চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ভেতর চলতে হলে কোন গাড়িকে কত টোল দিতে হবে, তার একটি তালিকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এই তালিকা অনুযায়ী গাড়িভেদে ২০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা দিতে হবে।
সেতু কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবিত টোলের এই হার গত ২০ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অনুমোদন পেয়েছে। এখন তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
কোন গাড়ির কত টোল
সেতু কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করা টোল অনুযায়ী, টানেলের মধ্য দিয়ে যেতে হলে প্রাইভেট কার, জিপ ও পিকআপকে দিতে হবে ২০০ টাকা করে। শাহ আমানত সেতুতে ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য ৭৫ টাকা এবং জিপের জন্য ১০০ টাকা দিতে হয়।
আর টানেলের ভেতর চলতে হলে মাইক্রোবাসের জন্য দিতে হবে ২৫০ টাকা। শাহ আমানত সেতুতে এই হার ১০০ টাকা। ৩১ বা এর চেয়ে কম আসনের বাসের জন্য ৩০০ এবং ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের জন্য ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। যদিও শাহ আমানত সেতুতে নেওয়া হয় যথাক্রমে ৫০ ও ১৫৫ টাকা।
টানেল দিয়ে যেতে হলে ৫ টনের ট্রাকে ৪০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকে ৫০০ টাকা, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাকে ৬০০ টাকা টোল দিতে হবে। তবে শাহ আমানত সেতুতে টোল নেওয়া হয় যথাক্রমে ১৩০, ২০০ ও ৩০০ টাকা। ট্রেইলরের (চার এক্সেল) টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০০ টাকা। শাহ আমানত সেতুতে এই হার ৭৫০ টাকা। চার এক্সেলের বেশি হলে প্রতি এক্সেলের জন্য দিতে হয় ২০০ টাকা করে।
টোলের হার নির্ধারণের বিষয়ে সেতু কর্তৃপক্ষের উপসচিব মো. আবুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, শাহ আমানত সেতু এবং দেশের বিভিন্ন সেতুর সঙ্গে তুলনা করে টানেলের টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে তা এখনো প্রস্তাবিত। এটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। আইন মন্ত্রণালয় ভেটিং করবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদনের পর চূড়ান্ত করা হবে। এর মধ্যে টোলের হার পরিবর্তন হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, টানেল চালু হওয়ার পর ২০২৫ সালে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। এ ছাড়া ২০৩০ সালে যানবাহন চলাচলের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সালে যানবাহনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ৬২ হাজার।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুটি টিউব বা সুড়ঙ্গের মধ্যে দক্ষিণ সুড়ঙ্গের (টিউব) পূর্তকাজ শেষ হয়েছে। এই সুড়ঙ্গ চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে নগরের পতেঙ্গা প্রান্ত পর্যন্ত। এটি এখন যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত। উত্তর সুড়ঙ্গের (পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী) কাজও শেষের পথে। এটির কাজ শেষ হলে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া যাবে টানেলটি। গত ২৬ নভেম্বর সকালে দক্ষিণ সুড়ঙ্গের পূর্তকাজের সমাপ্তি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৪ শতাংশ। বাকি কাজ আগামী জানুয়ারিতে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
এই টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী প্রথম বা উত্তর সুড়ঙ্গের খননকাজের উদ্বোধন করেন। ২ হাজার ৪৪৬ মিটার দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গের খননকাজ শেষ হয় ২০২০ সালের ২ আগস্ট। দ্বিতীয় বা দক্ষিণ সুড়ঙ্গের (আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী) খননকাজ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর। গত বছরের ৭ অক্টোবর এই খননকাজ শেষ হয়।
সূত্র-প্রথম আলো
সোনালীনিউজ/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :