প্রধান উপদেষ্টার মূখ্যসচিব নিয়োগের তোড়জোড় 

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৪, ০৯:৪০ পিএম
প্রধান উপদেষ্টার মূখ্যসচিব নিয়োগের তোড়জোড় 

ঢাকা: মহান পিতার যোগ্য মেয়ে ধন্য তোমার দেশ, বিশ্বজুড়ে ভাসতে তোমার কর্মগুনের রেশ। ধন্য মেয়ে শেখ হাসিনা জাতির অহংকার, সবাই তোমার জন্ম দিনে কী দিই উপহার? জন্মদিনে তোমায় দিলাম শিশির সাদা কাশ.. আরো দিলাম ষোড়শ কোটির নি:শ্বাস ও বিশ্বাস। সদ্য বিদায়ী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিনে এই কবিতাটি লিখে ফেসবুকে পোষ্ট করেছিলেন স্থানীয় সরকার সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান। 

শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এই কর্মকর্তা ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষনের ওপর গবেষণা করে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদকও (২০২২) পেয়েছেন। বিসিএস ১১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা এবার শুরু করেছেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব হওয়ার তোড়জোর। চট্টগ্রামের পটিয়ার এই কর্মকর্তা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এলাকার সূত্র ধরে ইতোমধ্যে তার দপ্তরে পৌঁছে গেছে। 

তিনি ছাড়াও বর্তমান সরকারের আরেকজন সচিব এই তালিকায় রয়েছেন বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যত্থানের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টার পদে এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এই পদে নিয়োগ পেতে দুইজন কর্মকর্তা তোড়জোড় করছেন। এরা হলেন স্থানীয় সরকার সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান এবং  বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল এর চেয়ারম্যান মোকাব্বির হোসেন।

আবু হেনা মোরশেদ জামানের পারসোনাল ডাটা শিট (পিডিএস) পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৯৯৩ সালে সহকারী কমিশনার হিসেবে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে যোগদান করেছিলেন এই কর্মকর্তা। ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রি আব্দুস সামাদ আজাদের সহকারী একান্ত সচিব (পিএস) হিসেবে কাজ করেন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে তাকে সড়ক ও রেলওয়ে বিভাগে বদলী করা হয়। 

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ দায়িত্ব নিলে তার সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ পান এই কর্মকর্তা। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে তাকে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পদায়ন করা হয়। এরপর একের পর এক পান গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পোষ্টিং। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন শেষে তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পরিচালক প্রশাসন পদায়ন করে আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত দীর্ঘ চার বছর ফরিদপুর ও নরসিংদীর জেলা প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন। 

এরপর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করার পর ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর সচিব পদোন্নতি দিয়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানে ১ বছর দুই মাস কাজ করার পর তাকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে বদলী করা হয়। এর দেড় বছর পর তাকে পদায়ন করা হয় স্থানীয় সরকার বিভাগে।


 
প্রধানমন্ত্রীর এই আস্থাভাজন দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তা সচিব পদে তিন বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ মজিবুর রহমানকে নিয়ে লিখেছেন কবিতা। ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষণের ওপর গবেষণা করে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদকও ২০২২ বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মাঠ প্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকালে এই কর্মকর্তা ব্যাপকভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বহু অভিযোগ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এসকল দুর্নীতি তদন্তের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠায়। তদন্তও হয় তার বিরুদ্ধে আসা কয়েকটি অভিযোগের। কিন্তু শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিরুপ প্রতিবেদন কোনো তদন্ত কর্মকর্তাই দিতে সাহস পাননি।

মাঠ প্রশাসন ছাড়াও মতিঝিল আইডিয়েল স্কুল ও কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রী ভর্তি নিয়ে ৩০৪ কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে পরিচালকের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় করোনা কিট কেনা নিয়ে দুর্নীতি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব থাকা অবস্থায় দুর্নীতি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকা অবস্থায় টেলিটক ফোর জি কাজের দরপত্র নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব পদে নিয়োগের জন্য গুঞ্জন রয়েছে বিসিএস ১০ ব্যাচের কর্মকর্তা মোকাব্বির হোসেন এর। ১৯৯১ সালে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে ২০০১ সালে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে ২০০৯ সালে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। 

এরপর পেছনে তাকাতে হয়নি এই কর্মকর্তার। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করে ২০১৫ সালে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পান। এরপর জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, অর্থ বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে কাজ করে ২০১৮ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। 

২০২১ সালে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে তাকে ভূমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর দুই মাস পরে তাকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে বদলী করা হয়। তবে সেখানে বেশিদিন থাকতে পারেননি তিনি। ৩ মাস পরেই তাকে বদলী করা হয় বাংলাদেশ জ্বালানী ও বিদ্যুৎ রিসার্চ কাউন্সিলে। এর ৪ মাস পরে বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলে তাকে বদলী করা হয়

এআর

Link copied!