশন হতে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায়, নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরাধ করা হলো।’
গত ১১ আগস্ট এই বিষয়ে তাগাদা দিয়ে আবারো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব শফিউল আজিম ইসি সচিবের কাছে চিঠি পাঠান। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত কার্যক্রম সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্ত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন জরুরিভিত্তিতে পাঠানোর জন্য নির্দেশিত হয়ে অনুরোধ করা হলো।
জানা যায়, ইসি ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ শুরু করে। ভোটার তালিকার সংগে এনআইডি দেওয়ার কাজটিও করে ইসি। ২০১০ সালে ইসির অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ একটি আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায়।
ইসির দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, তালিকায় বর্তমানে ১১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯ জন ভোটার রয়েছেন। প্রথম থেকে এনআইডি হারানো ও সংশোধন সংক্রান্ত সেবা বিনামূল্যে দিলেও ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ফি নেওয়া শুরু করে ইসি।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :