ঢাকা : বিগত সরকারগুলোর আমলে বাংলাদেশে পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনীর মত ব্যবহার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।
সরকার পতনের আন্দোলনের আগে ও পরে সহিংসতায় আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে রোববার (১১ আগস্ট) ঢাকার কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে তিনি বলেছেন, পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে তা ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক’। আবার পুলিশও কিছুই করেনি, বিষয়টি এমন নয়।
একজনকে গুলি করে মারা, আরেকজনকে মাথার চামড়া তুলে ফেলা বা হাত-পা টুকরো করে ফেলা, মাথা থেঁতলে দেওয়া, এটা তো আপনি কারও সঙ্গে করতে পারেন না। এমনকি যুদ্ধের সময় একজন মৃত সৈনিককে এভাবে থেঁতলে দিই না। এটা দুঃখজনক। এটাও দুঃখজনক যে হাজার তরুণ মারা গেছে পুলিশের গুলিতে।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের হাতে আধুনিক মারণাস্ত্র দেখে তিনি আশ্চর্য হয়েছেন।
পুলিশকে ব্যবহার করেছেন লাঠিয়াল বাহিনীর মত। এই পুলিশকে তৈরি করেছে, তাদের হাতে মারণাস্ত্র দেওয়া হয়েছে। তাদের হাতে আমি সেসব অস্ত্র দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছি। এটা মনে হয় ১৫-২০ বছর আগে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র আছে তা শত্রুকে মারার জন্য। এটা পুলিশকে দেওয়া ঠিক হয়নি।
জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন এক মাসের মাথায় সহিংস রূপ পায়। তারপর তা পরিণত হয় সরকারপতনের আন্দোলনে। ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে চলে গেছে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
এই আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের অনেকে শিক্ষার্থী। আবার সরকার পতনের আগে সংঘর্ষে এবং সরকার পতনের পরে থানায় থানায় হামলায় বহু পুলিশ সদস্যও হতাহত হন।
এর পর পুলিশি ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ে। নিরাপত্তাসহ ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন নন ক্যাডার পুলিশ সদস্যরা। পুলিশহীন রাজধানীতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে নামানো হয় আনসার। রাতের ঢাকা পরিণত হয় ডাকাত আতঙ্কে এক ভয়ের নগরীতে।
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশ না থাকায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘নানা অপকর্মের খবর’ পাওয়া যাচ্ছে।
পুলিশ ছাড়া আমাদের সমাজ চলতে পারে না। আপনারা দেখছেন, আমরা প্রতিদিন খবর পাচ্ছি, বলে স্যার আমার বাড়ি লুট হচ্ছে। তারপরও কি করব, কিছু করার নাই, আমি শুনে যেতে পারি। সেনাবাহিনীকে বলেছি তারা বের হয়ে আছে, বিজিবি আছে.. এটা তাদের কাজ না। পুলিশের কাজ সেনাবাহিনী করতে পারে না, তবু্ও তারা করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যা হয়ে এসেছে, একটা রাষ্ট্রের রাজনীতিতে তা হয় না। একজনের ইচ্ছেমতো রাষ্ট্র চালানো যায় না।
সেটা যাই হোক। যার অবদানই থাক এটা… বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল ঠিকই, কিন্তু হাজার হাজার লোক যুদ্ধ করে, ত্রিশ লাখ লোক মারা যাওয়ার পর এই রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে। এই রাষ্ট্র পার্সোনাল প্রপার্টি না। আমি খুব পরিষ্কার ভাষায় বলছি কারও পার্সোনাল প্রপার্টি না। কারও ফ্যামিলি প্রপার্টি না।
বিগত সরকারের সমালোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা বলেন, রাজনীতিকে এত নষ্ট করা হয়েছে যে আর কেউ এটা করতে পারে না। বাপ ছেলে, ছেলের বউ, নাতিপুতি চলতেই আছে। পাওয়ারকে কুক্ষিগত করা হয়েছে। হাজার হাজার লোক মারার পরও পাওয়ারে থাকতে চায়। এটা খুবই দুঃখজনক।
শেষ হাসিনার পতনের পর চার দিন দেশ সরকারবিহীন থাকার পর বৃহস্পতিবার নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
নিহত হয়েছে ৪২ জন পুলিশ : গত এক মাসের সংঘাতে কত পুলিশ নিহত হয়েছেন জানতে চাইলে উপদেষ্টার সঙ্গে থাকা আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, “হ্যাঁ, নিহতদের তালিকা আমাদের আছে। এ পর্যন্ত ৪২ জন পুলিশ সদস্য, বিভিন্ন র্যাংকের। এর মধ্যে ইন্সপেক্টর তিনজন রয়েছে, বিভিন্ন র্যাংকের আছে। দু’জন র্যাব সদস্যসহ টোটাল ৪২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছে অসংখ্য।”
তিনি জানান, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ৫০৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর আহতরা এখনও হাসপাতাল ছাড়তে পারেননি। এরকম আছেন ২৭ জন, তাদের একজন আইসিইউতে।
আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার পাশাপাশি ট্রমার শিকার পরিবারগুলোর আশ্রয় ও দেখভালর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান আইজিপি।
কাজে যোগ না দিলে পলাতক ঘোষণা : যে পুলিশ সদস্যরা এখনো কর্মস্থলে যোগ দেননি, তাদের একটি সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আমি সচিবালয়ের যাচ্ছি। আমরা আলোচনা করে একটা তারিখ দিয়ে দেব। এ তারিখের মধ্যে না এলে (যোগদান না করলে) তারা পলাতক । আমার কাছে অনেক মেকানিজম রয়েছে এ ঘাটতি পূরণ করার। আমরা একটা ডেট দেব, সে ডেটের মধ্যে জয়েন না করলে তারা পলাতক।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :