রিমান্ড শেষ হওয়ার ৫ দিন আগেই কেন মিন্টু কারাগারে, জানাল ডিবি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৪, ১১:২০ পিএম
রিমান্ড শেষ হওয়ার ৫ দিন আগেই কেন মিন্টু কারাগারে, জানাল ডিবি

ঢাকা : ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুল করিম মিন্টু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। রিমান্ডে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন তিনি। 

তবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতা পাচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আনার হত্যায় গ্রেফতার দুই আসামির আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আর প্রযুক্তিগত তথ্যে হত্যা পরিকল্পনা ও অর্থ দেওয়ার ঘটনায় মিন্টু জড়িত এমন প্রমাণ রয়েছে তাদের হাতে। 

তবে রিমান্ড শেষ হওয়ার পাঁচ দিন আগেই তাকে কারাগারে পাঠানো নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 

এর আগে এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক মেয়র মিন্টুকে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করে ডিএমপির ডিবি। 

১৩ জুন তাকে আট দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষ হওয়ার পাঁচ দিন আগেই তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। 

রিমান্ডে মিন্টুর কাছে প্রশ্ন ছিল, আওয়ামী লীগ নেতা বাবু ও চরমপন্থি নেতা শিমুলের তথ্য অনুযায়ী তিনি এ হত্যার সঙ্গে জড়িত। বিষয়টি কীভাবে অস্বীকার করবেন? এছাড়া তার সঙ্গে শিমুল বা শাহীনের সম্পর্ক কী। 

হত্যার আগে তাদের সঙ্গে কথোপকথনের প্রমাণও উপস্থাপন করা হয় মিন্টুর সামনে। তবে এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে সবকিছুই অস্বীকার করেছেন তিনি। 

ডিবি বলছে, হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড শাহীনের সঙ্গে মিন্টুর কথোপকথনের বিষয়টি গ্রেফতার দুই আসামির জবানবন্দিতে উঠে এসেছে। মোবাইল ফোন ফরেনসিকে পাঠালে সেটি প্রমাণ হবে বলে ধারণা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের। 

কেননা খুনিরা যোগাযোগের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেছে। ফোনের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সব তথ্য ডিলিটও করেছে মিন্টু। ওইসব তথ্য পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশে আমেরিকান দূতাবাসের সহায়তা চাওয়া হতে পারে বলে ডিবি সূত্রে জানা গেছে। 

এদিকে আনার হত্যায় গ্রেফতার অপর চার আসামি দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু মিন্টুর ক্ষেত্রে জবানবন্দি ছাড়াই রিমান্ড শেষ হওয়ার আগে কারাগারে পাঠানো নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 

এমপি আনারের মেয়ে ডরিন প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন, একটি মহল প্রকৃত খুনিদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। মিন্টুকে রিমান্ড শেষের আগে কারাগারে পাঠানো নিয়ে আনারের ঘনিষ্ঠজনদের ধারণা, রাজনৈতিক চাপের মুখে ব্যাহত হচ্ছে তদন্ত কার্যক্রম। 

তারই অংশ হিসাবে মিন্টুকে রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ফলে মিন্টুর সঙ্গে আর যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত তারা আড়ালেই রয়ে যাবেন। 

তবে ডিবির তদন্ত কর্মকর্তাদের বক্তব্য, যে বিষয়গুলো জানতে মিন্টুকে রিমান্ডে আনা হয়েছিল সে বিষয়ে মিন্টু বক্তব্য দিয়েছেন। ফলে তাকে আর রিমান্ডের প্রয়োজন পড়েনি। ওইসব বক্তব্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রয়োজন পড়লে তাকে আবারও রিমান্ডে আনা হবে। 

এছাড়া তাদের দাবি, সিআরপিসির ১৬৭ ধারা এবং পিআরবি রুল-৩২৪-এ বলা আছে, তদন্ত কর্মকর্তার রিমান্ডের উদ্দেশ্য সফল হলে মেয়াদ হাতে থাকা সত্তে¡ও আসামিকে অহেতুক পুলিশ হেফাজতে না রেখে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়াই উত্তম। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবি পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, মিন্টুর হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে স্বীকার আর অস্বীকারের কিছু নেই। সাক্ষ্য-প্রমাণে হত্যা পরিকল্পনায় তার জড়িত থাকার বিষয় উঠে এসেছে। তার স্বীকার করা আর না করায় কিছু যায় আসে না। তাকেসহ গ্রেফতার অন্যদেরও ফের রিমান্ডে আনা হবে। 

এর আগে মিন্টুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে ৬ জুন রাতে গ্রেফতার করে ডিবি। ৯ জুন তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে রাজি হন বাবু। তারপর আদালত বাবুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। বাবুর জবানবন্দিতেই আনার হত্যার নেপথ্যে মিন্টুর নাম আসে।

উল্লেখ্য, এমপি আনার ১২ মে ভারতে যান। পরদিন ১৩ মে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে ডরিন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়। 

দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসাবে এ পর্যন্ত ১২ জনের নাম এসেছে। তাদের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন সাতজন।  

এমটিআই

Link copied!