শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে পশুরহাট

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২২, ০৫:৩৮ পিএম
শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে পশুরহাট

ঢাকা : রাজধানীতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুরহাট। গতকাল জুম্মার নামাজের পর থেকে বেড়েছে বেচাকেনা। তবে গরুর দাম নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা। ক্রেতাদের মতে, দাম বেশি।

বিক্রেতাদের মতে, গোখাদ্যের দাম বেশি বলে স্বাভাবিকভাবেই গরুর দাম বেশি। বাজারে গরুর মাংসের দাম হিসেব করে গরুর দাম মূল্যায়ন করছেন উভয় পক্ষ। আবার ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই নজর রাখছেন বাজারের দিকে। তবে দুই পক্ষের নজর ভিন্ন। ক্রেতা নজর রাখছেন দাম কমার। আর বিক্রেতাদের নজর বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতির দিকে।

রাজধানীর কমলাপুর পশুরহাট ঘুরে রহমতগঞ্জ মাঠ পশুরহাটে আসেন পুরান ঢাকার মো. ইমরান। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ঘুরেও সাধ্যের মধ্যে গরু পাননি। অপেক্ষা করেছিলেন দাম কিছু কমে যাওয়ার। তবে বেপারিরা দাম ছাড়ছেন না। বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে হাজারীবাগের পশুর হাটে যান তিনি।

ইমরান বলেন, সকাল থেকে শতাধিক গরু দরদাম করেছি। সবাই গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ দাম হাকাচ্ছেন। তাদের চাওয়া অনুযায়ী মাংসের দাম হিসাব করলে ১০০০ টাকার বেশি পড়ে।

পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের বাসিন্দা আক্তার হোসেন দুপুরে বলেন, বেপারিরা দাম দেখছেন। নানা অজুহাতে গরুর দাম বাড়াচ্ছেন। গরু ছাড়ছেন না। তাই আপাতত বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। রাতে আবার আসব।

গরু কিনতে আসা মোহাম্মদ সালেক নামের পুরান ঢাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, আমি মাঝারি সাইজের একটি গরু ৯২ হাজার টাকায় কিনেছি। গত বছর একই গরু ৭৫ থেকে ৮০ হাজারে বিক্রি হয়েছে।

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পশুরহাটে ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতার সংখ্যা বাড়লেও হাটে পশু বেচাকেনা কম। ক্রেতারা দাম বেশি বলে অভিযোগ করলেও বিক্রেতারা বলছেন অন্য কথা। তারা জানান, পশুখাদ্যসহ সব জিনিসের দাম বাড়ায় গরুর দাম বেড়েছে। তবে একই কারণে এবার পশু কোরবানি কম হবে। অনেকেই কোরবানি করবেন না বা ভাগে কোরবানি দেবেন। তাই এবার পশু বিক্রি কম হবে।

রাজধানীর রহমতগঞ্জ পশুর হাটে নিজ খামারের ১৭টি গরু নিয়ে এসেছেন সিরাজগঞ্জের মো. সেলিম। তিনি ১৩টি মাঝারি সাইজের (৩-৪ মণ মাংস) এবং ৪টি বড় সাইজের (৬-৮ মণ মাংস) গরু নিয়ে এসেছেন। গত দুই দিনে তার মাত্র একটি গরু বিক্রি হয়েছে। পাঁচটি গরুর দামই জিজ্ঞেস করছে না কেউ।

তিনি বলেন, বন্যার পানি থাকা সত্ত্বেও গরুগুলোকে খুব যত্ন করে নিরাপদে রেখে ঢাকায় এনেছি। কিন্তু আজ (শুক্রবার সকাল) পর্যন্ত বাজারের অবস্থা ভালো না। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বিক্রি বাড়বে ভেবেছিলাম, তবে ক্রেতা তেমন নেই। অল্প কিছু ক্রেতা হাটে এলেও তারা কেবল দেখছেন আর দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন। বিক্রি খুব কম। আমি একটি মাঝারি সাইজের গরু বিক্রি করেছি ৯৫ হাজার টাকায়। অথচ এটা আরো ১০ হাজার টাকা বেশিতে বিক্রির মতো। বাজার দেখে গরু বিক্রি করতে বাধ্য হলাম।

কুষ্টিয়া থেকে বাড়িতে পালন করা ৩৩টি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন বেপারি সাইজু ইসলাম। তিনি বলেন, আমি রমজান মাসে গরুগুলো কিনেছিলাম। চার দিন হলো হাটে এসেছি, বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকালে মোট পাঁচটি গরু বিক্রি করেছি। আমার সবচেয়ে বড় গরুটি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ৩ মাস আগে কিনেছিলাম। ৩ মাস খাওয়ানোর পর এটাকে ১ লাখ ৮০ হাজারে বিক্রির কথা ভেবেছিলাম। আজ সকালে সেটা ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। অন্যবারের তুলনায় এবার ক্রেতা অনেক কম।

পাবনা থেকে ঢাকায় তিনটি বড় গরু নিয়ে এসেছেন জয়নাল আহমেদ। তিনি বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী গরুগুলো লালন-পালন করেছি। আমার ৩টাই বড় গরু, এক সাইজের। মাংস হবে ১০ থেকে ১১ মণের মতো। গরুগুলো আমি ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখের মধ্যে বিক্রি করব ভেবেছিলাম। এখনো একটাও বিক্রি হয়নি। একটার সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ২ লাখ ৫০ হাজার। গরুর মাংসের কেজি ৭২০ টাকা। ক্রেতারা এই দামও বলছে না।

এদিকে শেষ মুহূর্তেও কোরবানির পশু বেচাকানায় পুরো বাজার জুড়ে তৈরি হয়েছে উৎসবের আমেজ। গতকাল রাজধানীর অন্যতম অস্থায়ী কোরবানির পশুরহাট আফতাবনগরে দেখা যায় ক্রেতারা একেকটি পশু নিয়ে বের হচ্ছেন, আর আশপাশের মানুষ দাম জানতে চাইছেন। কেউ-কেউ গভীর মনোযোগ দিয়ে কেনার আগে পশুটি ভালোভাবে দেখে নিচ্ছেন।

শুক্রবার সরেজমিনে আফতাবনগর ও মেরাদিয়া পশুরহাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। প্রায় ৪-৫ কিলোমিটারের বিশাল এলাকা জুড়ে বসেছে পশুরহাট। আছে গরু, ছাগল, ভেড়ার মতো প্রাণী। বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনেক কর্মীরা এসেছেন সংবাদ সংগ্রহে। অসংখ্য ক্রেতা-দর্শনার্থী, বিক্রেতাদের ভিড়ে গমগম করছে পুরো এলাকা।

কেউ বা নিজের অতিযত্নে পেলেপুষে বড় করা গরু বা ছাগলটি নিয়ে এসেছেন। দীর্ঘ ভ্রমণের ধকল পেরিয়ে খুঁটিতে বাঁধা পশুর পাশেই গামছা পেতে খানিকটা নিদ্রা যাচ্ছেন কেউ কেউ। পাশেই বসেছে বিভিন্ন পশুখাদ্যের দোকান। খড়, ঘাস, বিচুলি, খৈল, ভুষির পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা।

বাড্ডা থেকে ছেলে, বড়ভাই এবং পরিবারের আরো কয়েকজন সদস্য মিলে গরু কিনতে এসেছেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, গরু কিনতে এসেছি মূলত, বাজেট ৭০ হাজার টাকা। কিছু কম-বেশি হলেও নিয়ে নেব। এর আগে দুদিন এসে ফিরে গেছি। আজকে নিয়েই ফিরব, এমন ইচ্ছে আছে। আগে ভালোভাবে দেখব। পরিবারের আরো অনেকে মিলে এসেছি। একটি উৎসবের আবহ তৈরি হয়েছে এখানে, ভালোই লাগছে।

নিকেতনের বাসিন্দা আফরাজ আবির সন্তানসহ গরু কিনতে এসেছেন। পছন্দের পশুটি কেনার আশায় হাট চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। জানালেন একা কোরবানি দেওয়ার জন্য ৫০-৬০ হাজারের মধ্যে একটি গরু কিনতে এসেছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!