‘দেশি প্রকৌশলীরাই বানাতে পারবে আরেকটি পদ্মা সেতু’

  • লাইজুল ইসলাম | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২৩, ১০:০৩ পিএম
‘দেশি প্রকৌশলীরাই বানাতে পারবে আরেকটি পদ্মা সেতু’

ঢাকা: দেশের সবচেয়ে বড় পদ্মা সেতুতে গাড়ির পাশাপাশি চলবে ট্রেনও। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে সেতুটি নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ ও চীনের প্রকৌশলীরা। সেতুটি নির্মাণে বিদেশি প্রকৌশলীদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা। তারা মনে করেন, এখন বিদেশি কনসালটেন্টদের সহযোগিতা ছাড়াই পদ্মা সেতুর মতো আর একটি সেতু তৈরি করা সম্ভব।

পদ্মাসেতু উদ্বোধন হয়েছে গত বছরের ২৫ জুন। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় পদ্মা রেলসেতু। এই সেতু নিয়ে বেশ কিছু জটিলতা থাকলেও তা কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি প্রকৌশলীদের সামনে। সব বাঁধা বিপত্তি কাটিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়েছে পদ্মা রেলসেতুর কাজ। এখন এর ট্রায়াল শুরু হবে। ট্রায়াল শেষে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত চলবে ট্রেন।

রেলসেতু পরিদর্শন শেষে সোনালীনিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পদ্মা বহুমুখী সেতুর সিনিয়র ব্রিজ এন্ড ভায়াডাক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. জহরুল হক বলেন, আমরা যা এতদিন জানতাম না তা এখন জানি। আগে যা বুঝতাম না তা এখন বুঝি। তাই আমি মনে করি একটি টিম পেলে আমি নিজেই এই পদ্মা সেতু তৈরি করে ফেলতে পারবো। বেশি না, ছয় সাতজনের একটা টিম হলেই পদ্মাসেতুর পুরো প্রকল্প এখন নিজেরাই করা সম্ভব। 

তিনি বলেন, ‘চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের (সিআরইসি) কর্মকর্তারা অনেক সহযোগিতা করেছেন দেশের প্রকৌশলীদের। এজন্য আমরা অনেক কিছু খুব ভালো ভাবে শিখতে পেরেছি। যা আমরা আগে কখনো দেখিনি সেটাও দেখেছি এই সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে। তাই বলাই যায়, এখন নিজেরাই নতুন করে আরো একটি পদ্মাসেতু তৈরি করতে পারব। 

এই প্রকৌশলী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর দুই পার্ট। একটি সড়ক অন্যটি রেল। এই দুই পার্টে আমার কাজ করা সুযোগ হয়েছে। দুই প্রকল্পতেই বিশ্বের সব থেকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। আর এই আধুনিক প্রযুক্তিগুলো আমরা চীনের প্রকৌশলীদের কাছ থেকে শিখেছি। চায়না প্রকৌশলী যারা এখানে এসেছেন তারা সবাই যুবক। কিন্তু তারা অনেক কিছু জানেন। তারা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের থেকে অনেক খানি এগিয়ে। তাদের কাছ থেকে আমরা অনেক প্রযুক্তি ব্যবহার শিখেছি।’

তিনি বলেন, ‘কম খরচে কম মেশিনারিজ দিয়ে কিভাবে একটা কাজ তুলতে হবে তা তাদের কাছ থেকে আমরা শিখেছি। এত কম মেশিনারিজ ও এত কম খরচে কিভাবে কাজ করা যায় তা শেখা যায় তাদের কাছ থেকে। আমি অন্যান্য দেশের প্রকৌশলীদের সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু এত কম খরচে এত কম যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করেন একমাত্র চায়না প্রকৌশলীরাই। ন্যূনতম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তারা কাজ করতে পারেন। আর এটার সঙ্গে যেহেতু আমরা যুক্ত হতে পেরেছি অবশ্যই আমরা এখান থেকে শিখেছি।’

‘এখানে শুধু প্রকৌশলীরাই না, যুক্ত ছিলেন দেশের অনেক শ্রমিকও। আমরা সবাই এখান থেকে অনেক কিছু শিখেছি। যে বিরাট নলেজ এখান থেকে শেয়ারিং হয়েছে, তাতে আমি মনে করি আরো একটা পদ্মা সেতু এখন আমরা নিজেরাই তৈরি করতে পারবো। এই ধরনের বড় কাজ যদি ভবিষ্যতে করতে হয় তাহলে আমরাই কাজটি পরিচালনা করতে পারবো। বাইরের কারো সহযোগিতা লাগবে না।’ 

প্রকৌশলী জহরুল হক বলেন, ‘আমি ভেরি ভেরি হোপ ফুল। এমন একটা পদ্মাসেতু যদি আমার নেতৃত্বেও হয় তাহলে আমি নিজেই বানাতে পারবো। আমার কিছু জুনিয়র যদি আমার সঙ্গে থাকে তাহলেই হবে। আমার এই কনফিডেন্ট আছে যে আমি এটা পারবো। পদ্মা সেতুর সব কিছুর সঙ্গেই আমি যুক্ত ছিলাম। সব কিছু আমি নিজেই দেখেছি। কাগজপত্র যা কিছু সবই আমি জানি। তাই আমার ভেতরে এই কনফিডেন্ট তৈরি হয়েছে।’

উল্লেখ্য, বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়। সড়কপথে দুয়ার খুলে যায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের। কিন্তু অপ্রাপ্তি ছিল একটাই উদ্বোধনের দিন পদ্মা সেতুতে চলেনি ট্রেন। সাড়ে নয় মাস পরে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটছে আগামী ৪ এপ্রিল। এদিন প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে পদ্মা সেতুতে চলবে ট্রেন।

সোনালীনিউজ/এলআই/আইএ

Link copied!