ঢাকা: জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে পুলিশ বলছে সরকারের আদেশে অনেক অনৈতিক কাজ করেছি। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুরে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞাপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ অধস্থন কর্মচারী সংগঠন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, ‘বাংলাদেশ পুলিশ সরকারের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। সরকার যা করতে বলবে, পুলিশ তাই করতে বাধ্য। এখানে পুলিশ সদস্যদের নিজস্ব ভূমিকা রাখার সুযোগ কম। ফলে পুলিশ সদস্যরা সরকারের আদেশে অনেক অনৈতিক কাজ করেছে। জনসাধারণের সঙ্গে পুলিশ অন্যায় করেছে, এটা ঠিক। তবে সেটা নির্দিষ্ট কিছু পুলিশ সদস্য, সবাই না।’
পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘যে সরকার আসবে, পুলিশ সে সরকারের আদেশ মতোই কাজ করবে। এটাই পুলিশ নীতিমালা। বিগত সময়ে পুলিশ যা করেছে, তা পুলিশের নিজস্ব কাজ নয়। এটা সরকার করতে বাধ্য করেছে। আগামী যে সরকার আসবে, পুলিশ জনসাধারণের জানমাল রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সরকারের আদেশ মোতাবেক কাজ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, আমাদের ভুল বুঝবেন না। পুলিশ জনগণের বন্ধু। পুলিশ জনগণের সঙ্গে মিলে একসঙ্গে কাজ করতে চায়।’
একই সঙ্গে জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করে ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর থেকে সারা দেশে পুলিশ সদস্যদের উপর অতর্কিত হামলা, পুলিশ সদস্য খুনসহ স্থাপনা ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
দেশে প্রায় ৪৫০টি থানা আক্রমণ করে অগণিত পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে; যা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের শামিল। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ পুলিশের অধস্থন কর্মচারী সংগঠন মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) থেকে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করছে।
পুলিশের এ সংগঠন থেকে ৯ দফা দাবিগুলো হল...
১) সকল পুলিশ হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
২) নিহত পরিবারের ক্ষতিপূরণসহ সেই পরিবারের ন্যূনতম একজন সদস্যকে সমপদে নিয়োগ নিশ্চিত করা।
৩) আহত সকল পুলিশ সদস্যদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান নিশ্চিত করা।
৪) ০৮ ঘন্টার বেশিডিউটি পালনে বাধ্য না করা। ৮ ঘন্টার বেশি ডিউটি পালনে অভার ডিউটির সুবিধা দেওয়া।
৫) শুক্রবার, শনিবারসহ সকল সরকারি ছুটি ভোগের সুযোগ প্রদান। দেশের স্বার্থে/জনগণের স্বার্থে ছুটি ছাড়তে না পারলে অতিরিক্ত কর্মদিবস হিসাবে আর্থিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা।
৬) উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আদেশ দানে সংবিধান ও জনগণের মনের কাঙ্ক্ষিত বিষয় প্রাধান্য দেওয়া। পুলিশকে রাজনীতিমুক্ত রেখে নিরপেক্ষতার সাথে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করা।
৭) পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে শুরু করে সকল মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিস, পুলিশ লাইন্স, পুলিশ হাসপাতাল, থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, ক্যাম্পের নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করে নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করা।
৮) যথাসময়ে সকল পদে পদোন্নতির যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে বৈষম্য দূর করা ও বদলীর আদেশ দানে নিজ জেলার নিকটবর্তী জেলার প্রাধান্য নিশ্চিত করা।
৯) বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা রক্ষায় পুলিশ সংস্কার আইন প্রণয়ন করা। যেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দ্রুততম সময়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করতে পারে।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :