সোমালিয়ায় জিম্মি ২৩ নাবিক

শঙ্কিত স্বজনদের নিরানন্দ ঈদ

  • চট্টগ্রাম প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৪, ০৯:৪৮ পিএম
শঙ্কিত স্বজনদের নিরানন্দ ঈদ

চট্টগ্রাম : ‘প্রতি বছর ঈদের দিন জাহাজে থাকলেও সকাল থেকে কয়েক দফায় ফোন করত। কিন্তু আজ একবারের জন্যও ফোন করেনি।’ আজ ঈদের দিন সকালে কর্ণফুলী থানাধীন ১২ নম্বর ঘাটের লিচুবাগান এলাকায় নিজ বাড়িতে গেলে আড়াই বছরের ছেলে সাদ বিন নুরকে কোলে নিয়ে নাবিক নুরুদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথা বলেন  আমাদের সঙ্গে।

জান্নাতুল ফেরদৌস  বলেন, যেহেতু আমার স্বামী জাহাজে চাকরি করে তাই সবসময় পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা হয়ে ওঠে না উনার (নাবিক নুরুদ্দিন)। কিন্তু ঈদের দিন সকাল থেকে দফায় ফোন করে। সকলের সাথে কথা বলে। কিন্তু আজ একবারও ফোন করতে পারেনি। গতকাল বুধবার সেখানে ঈদের দিন বিকাল ৫টায় একবার ফোন করেছিল।

ঈদের ছুটিতে ঢাকায় ঘোরার মতো ১০ দর্শনীয় স্থানঈদের ছুটিতে ঢাকায় ঘোরার মতো ১০ দর্শনীয় স্থান
এ সময় কথা হয় নাবিক নুরুদ্দিনের মা ইসলাম খাতুনের সঙ্গে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারে আজ কোনো ঈদ নেই। ছেলে না আসা পর্যন্ত আমাদের মধ্যে কোনো আনন্দ নেই।’

এচিত্র শুধু নুরুদ্দিনের পরিবারেই নয়। নগরীর আসকারদীঘি পশ্চিম দক্ষিণ কোণের শতদল ক্লাবের পাশের বসবাস করা নাবিক আইনুল হকের পরিবার। বাসায় গিয়ে কথা আইনুল হকের ছোটো ভাই মঈনুল হকের সাথে। তিনি বলেন, ‘বাবা মারা যাবার পর বড় ভাই আমাদের সব। ঈদগাহতে একসাথে যেতাম। এবার আমাদের পরিবারে কোনো ঈদ আনন্দ নেই।’

এ সময় আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলেই আমার ঈদ। ছেলেকে ছাড়া আমাদের কোনো ঈদ নেই। তারা না আসা পর্যন্ত আমাদের মধ্যে কোনো স্বস্তি নেই।

জাহাজে খাবার নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে লুৎফে আরা বেগম বলেন, ছেলে বলেছে তারা এক মাসের খাবার দুই মাস পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু পানি সমস্যা প্রকট আকার ধারন করেছে। রেশনিং করে পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। সপ্তাহে দুই দিন গোসল করতে দিচ্ছে।

এদিকে অন্যান্য নাবিকদের পরিবারের সাথে কথা বলেও একই চিত্র পাওয়া যায়। কারো ছেলে, কারো স্বামী জিম্মি রয়েছে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কাছে। নাবিকদের মুক্তির বিষয়ে অগ্রগতি থাকলেও মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত স্বস্তি পাচেছ না তাদের পরিবারগুলো। ঈদের আগে দস্যুদের সাথে মুক্তিপণের বিষয়টি চূড়ান্ত হলেও ডলার পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে সমস্যা থাকায় মুক্তি সম্ভব হয়নি। তবে ঈদের পর দ্রুত মুক্তি পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সোমালিয়ায় গতকাল বুধবার ঈদ উদযাপিত হয়। সেদিন জিম্মি নাবিকদের বিরিয়ানি ও সেমাই খেতে দেওয়া হয়েছিল। এর আগে নাবিকদের রোজা ও ইফতারের সুযোগ দিয়েছিল। নাবিকরা ঈদের নামাজ শেষে আনন্দপূর্ণ পরিবেশে কোলাকুলি ও ভি চিহৃ দেখিয়ে গ্রুপ ছবিও তুলেছে। সেই ছবি স্বজনদের কাছেও পাঠিয়েছে।

গত ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর থেকে এমভি আবদুল্লাহর সেকেন্ড অফিসার মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রথম অস্ত্র ঠেকিয়েছিল সোমালিয়ান জলদস্যুরা। সেদিন দুপুর তিনটা ১২ মিনিটে অস্ত্র ঠেকানোর পর জাহাজের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিটাডেলে আশ্রয় নেওয়া সব নাবিকদের ব্রিজে আসার নির্দেশনা দেন। সেকেন্ড অফিসার ও ডিউটি ইঞ্জিনিয়ার সিটাডেলে আশ্রয় নেয়নি। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাচ্ছিল। জাহাজটি ছিনতাইয়ের পর সোমালিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূলের গ্যরাকাদে নোঙ্গর করে। এখনো একই এলাকায় অবস্থান করছে।

জাহাজ থেকে নাবিকদের উদ্ধারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্রিটিশ রয়েল নেভি এবং ভারতীয় নৌ বাহিনী অভিযান চালানোর অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেও জাহাজ মালিক ও বাংলাদেশ সরকার অভিযানের অনুমোদন দেয়নি। রক্তপাতহীন জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতেই মালিক পক্ষের কাছ থেকে অভিযানের অনুমোদন দেয়া হয়নি। এখনো আন্তর্জাতিক বাহিনী এমভি আবদুল্লাহকে নজরদারিতে রেখেছে।

এর আগে একই মালিক গ্রুপের এমভি জাহান মনিকে ২০১০ সালে জিম্মি করেছিল একই গ্রুপের জলদস্যুরা। সেবারও মুক্তিপণ দিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। সোমালিয়ান জলদস্যুরা ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৮টি জাহাজ জিম্মি করেছিল। এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে জিম্মি করেছিল ৩৫৮টি জাহাজ।

এমটিআই

Link copied!