ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে চলমান এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৯৫ শতাংশ। এটি দিয়ে যান চলাচলে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ছাড়াও টোলের প্রস্তাবনায় ১২ ধরনের যানের জন্য টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, থ্রি-হুইলার চলাচলের সুযোগ রাখা হচ্ছে না। বছরের শুরুতে টানেল চালু করতে যানবাহনের টোল হারও চূড়ান্ত করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলেই এটি কার্যকর করা হবে। টোল নির্ধারণে জনগণ, পরিবহন মালিক ও ব্যবসায়ীদের ব্যয় সক্ষমতাকে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল জনপ্রিয় করতে শুরুতেই টোল হার নির্ধারণে নমনীয় থাকছে সেতু বিভাগ। এটি নির্মাণে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। তবু জনগণের সুবিধার্থে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে টোলের হার রাখা হয়েছে সমসাময়িক যে কোনো যোগাযোগ অবকাঠামোর চেয়ে কম। টানেল দিয়ে একটি প্রাইভেটকার, জিপ, পিকআপ চলাচলে দিতে হবে ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে ২৫০, বাসে (৩১ আসন পর্যন্ত) ৩০০ টাকা। তবে সার্বিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে শুরুতে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা থ্রি-হুইলার জাতীয় কোনো যানবাহন চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামকে উপহার হিসেবে একাধিক মেগা প্রকল্প ছাড়াও টানেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো দিয়েছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখবে।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রকল্পটি কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শেষ করে উদ্বোধনের পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। টানেলের সর্বোচ্চ নিরাপত্তাসহ নিয়ন্ত্রিত থাকবে যানবাহন চলাচল। টোলের খসড়া এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে।’ অর্থ বিভাগের অনুমোদনের পর সেটি কার্যকর হবে বলে জানান তিনি। টোল নিয়ে একই কথা বলেছেন, সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদাউসও।
চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রামে আশার আলো দেখাচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল। কর্ণফুলী নদীর ওপর একাধিক সেতু থাকলেও টানেলের মতো স্থায়ী ও টেকসই যোগাযোগ অবকাঠামো চট্টগ্রাম শহরকে আশপাশের জেলা-উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করবে। এ টানেলে ট্রাফিক ব্যবস্থার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণও জরুরি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা, কক্সবাজার জেলাকেন্দ্রিক বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে টানেল সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানেলটি চট্টগ্রামসহ দেশের অর্থনীতির বড় নিয়ামক হিসেবে হাজির হবে। সেজন্য শুরু থেকেই এটি দিয়ে যানবাহন চলাচল জনপ্রিয় করতে অপেক্ষাকৃত কম টোল রাখা হচ্ছে। যানবাহনের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে ধারাবাহিকভাবে টোল হার বাড়ানো হবে। এ ক্ষেত্রে জনগণ, পরিবহন মালিক ও ব্যবসায়ীদের ব্যয় সক্ষমতার বিষয়টিকে সবচেয়ে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর সেতু বিভাগের এক জরুরি সভায় নতুন করে বঙ্গবন্ধু টানেলের টোল হারের খসড়া প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। সেতু মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আবুল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে দেখা যায়, শাহ আমানত সেতুর বর্তমান বিদ্যমান টোল হারের আড়াই থেকে তিনগুণ বাড়িয়ে বঙ্গবন্ধু টানেলে চলাচলকৃত যানবাহনের টোল হারের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রস্তাবনায় মোট ১২ ধরনের যানবাহনের জন্য টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
টোল হারের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, টানেল দিয়ে চলতে প্রাইভেটকার বা জিপ গাড়িকে দিতে হবে ২০০ টাকা, যা শাহ আমানত সেতুর টোলের প্রায় আড়াইগুণ বেশি। পিকআপের জন্য শাহ আমানত সেতুতে টোল না থাকলেও টানেলে নতুন প্রস্তাবনায় টোল ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। এ ছাড়া সেতুতে মাইক্রোবাসে ১০০ টাকার বিপরীতে টানেলে ২৫০, বাস (৩১ আসনের কম) ৫০ টাকার বিপরীতে টানেলে ৩০০, বাস (৩২ আসনের বেশি) ১৫৫ টাকার বিপরীতে টানেলে ৪০০ এবং বাস (৩ এক্সেল) শাহ আমানতে টোল নির্ধারণ না থাকলেও টানেলের জন্য নতুনভাবে প্রস্তাব করা হয়েছে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ট্রাক (৫ টন) শাহ আমানতে ১৩০ টাকার বিপরীতে টানেলে ৪০০, ট্রাক (৫.০১ থেকে ৮ টন পর্যন্ত) ২০০ টাকার বিপরীতে টানেলে ৫০০, ট্রাক (৮.০১ থেকে ১১ টন পর্যন্ত) ৩০০ টাকার বিপরীতে ৬০০, ট্রাক (৩ এক্সেল পর্যন্ত) টানেলের জন্য নতুনভাবে প্রস্তাবনা করা হয়েছে ৮০০ টাকা। ট্রেইলার (৪ এক্সেল পর্যন্ত) ৭৫০ টাকা টোলের বিপরীতে ১ হাজার টাকা এবং ট্রেইলার (৪ এক্সেলের অধিক) শাহ আমানতে চলাচলের সুযোগ না থাকায় টানেলে টোল হারে এ যানবাহনের জন্য ১ হাজার টাকার সঙ্গে এক্সেল অতিরিক্ত ২০০ টাকা টোল ধরা হয়েছে। মোট ১২ ধরনের যানবাহনের জন্য টোল হার প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সোনালীনিউজ/এম
আপনার মতামত লিখুন :