উন্নয়ন সংস্থাগুলোর ঋণ সহায়তায় শেখ হাসিনার ৫ প্রস্তাব

  • শাহীন হাওলাদার, জাতিসংঘ সদর দফতর থেকে | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩, ০৯:৩২ পিএম
উন্নয়ন সংস্থাগুলোর ঋণ সহায়তায় শেখ হাসিনার ৫ প্রস্তাব

ঢাকা: বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থার প্রয়োজন মেটাতে বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা তুলে ধরে উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে ঋণ সহায়তা প্রদানে সুনির্দিষ্ট পাঁচ প্রস্তাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের অর্থায়নে স্বল্প সুদে ঋণ দানের পাশাপাশি ঋণ প্রদানকারী বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক, আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে তাঁদের প্রাধান্যকে ঢেলে সাজানো এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অতিরিক্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ সভার দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সদর দফতরে সিআর-১৬-তে ‘টুওয়ার্ডস এ ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল আর্কিটেকচার’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় কাউন্সিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সভাপতি ওই বৈঠক পরিচালনা করেন।

এসময় তিনি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর আর্থিক অবস্থার পুনর্গঠনে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে একমত পোষণ করেন এবং বৈশ্বিক ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করতে বিশ্বনেতাদের কাছে সুনির্দিষ্ট পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন।

প্রথম প্রস্তাব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এমডিবি, আইএফআই এবং বেসরকারি ঋণদাতা সংস্থাগুলোকে তাদের অগ্রাধিকারগুলো পুনরায় সাজাতে হবে এবং এসডিজি বাস্তবায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবেলার জন্য অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহ করতে হবে।

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দফা প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য স্বল্প ব্যয়ে, রেয়াতি হারে তহবিলের পর্যাপ্ততা প্রয়োজন এবং পছন্দসই উচ্চমানের বিপুল পরিমাণে অনুদান এবং সমস্ত ঋণদানের উপকরণগুলোতে দুর্যোগের ধারা থাকতে হবে যাতে দুর্বল দেশগুলো
সংকটকালের ধাক্কা সামলাতে পারে।

চতুর্থ দফা প্রস্তাবে তিনি বলেন, ঋণদাতাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে ন্যায্য ও কার্যকর ঋণ হিসেবে ত্রাণ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।পঞ্চম এবং শেষ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটার পরিবর্তে এসডিআর ঋণের সীমা প্রয়োজন এবং সীমাবদ্ধতার ভিত্তিতে সহজ ঋণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত।

এদিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের দ্বিতীয়দিনে স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে দুইদিনের এসডিজি সামিট শেষ হয়। এই সামিটের সমপনী অনুষ্ঠানে টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এতে সামিটের সমাপনী দিনেও অংশ নেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারি প্রতিনিধি দল ও টেকসই উন্নয়নের সাথে জড়িত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও অংশীজনেরা।

একইদিনে প্রধানমন্ত্রী, শ্রিলংকার প্রেসিডেন্ট, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী, তিমুরের প্রেসিডেন্ট এবং আন্তর্জাতিক এ্যাটমিক এ্যানার্জি এ্যাজেন্সির মহাসচিবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে এসকল দেশের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

এর বাইরে মঙ্গলবার অধিবেশনের দ্বিতীয়দিনের ফাঁকে আরও কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের সাইডইভেন্টে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এরমধ্যে জাতিসংঘ সদর দফতরে সিআর-১১তে বাংলাদেশ, অ্যান্টিগা এবং বারবুডা, ভুটান, চীন, মালয়েশিয়া, চ্যাথাম হাউস এবং সুচনা ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে চিকিৎসা পরিষেবা ভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টেও যোগ দেন।

কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবায় বৈশ্বিক সহায়তার আহ্বন প্রধানমন্ত্রীর :
কমিউনিটি ক্লিনিকের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কমিউনিটি ভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের চাবিকাঠি।  আমরা বহুপাক্ষিক অর্থায়ন সংস্থাগুলোসহ আমাদের উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি উন্নয়নশীল বিশ্বে কমিউনিটি-ক্লিনিক স্বাস্থ্য সেবায় তাদের সহায়তার হাত প্রসারিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। টেকসই উন্নয়ন ও সার্বজনীন স্বাস্থ্যের বিষয়ে আমাদের সম্মিলিত কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য এই বছর শপথ নেয়ার সময় আমরা আপনাদের উপস্থিতিতে উৎসাহিত বোধ করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আশা করি, তৃণমূল পর্যায়ে দেশের জনগণের স্বাস্থ্য সেবা প্রদর্শনে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নিদর্শন হয়ে থাকবে। আমরা বুঝতে পেরেছি যে, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো পুনরায় চালু করা ও এগুলোর টেকসইয়ত্ব শুধুমাত্র এগুলোর মালিক ও রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী স্থানীয় জনগণের ওপর নির্ভর করে। ৯০ শতাংশ সেবাপ্রার্থী কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতি সন্তুষ্ট। ২০১৮ সালে আমাদের পার্লামেন্ট কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্ট অ্যাক্ট পাশ করেছে। যাতে এর কার্যক্রম ও ফান্ডিং পদ্ধতি আরও সহজতর করা যায়।

বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘে নিযুক্ত স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিকের ভূমিকা নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও দেখানো হয়।

সভা শেষে মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক আসা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার স্ত্রী জিল বাইডেনের দেওয়া সংবর্ধণা অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

অপরদিকে সাধারণ সভার তৃতীয় দিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য আন্তর্জাতিক পাবলিক ফাইন্যান্সিং বৃদ্ধি এবং দক্ষতা নিশ্চিতকরণ’ শিরোনামে উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন (এফএফডি) বিষয়ে ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে একটি উচ্চ-পর্যায়ের বিতর্কে প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।

আইএ

Link copied!