ঢাকা : আজ বিকেলে ঢাকায় আসছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কোনো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশে এটাই প্রথম সফর।
ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন ল্যাভরভ। বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে মস্কোর প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে এই সফরকে একটি পদক্ষেপ বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সূত্রগুলো।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সক্রিয় সমর্থন, খাদ্য, সার ও জ্বালানির মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ ছাড়া ইউক্রেন সমস্যার পর থেকে বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি, সার নিরাপত্তা, নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ রাশিয়াকে অনুরোধ জানাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় বাংলাদেশকে সমর্থন জানিয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। তাই রাশিয়াকে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানের পাশাপাশি জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে আগামী দিনে বাংলাদেশের প্রার্থিতার বিষয়ে রাশিয়ার সহযোগিতা কামনা করা হবে এই সফরে।
কে এই সের্গেই ল্যাভরভ : সের্গেই ভিক্টোরোভিচ ল্যাভরভ, ৭৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ পুতিনের শাসনের শুরু থেকেই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ বিচক্ষণতার সাথে সামলে আসছেন। রাশিয়ার একজন অত্যন্ত বিচক্ষণ ও দক্ষ কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে।
১৯৫০ সালের মার্চের ২১ তারিখে রাশিয়ার মস্কোতে জন্মগ্রহণ করেন সের্গেই ল্যাভরভ। ১৯৭২ সালে মস্কো স্টেট ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর শ্রীলঙ্কায় সোভিয়েত দূতাবাসে কাজ করেছেন ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত।
২০০৪ সালে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার আগ পর্যন্ত জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন ১০ বছর। ২০০৪ সাল থেকে অর্থাৎ ১৯ বছর ধরে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলে আসছেন তিনি।
গত ১৯ বছরে রাশিয়ার মন্ত্রীসভায় নানা ধরনের পরিবর্তন ও রদবদল হলেও ল্যাভরভকে কখনোই তার পদ থেকে সরানো হয়নি।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ, শক্ত, নির্ভরযোগ্য হিসেবে তাকে বর্ণনা করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। আবার ভ্লাদিমির পুতিনের উত্থানের পেছনে ল্যাভরভকেই মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বলে থাকেন কেউ কেউ।
১৯ বছরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বকালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল, সিরিয়া যুদ্ধে অংশগ্রহন, উত্তর কোরিয়ায় পরমাণু কর্মসূচিসহ নানা ধরনের আগ্রাসী কূটনীতির পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার সবশেষ আগ্রাসী কূটনীতি, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ।
সিরিয়া, ইউক্রেন এবং অন্যান্য সংকটের বিষয়ে রাশিয়ার নীতির সাথে তার কখনও কখনও ভয়ঙ্কর অভিব্যক্তির কারণে ল্যাভরভ "মিস্টার নিয়েট" ("মিস্টার নো") ডাকনাম অর্জন করেছে।
রুশ, ইংরেজি, ফরাসি, শ্রীলংকাসহ অন্তত পাঁচটি ভাষায় দক্ষতা রপ্ত করেছেন সের্গেই ল্যাভরভ। একইসঙ্গে একজন প্রখর ক্রীড়াবিদ ও তিনি।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :