বাংলাদেশ থেকে সৈন্য অপসারণের আহ্বান ইন্দিরা গান্ধীর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২১, ১১:০২ এএম
বাংলাদেশ থেকে সৈন্য অপসারণের আহ্বান ইন্দিরা গান্ধীর

ঢাকা : ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর। বিজয়ের মাসের শুরুর দিন। এই দিনে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পার্লামেন্টের বক্তৃতায় উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সৈন্য অপসারণের জন্য ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান।

এ সময়ও তৎপর ছিল স্বাধীনতাবিরোধীরা। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতা গোলাম আজম বৈঠক করেছিলেন ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে। তিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগের দাবিটিও তুলেছিলেন। গোলাম আযম কমিউনিস্টদের অপতৎপরতা সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন। এছাড়া মিত্রপক্ষ ভারতের হামলার প্রতিবাদে খুলনায় হরতাল পালন করেন শান্তি কমিটির সদস্যরা।

এদিন মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়ার দর্শনা ও সিলেটের শমসের নগর আক্রমণ করে। কুষ্টিয়ার কাছে মুন্সীগঞ্জ ও আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের মধ্যে মুক্তিসেনারা মাইন বিস্ফোরণের মাধ্যমে পাক সৈন্যবাহী ট্রেন বিধ্বস্ত করে। এতে বহু পাকসেনা হতাহত হয়। সিলেটের ছাতক শহরে মুক্তিবাহিনী ও পাকসেনাদের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ৬৫ জন রাজাকার নিহত হয়। আর মুক্তিযোদ্ধারা সুনামগঞ্জ মৌলভীবাজার মুক্ত করে সামনে এগিয়ে যায়। কুমিল্লার কসবা রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৬০ জনের বেশি পাকসেনা নিহত হয়।

সিলেটের শমসের নগর ও কুষ্টিয়ার দর্শনা দখল লড়াইয়ের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে। এদিন রাতে কর্নেল শফিউল্লাহ, দ্বিতীয় বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার মেজর মঈন, ১১ বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার মেজর নাসিমের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী ও বেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেরানী, সিঙ্গারাইল, গৈরালসানী, রাজাপুর ও আজমপুর এলাকা শত্রæমুক্ত করে। যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন খাঁ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) শহীদ হন। আর ২৩ জন পাকসেনা নিহত হয়।

সাতক্ষীরা মহকুমার কালিগঞ্জ পাকবাহিনী মুক্ত হওয়ায় বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান, ফণি মজুমদার, তোফায়েল আহমেদ এমএনএ, অর্থসচিব এ জামান, আইজি এম এ খালেক কালিগঞ্জে বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠাকল্পে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।

এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী পশ্চিম ফ্রন্টে আক্রমণাত্মক ও পূর্ব ফ্রন্টে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে বাংলাদেশকে হানাদার বাহিনীমুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাজ্য সভায় বক্তৃতাকালে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সৈন্য অপসারণের নির্দেশ দেওয়ার  জন্য পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান।

অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়— সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, রাজশাহী ও যশোর জেলার ৬২টি থানা এবং নোয়াখালী জেলার সব চর এলাকায় বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পাকিস্তানি সেনারা পদে পদে মার খায়। সিলেটের কানাইঘাটে লড়াইয়ে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৩০ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। জুড়ি, বড়লেখা এলাকা থেকে পাকবাহিনী কামান সরিয়ে ফেলে। আর মুক্তিবাহিনীর হাতে পাকসেনারা বিপুল ক্ষতির শিকার হয়ে কুলাউড়া পালিয়ে যায়।

১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী সিলেটের শমসেরনগরে আক্রমণ চালিয়ে টেংরাটিলা ও দুয়ারাবাজার শত্রæমুক্ত করে। একাত্তরের ডিসেম্বর মাস থেকেই মুক্তিপাগল বাঙালি বুঝে নেয় তাদের বিজয় সুনিশ্চিত। ডিসেম্বরের শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধ সারাদেশে সর্বাত্মক রূপ নেয়। ডিসেম্বরের শুরুতেও চলতে থাকে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা হামলা। একে একে মুক্ত হতে থাকে দেশের বিভিন্ন জায়গা। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। শত্রæমুক্ত ঘোষণার পরও মুক্তিবাহিনীর অপারেশন চলতে থাকায় পাকি সেনারা সিলেটের গারা, আলীরগাঁও এবং পিরিজপুর থেকে ব্যারাক গুটিয়ে নেয়। তবে রাওয়ালপিন্ডিতে এক মুখপাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার শেষ হয়নি বলে বিবৃতি দেয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!