বেনজীরের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৪, ১২:৪২ পিএম
বেনজীরের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি

ঢাকা : পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তৃতি নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে মাঠ পর্যায়ে বেনজীরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া নথিপত্রের চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষে এমন কথা জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একাধিক সূত্র।

দুদকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সামগ্রিক তথ্য-উপাত্তের বিচার বিশ্লেষণ করে শিগগিরই কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল হতে যাচ্ছে টিম। যেখানে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে মামলার সুপারিশ করা হতে পারে।

এ বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বেনজীর কিংবা তার পরিবারের কেউ হাজির না হয়ে লিখিত বক্তব্যে সম্পদ অর্জনকে বৈধ হিসাবে দাবি করেছে। তাদের পাঠানো লিখিত ব্যাখ্যা আপাতত আমলে নেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় সম্পদ সংক্রান্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের বিচার বিশ্লেষণ করে শিগগিরই কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল হতে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এ পর্যায়ে বেনজীর আহমেদের কাছ থেকে সম্পদের হিসাব বিবরণী চাওয়া হবে কি না, সেই বিষয়ে কমিশনের নির্দেশনার অপেক্ষা করছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। যদি তার কাছ থেকে সম্পদ বিবরণী চাওয়া না হয় তাহলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বেনজীর, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে মামলার সুপারিশ করা হতে পারে।

এ বিষয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন বলেন, বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে ২০ জুন দুদক চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। লিখিত বক্তব্যে তার অভিযোগগুলোর বিষয়ে নিজেদের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমাদের অনুসন্ধান টিম লিখিত বক্তব্য ও নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে কমিশনের প্রতিবেদন দাখিল করবেন। আমরা আশা করছি নির্ধারিত দিনেই আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব হবে।

এর আগে গত ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন। গত ২৩ মে তাদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ৬২৭ বিঘা জমি ক্রোক করা হয়েছে। এরই ধারবাহিকতায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ কার্যকর চলমান রয়েছে।

দুদক গত ২২ এপ্রিল বেনজীর, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান শুরু করে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের জব্দ করা জমি বিক্রি, হস্তান্তর বন্ধে আদালতের আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে। জমি অন্য কারোর নামে যাতে নামজারি না করা হয় সেজন্য আদালতের রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয়।

এছাড়া কোম্পানির মালিকানা হস্তান্তর বন্ধে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে আদালতের ওই আদেশ পাঠানো হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকে জমা থাকা টাকা উত্তোলন বন্ধে অবরুদ্ধের আদেশ সোনালী ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। গত ২৩ মে আদালতের আদেশে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় আদালত।

উল্লেখ্য, গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ এবং ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

দুর্নীতি ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন ও স্ত্রী জীশান মীর্জা ও দুই মেয়েকে ৯ জুন প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। বেনজীর সময় চেয়ে আবেদন করলে দুদক তার আবেদন এরপর দ্বিতীয় দফায় ২৩ ও ২৪ জুন হাজির হতে বলেন। তবে বেনজীর ও তার পরিবার ২৩ ও ২৪ জুন হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযোগের লিখিত বক্তব্য জমা দেন।

বিভিন্ন সূত্রে তথ্যানুসারে, বেনজীর আহমেদ সপরিবারে বিদেশে রয়েছেন, এখনও দেশে ফেরেননি। যদিও দুদক থেকে তাদের বিদেশ যাত্রায় কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি।

এমটিআই

Link copied!