রাত পোহালেই ব্যালট-যুদ্ধ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৪, ১২:০৭ এএম
রাত পোহালেই ব্যালট-যুদ্ধ

ঢাকা : দ্বাদশ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি শেষ। এবার ভোটের অপেক্ষায় ভোটাররা। 

ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় শুরু হবে ব্যালটে ভোটগ্রহণ। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষ হবে। তবে কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের লাইন থাকলে ভোট শেষ হতে আরো দেরি হতে পারে। অর্থাৎ যারা ভোট দিতে আসবেন, তাদের ভোট দেওয়া শেষ হলেই ভোট বন্ধ হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে ভোটের প্রচার প্রচারণা। এর পর থেকেই মূলত অপেক্ষা শুরু। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ করতে কোনো কিছুর কমতি রাখছে না আউয়াল কমিশন। এবারের নির্বাচনে ‘ভোটার উপস্থিতি’ নিশ্চিত করাই বর্তমান কমিশনের বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ৭ জানুয়ারি ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নওগাঁ-২ আসনে একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় ওই আসনের ভোট বাতিল করেছে ইসি। যদিও শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে গাইবান্ধা-৫ আসনে ইসি ভোট বন্ধ ঘোষণা করেছে বলে গুঞ্জন ওঠে। পরে নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানান।

দ্বাদশ নির্বাচনে ২৯৯ আসনে এক হাজার ৯৭০ প্রার্থী নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে লড়াই করছেন এক হাজার ৫৩৪ প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন ৪৩৬ জন।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইসি। আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট হবে দাবি করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রার্থীকে ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট রাখার অনুরোধ করছি। যেন ভোটাররা ভোটদানে বাধাগ্রস্ত না হন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। আমরা চাই আমাদের নির্বাচন কেবল দেশীয়ভাবেই না, আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।’

ইসির প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় দেখা গেছে, এবার সারা দেশে ভোটারের সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৭৬ লাখ ও নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ। আর ট্রান্সজেন্ডার ভোটার ৮৪৯ জন। এর মধ্যে ১ কোটি ৫৪ লাখ নতুন ভোটার। যারা প্রথমবার ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন।

এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। হাইকোর্ট থেকে তিনজন প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় দলটির প্রার্থী ২৬৬ জন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির ২৬৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল। তবে তাদের মধ্যে অনেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, এখনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৮০ প্রার্থী। তবে নির্বাচনী মাঠে আছেন শ খানের প্রার্থী।

এদিকে তৃণমূল বিএনপির ১৩৫, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জনসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী সংখ্যা এক হাজার ৫৩৪ জন। 

এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪৩৬ জন। সব মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৯৭০ জন। এর মধ্যে ৯০ জন নারী ও ৭৯ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপিসহ ১৬টি দল এ নির্বাচন বয়কট করেছে। নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ একাধিক দাবিতে নির্বাচন থেকে দূরে রয়েছে দলগুলো। 

বিএনপি ভোটে অংশগ্রহণ না করা নিয়ে সিইসি আজকের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন,  ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এটি আরো গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হতো। তারা ভোটারদের ভোটদান থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। আমরা বলব, ভোটারদের ভোট দিতে আসা উচিত।’

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচনে ১০ হাজার ৫৩০টি ভোটকেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে ইসির একটি সূত্র জানায়, তারা ১০ হাজার ৩০০টি কেন্দ্রকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে দুর্গম কেন্দ্রগুলোতে ব্যালটসহ নির্বাচনী সরঞ্জামাদী পাঠিয় দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। তবে দেশের অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটের দিন সকালে অর্থাৎ আগামীকাল রবিবার সকালে ব্যালট পাঠানো হবে।

আমরা যেভাবে বলি, সেভাবে নির্বাচন সবসময় শান্তিপূর্ণ হয় না মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য মানদণ্ড অনুসারে আমাদের আইন রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা, ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারবে।’

সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ২৫৯টিতে জয়ী হন। তাদের শরিক দলগুলো ২৯টি আসনে জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগসহ শরিক দলগুলো মিলে গঠিত মহাজোট ওই নির্বাচনে মোট ২৮৮টি আসন পায়। ফলে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

এমটিআই

Link copied!