২১ ফেব্রুয়ারি শেষ হতে না হতেই শহীদ মিনারের এ কী হাল!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪, ০৫:৫৭ পিএম
২১ ফেব্রুয়ারি শেষ হতে না হতেই শহীদ মিনারের এ কী হাল!

ঢাকা: ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। সারাবছর অনেকটা অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে বিশেষ নজর আসে ফেব্রুয়ারি মাসে। ২১ তারিখ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে মাসটি এলেই ধোঁয়ামোছার কাজ শুরু হয় শহীদ মিনারে। পরিপাটি করা হয় পুরো স্মৃতির মিনারটি। ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে একুশের প্রথম প্রহর থেকেই শুরু হয় নানা কর্মযজ্ঞ। সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি। শ্রদ্ধা জানানো হয় ভাষা সৈনিকদেরও।

এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১৯৫২ সালে বুকের রক্ত দিয়ে যারা মায়ের ভাষার মাথা চিরসমুন্নত করে গেছেন, এবারও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে পুরো জাতি। বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি ভারত থেকেও অনেকে এসে শ্রদ্ধা জানান।

২১শে ফেব্রুয়ারির দিনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার যতটা সম্মান পেয়েছে, দিবসটি শেষ হতে না হতেই আবারও আগের মতো অযত্ন-অবহেলার শিকার হচ্ছে স্মৃতির মিনারটি।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মূল বেদিতে বেশ জনসমাগম। কেউ বসে আড্ডা দিচ্ছেন। কেউ চা-সিগারেট খেতে ব্যস্ত। কেউ কেউ ছবি তুলছেন। কেউ বাদাম খেয়ে ময়লা সেখানেই ফেলছেন। শিশু-কিশোরদের একাংশ সাইকেল নিয়ে উঠেছে বেদিতে। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাদের এই সমাগম শহীদ মিনার পরিদর্শনে নয়, তাদের কাছে জায়গাটি হয়ে উঠেছে অন্যান্য দশটি বিনোদন কেন্দ্রের মতো। তাই তো জুতা পায়েই অনেকে শহীদ মিনারের মূল বেদিতে চলাচল করছেন।

শহীদ মিনারে ঘুরতে আসা আব্দুল মান্নান নামে একজন মাদরাসাছাত্র বলেন, ‘আমরা তো প্রতিদিন আসি না। আজ এসেছি। সবাই দেখলাম জুতা পরে উঠছে তাই আমরাও উঠলাম।’

পাশের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীকে দেখতে আসা জাহাঙ্গীর হোসেনও এসেছেন ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নির্মিত এই মিনারে। তবে শ্রদ্ধা জানাতে নয়, তিনি এসেছেন সময় কাটাতে। সঙ্গে আলাপকালে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘একটু নিরিবিলি বসার জন্য এসেছি। সবাই তো বসে আছে। তাই আমিও বসে আছি।’

জুতা পায়ে শহীদ মিনারে ওঠার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একা উঠছি নাকি? সবাই তো জুতা পরেই উঠছে। তাদের বলেন।’

শহীদ মিনার এলাকায় চানাচুর বিক্রি করতে আসা একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘২১শে ফেব্রুয়ারি তো আমগো এই দিকে আসতে দেয় নাই। বিকেলের পর আমরা আইছি। সকাল থেকে কেউ শহীদ মিনারে উঠতে পারে নাই। সন্ধ্যার পর সবাই উঠছে। সবাই জোতা (জুতা) নিয়াই ওঠে। ওই একদিনই (২১শে ফেব্রুয়ারি) খালি পায়ে আসে।’

বাংলাদেশে জনস্বার্থে অনেক মামলা করা আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোর্শেদ জানান, ‘কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বিষয়েও আদালতের রায় আছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত আছে। একইসঙ্গে সিটি করপোরেশনকে পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

মনজিল মোর্শেদ বলেন, ‘এটা আসলে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। কর্তৃপক্ষ যারা আছে তাদের এটা দেখা উচিত। শহীদ মিনারে অনুষ্ঠানের সময় দায়িত্ব পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর বাইরেও এটা দেখভালের দায়িত্ব তাদের আছে। তারা এটা করতে পারে ইচ্ছে করলে। পাশাপাশি আদালতের নির্দেশে যে সিকিউরিটি নিয়োগ করা হয়েছে, তারাও দেখতে পারে। তাছাড়া আদালতের নির্দেশে নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মীদের শুধু একুশে ফেব্রুয়ারির জন্য নয়, সারাবছর দায়িত্ব পালন করার কথা।

এমএস 

Link copied!