ঢাকা : রাজনীতির মাঠে সংঘাত আর সহিংসতার মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ৯০ দিনের সময় গণনা শুরু বুধবার (১ নভেম্বর) থেকে।
সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন শেষ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সেই লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
নির্বাচন আয়োজনের সব প্রস্তুতি এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি রেওয়াজ অনুযায়ী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সার্বিক বিষয়ে অবহিত করবে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন।
২০১৪ সালের মত এবারও ভোটের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক মতপার্থক্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তৈরি করেছে উত্তেজনা। বিএনপি ও সমমনাদের হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচিতে সংঘাত আর প্রাণহানি জনমনে বাড়াচ্ছে উদ্বেগ।
এমন পরিস্থিতিতে মতভেদ নিরসনে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজার পরামর্শ আসছে পর্যবেক্ষক মহল থেকে। কিন্তু প্রধান দুই পক্ষের অনড় অবস্থানের মধ্যে সমঝোতার কোনো আভাস মিলছে না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল গত সপ্তাহেই বলেছিলেন, ভোটের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ এখন হয়নি। তবে মঙ্গলবার তিনি এও বলেছেন, পরিবেশ প্রতিকূল হলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় ভোট করা ছাড়া কোনো বিকল্প নির্বাচন কমিশনের নেই।
নির্ধারিত পদ্ধতিতে (দলীয় সরকারের অধীনে) ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনে) অবশ্যই নির্বাচন হবে, এ বিষয়ে কমিশন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
বাংলাদেশের নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোও তৎপর। আগামী নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়, সেই তাগিদ কূটনীতিকরা দিয়ে আসছেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস মঙ্গলবারও বৈঠক করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে। সেখানেও রাজনৈতিক মতভেদ নিরসনে নিঃশর্ত সংলাপের তাগিদ এসেছে।
নির্বাচনকালীন ৯০ দিনে বিদ্যমান সরকারের সব ধরনের সহায়তা পাওয়ার প্রত্যাশার পাশাপাশি এ সময়ে প্রশাসন, পুলিশসহ ভোট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড মনিটরিং করার কথা ইতোমধ্যে বলেছেন সিইসি।
৮ অক্টোবর ডিসি-এসপিদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি হুঁশিয়ার করেছেন, দলীয় সরকারের অধীন মনে করে কর্মকর্তারা যেন নিজেদেরকে দলীয় কর্মী বা সমর্থক না ভাবেন। এমন কোনো আচরণ যাতে তারা না করেন, যাতে সরকারি বা গণকর্মচারী হিসেবে তাদের নিরপেক্ষতা জনগণের দৃষ্টিতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
সিইসি বলেছেন, নির্বাচনের সময় ইসির অবস্থান থাকবে কঠোর। মাঠ কর্মকর্তাদের কাজও পর্যবেক্ষণ করা হবে। দায়িত্ব পালনে কোনো শিথিলতা সহ্য করা হবে না।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইতোমধ্যে বলেছেন, তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে কাজ করবে, যেমনটা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে হয়েছিল। এই সময়ে সরকার কেবল রুটিন দায়িত্ব পালন করবে, কোনো নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবে না।
এবার নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কেমন হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইতোমধ্যে সে বিষয়ে ধারণা দিয়েছেন।
ভোটের সময় ও অধিবেশন : ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের দফা ৩ এ (সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে) বলা হয়েছে- (ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাবার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাবার ক্ষেত্রে ভেঙে যাবার পরবর্তী নববই দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।
তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিরা, উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করবেন না।
নির্বাচনকালীন এই ৯০ দিনে সংসদ অধিবেশন বসার বাধ্যবাধকতাও নেই।
এ বিষয়ে সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের দফা ১ এ বলা হয়েছে- ১২৩ অনুচ্ছেদের (৩) দফার (ক) উপ-দফায় উল্লিখিত নব্বই দিন সময় ব্যতীত অন্য সময়ে সংসদের এক অধিবেশনের সমাপ্তি ও পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম বৈঠকের মধ্যে ষাট দিনের অতিরিক্ত বিরতি থাকবে না।
তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার অধীন দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক লিখিতভাবে প্রদত্ত পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।
একাদশ সংসদের ২৫তম অধিবেশন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, তা ২ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। আর চলতি সংসদের মেয়াদ ২৯ জানুয়ারি শেষ হবে, কারণ এ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি।
৯০ দিনে কী করবে ইসি : নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, ৯০ দিনের শুরু ১ নভেম্বর থেকে হচ্ছে। তবে কমিশনের মূল কাজ শুরু হবে তফসিল ঘোষণার পর; মে সময় নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে।
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটের তারিখ রেখে নভেম্বরের প্রথমার্ধে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি।
এক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা সভা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা, নিবন্ধিত দলের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রথা অনুযায়ী সব ধরনের প্রস্তুতি অবহিত করতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে পুরো নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনকালীন এ সময়ে ভোট সংশ্লিষ্টদের নিয়োগ, বদলি থেকে আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসির কর্তৃত্ব থাকায় আইন-বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তরে নির্দেশনা পাঠানো হবে।
এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ ও অন্যান্য বিষয় গুছিয়ে ভোটের সম্ভাব্য দিণক্ষণ চূড়ান্ত করতে কমিশন সভা ডাকা হবে।
টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে সিইসি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে তফসিল ঘোষণা করবেন। তাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনসহ ভোটের সব ধরনের নির্দেশনা এবং দল, প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের নির্বাচনী আইন অনুসরণ ও ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান তুলে ধরা হবে।
১ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয় সভা, ৪ নভেম্বর দলগুলোর সঙ্গে মত বিনিময় ও ৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাব্য সূচি ঠিক করেছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম মঙ্গলবার বলেন, আমাদের দিক থেকে রোডম্যাপ অনুযায়ী সব ধরনের প্রস্তুতি হয়েছে। তফসিল নভেম্বরের প্রথমার্ধে হবে। তফসিলের আগে প্রস্তুতির পাশাপাশি ৪৪টি নিবন্ধিত দলকে ৪ নভেম্বর দুই ধাপে ইসিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মতামত জানতে।
নিবন্ধিত দলগুলোর সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বা তাদের অন্তত দুজন প্রতিনিধিকে কমিশনের সঙ্গে এ সংলাপে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দল এবং কয়েকটি বাম সংগঠন ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি। এমন ৮টি দলকে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে আসার আমন্ত্রণ জানালেও তারা আসেননি।
সংলাপের পরামর্শ : সংঘাত যে গণতন্ত্রের পথ নয়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচনের পথ খুঁজতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।
মঙ্গলবার আকস্মিকভাবে নির্বাচন ভবনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করার পর যুক্তরষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কোনো পক্ষের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমি আশা করি, সব পক্ষ শর্তহীনভাবে সংলাপে বসে সামনে দিকে এগোবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজে নেবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদও বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কৌশল সহিংসতামুক্ত হতে হবে। জনগণকে জিম্মি করে নির্বাচনী রাজনীতি করা যাবে না।
যখন কেউ জনগণকে জিম্মি করে এটা করে, সহিংসতা করে, তখনই বোঝা যায়, তারা নির্বাচনের পক্ষে নয়। এখান থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচনের একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ আমরা দেখতে চাই। যদি কোনো পক্ষ দাবি করে, সবকিছু তার মনমত হতে হবে, তার মানে নির্বাচনের যাওয়ার আগেই যদি আমি ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চাই, সে রকম পরিবেশ না হলে নির্বাচনে যাব না- সে ধরনের রাজনৈতিক কৌশল আমার মনে হয় না খুব টেকসই হবে।
সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনকেই ক্ষমতা বদলের উপায় হিসেবে দেখতে হবে এবং সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনমুখী হয়ে জনগণের প্রত্যাশাকে সম্ভাবনায় পরিণত করতে কাজ করতে হবে।
তবে বাস্তবতা যে ভিন্ন, সে কথা স্বীকার বরে আব্দুর রশীদ বলেন, আমরা সেখানে পৌঁছাতে পারছি না। বিরোধী দলকে আমরা দেখছি, তারা বৈদেশিক সাহায্যের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে আছে। সেটিও একটি সংকেত দেয় যে, কেউ যদি নির্বাচন করতে চায়, বৈদেশিক নির্ভরতা তো তাকে ভোট এনে দেবে না।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব রাজনৈতিক কৌশল গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা হোক বা সমঝোতা হোক, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
সেজন্য আলোচনা হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবে এ জায়গাটা খুব ছোট; সেখানে পারিপার্শ্বিক বিশ্বাস ও আলোচনার জায়গাটা ছোট হয়ে গেছে। … সে কারণে আমি মনে করি, শর্তহীনভাবে খোলা মনে যদি আলোচনায় আসে, সেটা হতে পারে। ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই কোন নিশ্চয়তা খোঁজার মত রাজনৈতিক কৌশল বাদ দিতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আব্দুল আলীম বলেন, গণতন্ত্রের অন্যতম পূর্ব শর্ত হল সংলাপ। যখন দলগুলোর মধ্যে দ্বিমত থাকবে, তখন দলগুলোকে এক জায়গায় বসতে হবে।
চিন্তা করতে হবে, কেন তাদের মধ্যে মতভিন্নতা। যেহেতু আমাদের দেশে দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে মত ভিন্নতা, এখন যদি সবাই একসাথে বসে বাংলাদেশের নির্বাচনের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে বসে এবং এগুলোকে কীভাবে দূর করা যায়, এসব নিয়ে আলোচনা করে, একটি ঐকমত্যে আসে, এর তো কোনো বিকল্প দেখি না।
এ নির্বাচন পর্যবেক্ষক বলেন, আগামীকাল (১ নভেম্বর) থেকে নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু, এখন পর্যন্ত যে সময় হাতে আছে, দলগুলো যদি একসাথে বসে, তাহলে একটি সমাধান আনা সম্ভব।
এখন যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচি দিচ্ছে, এটি একটি রাজনৈতিক বিষয়, সেভাবেই এটির সমাধান করতে হবে। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। বিরোধী দলগুলোকেও নরম হতে হবে। যখনই তাদের ডাকা হোক, তাদের সাড়া দিতে হবে। কথা তো বলতেই হবে। একজন আরেকজনের মুখ দেখব না, তাদের সাথে কথা বলব না, এক টেবিলে বসব না, একসথে চা খাব না, তাহলে তো হবে না। এটা তো গণতন্ত্র না।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া : আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।
সংসদ নেতা বলেন, কার সঙ্গে সংলাপ করব। বিরোধী দল কে? সংসদীয় পদ্ধতিতে বিরোধী দলের সংজ্ঞা আছে। সংসদে যাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে, তারাই প্রকৃত বিরোধী দল। এর বাইরে দল গণ্য হয় না, আমেরিকাতেও হয় না। …তাহলে কার সঙ্গে সংলাপ করব? খুনিদের সঙ্গে কীসের সংলাপ?
বিএনপির দিকে ইংগিত করে তিনি বলেন, খুনিদের সাথে কিসের বৈঠক, কিসের আলোচনা। যারা এভাবে মানুষ হত্যা করে, উন্নয়নকে ধ্বংস করতে পারে, তাদের সঙ্গে ডায়ালগ? বরং সে (পিটার হাস) বসে ডিনার খাক, সে বসে ডায়ালগ করুক। এটা আমাদের দেশ, আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। খুনিদের সঙ্গে ডায়ালাগ- এটা আমাদের বাংলাদেশের মানুষও চাইবে না। বরং বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণা করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য। যেটুকু অর্জন করেছিল তারা, আমরা সুযোগ দিয়েছিলাম। সেটা তারা হারিয়েছে।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সব সংশয় আর অনিশ্চয়তার কথা উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা কথাই বলতে পারি, নির্বাচন হবে এবং সময়মতই হবে।”
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু
আগের দুই নির্বাচনকালীন সরকার কেমন ছিল : সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে ১২ নভেম্বর তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের’ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট কোনো ঘোষণা না এলেও তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ‘ওই সরকারের’ কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।
সেদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেছিলেন, শিডিউল ঘোষণার শুরু থেকেই বলতে হয়, এই সরকার নির্বাচনকালীন সরকার। কনস্টিটিউশনে ওভাবে লেখা নেই আসলে, এমনিই। সরকার রেগুলার সরকারই আছে। এগুলো (নির্বচনকালীল বা অন্তবর্তীকালীন সরকার) আমাদের দেওয়া নাম, এগুলো কিন্তু কনস্টিউশনাল নাম না।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা এখন সংবিধানে নেই। বর্তমান ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না, তবে তিন মাসের ক্ষণ গণনা শুরু হলে সংসদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অধীনে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেন; যার নাম দেওয়া হয় ‘সর্বদলীয় সরকার’।
ওই মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর নেতাদের নেওয়া হয়। স্বল্প পরিসরের ওই মন্ত্রিসভা সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে।
২০১৮ সালের আদলে এবারও নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার পরিকল্পনার কথা মঙ্গলবার জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও কানাডার মত সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকার থাকে, সেভাবে চলবে।
২০১৪ সালে আমি কিছু মন্ত্রী অন্যান্য দল থেকে নিয়োগ করেছিলাম, এরপর ১৮-তে সেই পদ্ধতি করি নাই, যেটা অন্যান্য দেশে হয়, এইবারও সেভাবে হবে।
অর্থাৎ সে সময় আমরা যারা থাকব, আমরাই নির্বাচনকালীন সরকার হিসাবে আমাদের রুটিন দায়িত্বপালন, দৈনন্দিন কাজকর্ম করব, যাতে সরকার অচল হয়ে না যায়, সেটা আমরা করব, সেভাবে চলবে।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :