ঢাকা : প্রায় তিন মাস আগে অতিরিক্ত আইজিপি থেকে পুলিশ সুপার পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। কিন্তু এই সময়েও পদোন্নতির বিষয়টি সুরাহা করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। উল্টো পুলিশের দেওয়া তালিকা কাটছাঁট করা হচ্ছে। এইড নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে পুলিশে।
পুলিশের অভিযোগ, অন্য ক্যাডারদের দ্রুত পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাদের বেলায় নানা অজুহাত দেখানো হচ্ছে। এ কারণে আগামী অক্টোবরের মধ্যে তালিকা অনুযায়ী পদোন্নতির বিষয়টি সুরাহা চাচ্ছে পুলিশ।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা মন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। সর্বশেষ গত বুধবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেছেন অন্তত ২৬ জন ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) এই পদোন্নতিতে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পরে গত ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভাও হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত পদ ২১২টি। কিন্তু এই পদমর্যাদায় কর্মরত কর্মকর্তার সংখ্যা ৪২৬। পদ না থাকলেও ধাপে ধাপে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে সবাইকে। গত মে মাসে একসঙ্গে ১৪৪ জন যুগ্ম সচিবকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। যুগ্ম সচিব পদের সংখ্যা ৫০২। কিন্তু কর্মরত আছেন ৯৩৬ জন।
অতিরিক্ত সচিবের মতো যুগ্ম সচিব পদেও পদ ছাড়াই পদোন্নতি দেওয়া হয় অনেক কর্মকর্তাকে। ৪ সেপ্টেম্বর ২১১ এবং গত বছরের নভেম্বরে ১৭৫ জন উপসচিবকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পদোন্নতিপ্রাপ্ত অনেককেই সুপারনিউমারারি পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
একই প্রক্রিয়ায় পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত ডিআইজি, ডিআইজি ও অতিরিক্ত আইজিপি পদে ৭২০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পুলিশ সদর দপ্তর।
ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, ৭২০ জনের প্রস্তুাবটি ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। জুন মাসে তালিকাটি সংশোধন করে ৫২৯ জনের চূড়ান্ত তালিকা করে স্বরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। ২০ জুলাই পদোন্নতি দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয় ফাইলটি। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩৪২ জনের বিষয়ে ছাড়পত্র দেয়। বাকিদের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
জানা গেছে, অতিরিক্ত আইজিপি পদে ২, ডিআইজি পদে ৫০, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
কিন্তু পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) ৩৪, উপমহাপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ১৪০, অতিরিক্ত উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) ১৫০ ও পুলিশ সুপার ১৯০ পদের পদোন্নতির সুপারিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন পুলিশের নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়।
পদোন্নতি পাওয়ার পর ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ রেঞ্জে নিয়োগ দেওয়া হবে। তা ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর মহানগর পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর, এসবি, সিআইডি, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা, পুলিশ স্টাফ কলেজ, রেলওয়ে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, এপিবিএন, এন্টি টেররিজম ইউনিট, পিবিআই, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, মেট্রোরেল পুলিশ ইউনিট ও পিটিসি ইউনিটে (টাঙ্গাইল, নোয়াখালী, রংপুর ও খুলনা) সুপারনিউমারারি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি না পাওয়ার হতাশা থেকে বের করে আনতেই এই পরিকল্পনা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। কিন্তু যেভাবে কাটছাঁট করা হচ্ছে তাতে সবাই পদোন্নতি পান কি না, সন্দেহ করছেন। এ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পদোন্নতি হওয়ার পর কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পাবে তা সত্য। অন্য ক্যাডাররা পেলে আমরা কী দোষ করছি? আমরা তো রাষ্ট্রের জন্যই কাজ করি। কিন্তু মন্ত্রণালয় যেভাবে কাটছাঁট করে পদ চূড়ান্ত করছে তা কিছুতেই মানতে পারছি না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পদোন্নতির সংখ্যা কমানো হয়েছে। তারপরও তালিকা ছোট করছে মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতনরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আবার কথা বলবেন আমরা জানতে পেরেছি। আশা করি সরকারপ্রধান আমাদের পদোন্নতির বিষয়টি সুরাহা করবেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘সুপারনিউমারারির মাধ্যমে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে দ্রুত সময়ে। এ নিয়ে আমরা কাজ করছি।’ সূত্র : দেশ রূপান্তর
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :