ঢাকা: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার তদন্ত চলছে ভারত ও বাংলাদেশে। ওই হত্যাকাণ্ডে দুই দেশের পুলিশের সমন্বয়ে তদন্তের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় মরদেহের অনুসন্ধান করা। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন— এমপি আনারের মরদেহ পাওয়া না গেলে জড়িতদের শাস্তিসহ মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হতে পারে।
এদিকে মরদেহের খোঁজ পেতে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খাল-বিল চষে ফেলছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কিনারা করতে পারেনি। তবে ঢাকায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, তারা জানতে পেরেছে এমপির খণ্ডিত মরদেহের কিছু অংশ কোথায় থাকতে পারে।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাটি জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা আমানউল্লাহ রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেছেন, নিজ হাতেই পলিথিনে ভরা মরদেহের একাংশ ফেলেছেন।
ডিবির পক্ষ থেকে একটি দল কলকাতায় গিয়ে মরদেহের সেই অংশ উদ্ধার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে। এদিকে সংশয় দেখা দিয়েছে— মরদেহের ওই অংশ দ্রুত উদ্ধার না করলে পাওয়া নাও যেতে পারে। কেননা, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ গতকাল শনিবারই বলেছে, মরদেহ ৮০ টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে খালে-বিলে ফেলা হয়েছে এবং সেগুলো হয়তো এত দিনে জলজ প্রাণিরা খেয়ে ফেলেছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এমপির মরদেহ গুম করার জন্য টুকরো টুকরো করা হয়েছিল। সে জন্য শরীরে চামড়া ছাড়িয়ে দা দিয়ে কেটে সেগুলো কয়েকটি ব্যাগে ভাগ করে কয়েক হাত বদলে ফেলে দেওয়া হয়। তবে মরদেহের অংশবিশেষের একটি পলিথিন কোথায় ফেলা হয়েছে, তা জানেন আমানউল্লাহ। তিনি নিজের হাতেই সেটা ফেলেছেন। আর সেটা খুঁজে পাওয়াও সম্ভব বলে মনে করছেন তিনি।
আমানউল্লাহর কাছ থেকে সেই স্থানের অবস্থান জেনে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন ডিবি পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট তিন সদস্যের একটি দল। কর্মকর্তারা বলছেন— মরদেহের ওই অংশ পেলে তদন্তে বড় অগ্রগতি হবে। ডিবিপ্রধান পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদও গতকাল বলেছিলেন, ‘ভারতীয় পুলিশও এই হত্যার তদন্ত করছে। আজ-কালের মধ্যে আমিসহ ডিবির তিনজন কর্মকর্তা তদন্তের কাজে ভারতে যাব।’
গেল শুক্রবার কসাই জিহাদকে তোলা হয় বারাসাত আদালতে। সেখানে তাকে ১২ দিনের রিমান্ডে দেওয়া হয়। এরপর তাকে নিয়ে সশরীরে যাওয়া হয় ভারতের জিরেনগাছি এলাকার খালের পাশে। সেখানে আগে থেকেই ডুবুরি দল আর নৌকা প্রস্তুত ছিল। এ সময় তাকে বারবার জিজ্ঞেস করা হয় কোথায় ফেলা হয়েছিল মরদেহ। তখন জিহাদ ওই কর্মকর্তাদের বারবার বলছে— যে একটা বাঁশঝাড়ের পাশ দিয়ে নিচে নেমেছিল।
এদিকে খালের ওই অংশে বেশ কয়েকটা জায়গায় বাঁশঝাড় রয়েছে। তার মধ্যে থেকে একটি জায়গায় নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করে জিহাদ। শুক্রবার সেখানেই প্রথম ডুবুরি আর নৌকা নামিয়ে তল্লাশি শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েও কিছু উদ্ধার করা যায়নি। পরে শনিবার একই জায়গায় দ্বিতীয় দিনের মতো শুরু করা হয় তল্লাশি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সারাদিন তো বটেই, অনেক রাত পর্যন্ত এই রাস্তায় গাড়ি আর মানুষের চলাচল থাকে। এরকম একটা জনবহুল রাস্তার পাশেই এমপির মরদেহ ফেলার মতো ঝুঁকি আদো নিয়েছিল জিহাদ?
জিরেনগাছির বাসিন্দা সাহাবুদ্দিন তরফদার বলছিলেন, ‘এই রাস্তায় রাত ১১টা-সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মানুষ আর গাড়ি চলে। যদি এখানে কাউকে কিছু ফেলতে হয় তাহলে কারও না কারও চোখে পড়বেই।’
শনিবারের তল্লাশির সময় জিহাদকে ঘটনাস্থলে আনা হয়নি। এছাড়া তদন্তকারী দলের নৌকায় চেপেছিলেন একজন জেলে। তিনি খালে মাছ ধরার জাল ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছিলেন। তবে আগের দিনের মতোই সেই জালে শুধুই উঠে আসছিল আবর্জনা। সিআইডির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, এত সহজে হাল ছাড়তে রাজি নই আমরা। তাই তল্লাশি চলবেই।
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :