ঢাকা: রাজধানীর যানজট নিরসনে এবার চালু হলো আন্তঃজেলা বাসের গেটলক সিস্টেম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সিস্টেমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত আন্তঃজেলা বাসগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে পারবে না। ফলে যানজট অনেকটাই নিরসন হবে। ভবিষ্যতে এই সিস্টেম মহাখালী থেকে উত্তরা পর্যন্ত বৃদ্ধি করার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
গুলশান ট্রাফিক বিভাগ বলছে, গেটলক চেকিং সিস্টেমে টার্মিনাল থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে বাস গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়ার পর নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া আর কোথাও দাঁড়াতে পারবে না। টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে কাকলী, কুর্মিটোলা, খিলক্ষেত ও সর্বশেষ আবদুল্লাহপুর থেকে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে চলে যাবে। যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মহাখালী থেকে বাস ছাড়ার আগে যাত্রীদের তালিকা, চালকের নাম, গাড়ির নম্বরসহ একটি প্রস্থানপত্র দেওয়া হচ্ছে। বাস কাকলীতে যাওয়ার পর পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, তালিকা অনুযায়ী যাত্রী আছে কি না। বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করছে ট্রাফিক পুলিশ। পাশাপাশি পরিবহন সংশ্লিষ্টরাও বিষয়টির দেখভাল করছেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ঢাকার যানজট শুধু মহাখালীর জন্য হয় না, একটু লক্ষ্য করে দেখুন মহাখালীতে প্রবেশের মুখে কাঁচাবাজারের সামনে রাস্তা দখল করে কাপড়ের মার্কেট, আইসিডিডিআরবির সামনে ফুটপাতে চায়ের দোকান এগুলোও প্রশাসনের নজরে আসতে হবে। আমরা আমাদের নিজেদের এলাকা যানজটমুক্ত রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
তাই আন্তঃনগর বাসগুলো যাতে বনানী পর্যন্ত যাত্রী না নিতে পারে সেটার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উত্তরাতেও আন্তঃনগর বাসগুলো ব্যাপক পরিমাণ যানজট তৈরি করে। আমরা ভবিষ্যতে উত্তরা ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।
বিভিন্ন আন্তঃনগর বাসের চালকরা জানান, গেটলক সিস্টেম চালু হওয়ায় তাদের সুবিধা হয়েছে। যত্রতত্র যাত্রী উঠালে অন্য যাত্রীদের কথা শুনতে হয়, রাস্তায় যানজটের কবলে পড়তে হয় পাশাপাশি প্রশাসনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। এখন বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রী উঠবে। আমাদের দেখভাল করার জন্য শ্রমিক সংগঠনের লোকজন থাকবে। গেটলক সিস্টেম চালু হওয়ায় সুফল পাবেন কাঙ্খিত গন্তব্যের যাত্রীরা। তারা বলছেন এই সিস্টেম চালু হওয়ায় যাত্রাপথে ভ্রমণে কোনো অসুবিধা থাকবে না।
ট্রাফিক গুলশান দক্ষিণের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) এ এস এম হাফিজুর রহমান জানান, গেটলক চেকিং সিস্টেম চালুর পর আইন অমান্য করে যত্রতত্র যাত্রী তোলায় ২৩টি বাসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মহাখালী টার্মিনাল এলাকায় সাতটি, আইসিডিডিআরবি এলাকায় পাঁচটি, আমতলী এলাকায় ছয়টি, সৈনিক ক্লাব এলাকায় দুটি ও কাকলীতে তিনটি বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ প্রতিনিয়ত গেটলক সিস্টেম তদারকি করবে। কোনো পরিবহন এই নিয়ম অমান্য করে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিকের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আব্দুল মোমেন বলেন, মহাখালী বাস টার্মিনাল একটি সংবেদনশীল জায়গা। এখানে শ্রমিকরা আছেন, যাত্রীরা বাসে চলাচল করেন। সুতরাং সব প্রকার সংবেদনশীলতা মাথায় রেখে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়, যাতে যাত্রীরা কোনো প্রকার সমস্যায় না পড়েন। যে কারণে আমরা কখনো কঠোর হই কিংবা একটু নরমভাবে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আন্তঃনগর গেটলক সিস্টেম নগরবাসী ও যাত্রীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :