ঢাকা : দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একাত্তরের ৫ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে পাকি হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর আসতে থাকে। ডিসেম্বরের এদিন দখলদার মুক্ত হয় দেশের অনেক এলাকা।
১৯৭১ সালের এদিনে ঢাকার আকাশে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথবাহিনীর সঙ্গে পাকি বিমানবাহিনীর শেষ মরণপন লড়াই চলে। বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশে পাকি বাহিনীর প্রায় সব বিমান। তবে দুপুরের মধ্যেই পাকি বিমানবাহিনীর শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশে আগে থেকে মজুদ করা পাকিস্তানের সব জঙ্গি বিমান ধ্বংস হয়। এদিনে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশে পাকি বাহিনীর প্রায় সব বিমান।
হত্যা ও ধ্বংসের বিভীষিকায় বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে মুক্তিপাগল বাঙালি। চারদিকে বিজয়ের রণধ্বনি। ভারতীয় জঙ্গীবিমানগুলো সারাদিন ধরে অবাধে আকাশে উড়ে পাকি সামরিক ঘাঁটিগুলোতে প্রচন্ড আক্রমণ চালায়, অকেজো করে দেয় বিমানবন্দরগুলো। ভারতের বিমানবাহিনীর হিসেব মতে বারো ঘণ্টায় দু’শ বত্রিশবার তেজগাঁও এবং কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটিতে পঞ্চাশ টনের মতো বোমা ফেলা হয়। পাকি বাহিনীর কনভয়ের ওপর ভারতীয় জঙ্গি বিমানগুলো আক্রমণ চালায়।
এতে পাকিস্তানি বাহিনীর নব্বইটা গাড়ি ধ্বংস হয়। এছাড়াও পাকি বাহিনীর সৈন্য বোঝাই কয়েকটা লঞ্চ এবং স্টিমার ধ্বংস হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দখলমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার দিকে আসতে থাকেন।
সাবমেরিন ‘গাজী’ ছিল পাকিস্তানি নৌবহরের গর্বের বস্তু। বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনীর যৌথকমান্ডের সফল আক্রমণে তা ধ্বংস হয়। সাবমেরিনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হতে পাকিস্তান ধার হিসেবে পেয়েছিল। একাত্তরের এদিনে নৌবাহিনীর যৌথ কমান্ড চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সকল নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জাহাজগুলোকে বন্দর ত্যাগের পরামর্শ দেয়। তারা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতেও তাদের অপারগতা প্রকাশ করে।
এদিকে লে. আরেফিনের নেতৃত্বে চালনা নৌ বন্দরে বড় ধরনের আক্রমণ পরিচালিত হয়। এই যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং নৌ বাহিনীসহ সব সৈন্য বন্দর ত্যাগ করে। কোস্টাল গানসহ প্রচুর গোলাবারুদ হস্তগত হয় মুক্তিবাহিনীর।
একাত্তরের এদিনে মিত্রবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট স্থলপথে এগিয়ে আসতে থাকে। প্রধান সড়ক দিয়ে না এগিয়েও মিত্রবাহিনী বিভিন্ন সেক্টরের প্রধান প্রধান সড়কের কতগুলো এলাকায় অবরোধ সৃষ্টি করে।
এর ফলে ঢাকার সঙ্গে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের, নাটোরের সঙ্গে ঢাকা ও রংপুরের এবং যশোরের সঙ্গে নাটোর ও রাজশাহীর যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ভারতের ৫৭ মাউন্টেন ডিভিশন আখাউড়ার যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী আখাউড়ার দক্ষিণ এবং পশ্চিমাংশ দিয়ে অবরোধ করে। এখানে পাকিস্তানী বাহিনী মিত্রবাহিনীর সাথে যুদ্ধে টিকতে না পেরে অবশেষে আত্মসমর্পণ করে।
এদিকে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার জন্য চীনের পক্ষ থেকে ভারতকেই দায়ী করা হয় স্পষ্টভাবে। অন্য দিকে রাশিয়াও জাতিসঙ্ঘে উত্থাপিত এক প্রস্তাবে জানায় যুদ্ধবিরতির আগে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান আগে করতে হবে।
পাকিস্তান রক্ষায় বঙ্গোপসাগরে কেউ কোনো নৌ জাহাজ পাঠালে তারাও ভারতের আক্রমণের শিকার হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :