কোটা সংস্কার আন্দোলন

আনসার সদস্য জুয়েল শেখকে গুলি করল কে?

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
আনসার সদস্য জুয়েল শেখকে গুলি করল কে?

ঢাকা : সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতা ঠেকাতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সদস্যরা হতাহত হয়েছেন তাদের সবাই আঘাত পেয়েছেন লাঠিসোঁটা অথবা ইট-পাটকেলের আঘাতে। কেবল পল্টন এলাকায় নিহত আনসার সদস্য জুয়েল শেখের শরীরে গুলি পাওয়া গেছে।

তবে তিনি কার গুলিতে মারা গেলেন তা স্পষ্ট করা হয়নি।

গত ১৮ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সংঘাতে পুলিশের তিনজন সদস্য ও এক আনসার সদস্য নিহত এবং ১ হাজার ১১৭ জন আহত হন।

পুলিশের তিন সদস্যকেই পিটিয়ে, মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়েছে। একজনকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রেখে উল্লাস করার খবর এসেছে। পুলিশের আর যে সদস্যরা আহত হয়েছেন তারাও মারধর বা ইট-পাটকেলের আঘাত পেয়েছেন।

সংঘাত নিয়ন্ত্রণে সরকারেরই আরেক সংস্থা আনসার বাহিনীর ৯৮ জন সদস্য আহত হন, মারা যান একজন। আনসারের নিহত সদস্যের নাম জুয়েল শেখ, তার শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়।

জুয়েল শেখ মতিঝিল থানার অঙ্গীভূত আনসার হিসেবে অন্য পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ডিউটি করতেন। তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালী।

গত ১৯ জুলাই জুয়েল বায়তুল মোকাররম ও পল্টন এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। জুমার নামাজের পর সংঘাত শুরুর কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যার দিতে তার ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ দেহ ঢাকা মেডিকেলে আনা হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তথ্য মিলেছে সেদিন জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিক্ষোভ হয়। সেই বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বাধা দিলে পল্টন এলাকার অলিগলিতে ঢুকে পড়ে বিক্ষোভকারীর।

গলি থেকে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল মারতে থাকেন তারা, তাদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রচুর ছররা গুলি ছোঁড়ে পুলিশ।

এই সংঘাত চলার সময় সদস্য জুয়েলের গুলিবিদ্ধ হন।

আনসারের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) রুবেল হোসাইন জানান, সংঘাতে বাহিনীটির এক সদস্য নিহত ও ৯৮ জন আহত হয়েছেন।

কী করে জুয়েল শেখের মৃত্যু হলো তা জানতে চাইলে রুবেল বলেন, বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়, কোনোভাবে হয়ত তিনি মারা গেছেন।

জুয়েল একাই ঢাকায় থাকতেন। তার স্ত্রী শ্রাবণী তাদের চার বছরের ছেলেকে নিয়ে ফরিদপুরের মধুখালীতে গ্রামে থাকেন।

মোবাইল ফোনে শ্রাবণী বলেন, ওর বুকে গুলি লাগছিল। কিন্তু কে গুলি করল, কার গুলি বুকে লাগছে সে বিষয়ে আমাকে কিছু বলেনি।

মতিঝিল বিভাগের পুলিশের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতিঝিল থানার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। তাতে দুর্ঘটনাবশত ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে তাদের মনে হয়েছে।

জানতে চাইলে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, ওই আনসার সদস্য কার গুলিতে মারা গেছেন সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই সংঘাতে ছাত্রদল নেতা, ছাত্রলীগ কর্মী, হকারসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা আসে।

সেদিন সকালে রাজধানীর বাড্ডা ও উত্তরা এলাকায় শিক্ষার্থীদের মিছিল বের হয়। সেখানে সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির খবর আসে।

এরপর বিকালের দিকে বনানী, মহাখালী ছাড়াও গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলাতেও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে হামলা ও লুটপাট চলে।

এই সংঘাত পরের দিনও চলতে থাকে। সেদিন মধ্যরাতে জারি হয় কারফিউ। তবে এর পরেও সংঘাত চলতে থাকে যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মোহাম্মদপুর এলাকায়। ২১ জুলাই নিয়ন্ত্রণে আসে তা।

এই কয় দিনে সরকারের হিসাবে ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে।

এমটিআই

Link copied!