অজানা দুশ্চিন্তায় ফিকে বন্দিদশা কাটার স্বস্তি

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৪, ০১:২০ পিএম
অজানা দুশ্চিন্তায় ফিকে বন্দিদশা কাটার স্বস্তি

ঢাকা : ঘরে যখন হুট করে পানি ঢুকতে শুরু করে জীবন বাঁচাতে সব ফেলে চলে গেছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। এখন পানি নামতে শুরু করলেও ঘরে ফেরার অবস্থা নেই ফেনীর বিভিন্ন এলাকার মানুষের; উপজেলা সদর, ইউনিয়ন ও গ্রাম সবখানের চিত্র একই।

এক সপ্তাহ ধরে বাড়ি ঘরের বাইরে থাকা মানুষ অস্থির হয়ে পড়েছিলেন নিজেদের ঘরবাড়ির খোঁজ নিতে। হড়কা বানে সাত দিন আগে ঘর ছাড়া লাখো মানুষের সামনে সেই সুযোগ আসে সোমবার।

আগের দিন পানি নামতে শুরু করায় সোমবার (২৬ আগস্ট) তারা ঘরের অবস্থা দেখতে পথে নামেন। বিধ্বস্ত সড়ক মাড়িয়ে কিছুটা হেঁটে, কিছুটা হাঁটু পানি পেরিয়ে নিজের ঘরের কাছে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে হৃদয়ে। কয়েক দিন পানিতে ডুবে থাকার পর ভেসে ওঠা তিলে তিলে গড়ে তোলা তাদের আবাসগুলো যেন বিধ্বস্ত এক আস্তানায় পরিণত হয়েছে; যা এখন থাকার উপযোগী নেই।

স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়ে মানুষজন হারিয়েছেন সব। আগের মঙ্গলবার (২০ অগাস্ট) নেমে আসা উজানের ঢল আর ভারি বৃষ্টিতে বেশির ভাগ কাঁচা বাড়িই বিধ্বস্ত প্রায়। নিজের ঘরের করুণ অবস্থা দেখে আপাতত নিরুপায় মানুষজন ছুটছেন বিভিন্নপ্রান্তে স্বজনদের বাড়ি।

সোমবার (২৬ আগস্ট) বন্যা কবলিত ফেনী শহর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে বন্যার ভয়াবহতার মাত্রা দেখা গেছে। পানি কমে ডাঙা ভেসে উঠতে শুরু করার পর থেকে বিপর্যয় আর ক্ষতও ফুটে উঠতে শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার (২০ অগাস্ট) দুপুর থেকে ফেনীতে বন্যা শুরু হয়। পরদিন দুপুর থেকে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।

সোমবার অনেকখানি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সড়ক যোগাযোগ এখনও চলাচলের উপযোগী হয়নি। আশপাশের এলাকা ও সবগুলো উপজেলার সঙ্গে জেলার সড়ক যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন।

বিদ্যুত পরিস্থিতিরও ততটা উন্নতি নেই। যে কারণে বিদ্যুৎহীন অবস্থার মধ্যে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কে সবাই এখনও ফিরে আসতে পারেননি। এতে সবাই সব স্বজনের খোঁজ এখনও নিয়ে উঠতে পারেননি।

ফেনী মূল শহরের পানি নেমে গেলেও এখনও পানি রয়েছে আশপাশের এলাকাগুলোতে। শহরের সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলায় যাওয়ার পথেও কোথাও কোথাও বেশি পানি থাকায় এখনও সদরের সঙ্গে যান চলাচল শুরু হয়নি। শুধু ত্রাণবাহী ট্রাকই যাওয়া-আসা করছে বিভিন্ন উপজেলায়।

এমন পরিস্থিতিতে পানিতে ভিজে পায়ে হেঁটেই বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটছে জনসাধারণ। কেউ কেউ ত্রাণ বহনকারী বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের রাজি করাতে পারলে উঠে পড়ছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তরা আশ্রয় কিংবা খাবার খুঁজছেন ঠিকই। কিন্তু বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে সামনের দিনগুলোতে কী হবে জানেন না কেউই।

ছাগলনাইয়ার শিলুয়া গ্রাম থেকে ফেনী শহরের দিকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যাওয়ার পথে ওমর ফারুক বলছিলেন, পানি কমার পর ঘরে গিয়ে দেখি ঘর ভাঙা। মাটির ঘর ছিল, একেবারে মিশে গেছে। এখন দেখি শহরের সার্কিট হাউজের কাছে ফুপাত বোনের বাসার দিকে যাই। জানি না তারাও আছে কিনা, এখন গিয়ে দেখি।

গত কয়দিন স্ত্রী-সন্তানসহ স্থানীয় একটি মসজিদের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, মসজিদে খেয়ে না খেয়ে আর কয়দিন? বাচ্চা-কাচ্চারাও কয়দিন খাইতে পারতেছে না।

গিয়ে বোনের বাড়ি ক-দিন থাকলেও সামনের দিনগুলোতে কী হবে জানেন না এই দুই শিশু সন্তানের জনক।

পেশায় অটোরিকশাচালক ওমর ফারুক বলেন, সামনে কী হবে জানি না, আপাতত বাঁচি।

তার মত আপাতত স্বস্তি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মুক্তি মেলা ষাটোর্ধ নূর ইসলামেরও। বাংলাবাজার এলাকার এই বাসিন্দা স্ত্রীসহ আশ্রয় নিয়েছিলেন স্থানীয় একটি স্কুলে। এখন ফিরতে পারার সুযোগ পেয়ে চলে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম ছেলের বাসায়।

তিনি বলেন, কোনমতে বাঁচি আছিলাম, বাড়িঘরে থাকার মতো অবস্থা নাই। এখন চিটাগংয়ে ছেলের বাসায় যাইতেছি। এম্নে আশ্রয়কেন্দ্রে আর কয়দিন?

আবার কেউ কেউ শহর থেকে উল্টো বিভিন্ন উপজেলায় যাচ্ছিলেন স্বজনদের খোঁজে। তারা শুধু বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির খবর জানেন, কিন্তু জানেন না স্বজনদের খোঁজ। কোনো উপায় না পেয়ে পায়ে হেঁটে কিংবা ত্রাণের ট্রাকে করে যাচ্ছিলেন তারা।

পরিস্থিতি উন্নতির দিকে : বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রও গত সাত দিনের চলমান বন্যায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ফেনীসহ বেশিরভাগ স্থানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির তথ্য দিয়েছে।

সোমবার (২৬ আগস্ট) সকালে কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের ভেতরে তেমন বৃষ্টি হয়নি। সেই সঙ্গে উজানের নদ-নদীর পানি সমতল হ্রাস অব্যাহত আছে। ফলে ফেনী ও কুমিল্লার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত আছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনীর নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে, তবে কোনো কোনো স্থানে পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বিভিন্ন নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে।

আবহাওয়া সংস্থার বরাতে পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

তবে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। তাতে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে সাঙ্গু, মাতামুহুরী, কর্ণফুলী নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।

বানে প্রাণ গেছে ২৩ জনের, ক্ষতিগ্রস্ত ৫৭ লাখ : দেশে এক সপ্তাহ ধরে যে ভয়াবহ বন্যা চলছে, তাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ জন। আর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪ জনে।

সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান।

উজানের তীব্র ঢল এবং অতি ভারি বৃষ্টির কারণে গত মঙ্গলবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে তা বিস্তৃত হয় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে।

দুই নদীর পানি বিপৎসীমার উপর : পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাওয়ার মধ্যে সিলেটে কুশিয়ারা এবং কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে বইছে। তবে দেশের বেশির ভাগ নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে।

উজানের তথ্যের ভিত্তিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ফেনীর পরশুরাম পয়েন্টে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছে।

এদিকে ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত নথিবদ্ধ করা হয়েছে যশোরে, ২২২ মিলিমিটার। এছাড়া বরগুনায় ১২০, বরিশালে ১০৪ এবং টেকনাফে ১০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত নথিবদ্ধ করা হয়েছে।

মোবাইল নেটওয়ার্কও পুরোদমে সচল হয়নি : বন্যার কারণে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনীসহ দেশে উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলার ১ হাজার ১৯৩টি মোবাইল টাওয়ার ‘অচল হয়েছে’ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৪৩টি অচল হয়ে পড়েছে ফেনীতে।

বন্যার পানিতে মোবাইল অপারেটর কোম্পানির টাওয়ারগুলোর গ্রিনফিল্ড ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ডুবে যাওয়ায় এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

বিটিআরসি’র অস্থায়ী পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সোমবার এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, এতে টেলিযোগাযোগে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

বিটিআরসি বলছে, এসব জেলার মোট টাওয়ার রয়েছে ১৪ হাজার ৫৫১টি, যেগুলোর মধ্যে এখন সচল রয়েছে ১৩ হাজার ৩৫৮টি।

ত্রাণে এখন দরকার রান্না করা খাবার : বানের পানিতে ভাসতে থাকা ফেনীর কিছু উপজেলায় পানি নামতে শুরু করলেও ঘরে ফিরতে পারেনি অনেকেই। কবে ফিরবে পারবেন তারও ঠিক নেই। গত টানা ৪-৫ দিন কম-বেশি ত্রাণের শুকনো খাবার খেয়ে অতিষ্ঠ সবাই এখন একটু রান্না খাবারের আশা করছেন।

বেসরকারী দাতব্য সংস্থা আল খায়ের ফাউন্ডেশন তাদের ধারাবাহিক ত্রাণ তৎপরতায় সোমবার খিচুরি রান্না করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বিতরণ করে।

ফাউন্ডেশনের রাশেদ বলেন, কম-বেশি ত্রাণের শুকনা খাবার অনেকেই পেয়েছেন। কিন্তু মানুষ আর কত শুকনা খাবার খাবে। এজন্য আমরা আজ থেকে রান্না করা খাবার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি, সে অনুযায়ী কাজ করছি আমরা।

আবার অনেকের অভিযোগ, দূরাঞ্চলে ত্রাণ ও পানি পৌঁছাচ্ছে খুবই কম। বেশিরভাগ ত্রাণ বিতরণকারীরা শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ত্রাণ দিয়ে চলে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল বলেন, অনেকেই বাইরে থেকে এসে রোড-ঘাট চিনে না। কাছাকাছি এলাকায় ত্রাণ দিয়ে চলে যাচ্ছে। এতে কেউ দেখা গেছে ১০ বার পাচ্ছে, আবার কেউ পাচ্ছেও না।

এদিকে ত্রাণ কার্যক্রমে বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জ পুরো পথ সড়কে পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে না। আবার নৌকায়ও যাওয়া যাচ্ছে না। সড়কেরও কিছু জায়গায় শুকনা, আবার কিছু জায়গায় কোমর পানি। সড়কের অংশটুকু যাওয়ার জন্য ট্রাক লাগছে আবার আশপাশে যেতে নৌকা লাগছে।

ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা সীমিত ব্যাংক লেনদেন : বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাগুলোর ত্রাণ কার্যক্রমে বর্তমানে বড় বাধা ব্যাংকের লেনদেন নির্ধারিত করে দেওয়া। ৩-৪ লাখ টাকার বেশি তুলতে পারছেন না ব্যাংক থেকে। স্থানীয় ব্যাংকে মোটেই লেনদেন হচ্ছে না। এ অবস্থায় সামর্থ থাকার পরও ব্যাপকভাবে ত্রাণ বিতরণ করতে পারছেন না তারা।

রাশেদ বলেন, আমরা কাজ করার জন্য রেডি আছি, কিন্তু আমাদের প্রধান সমস্যা ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে না পারা। একসঙ্গে আরও ব্যপকভাবে আমরা ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে পারতাম যদি এ সমস্যাটা না থাকতো।

ব্যক্তি পর্যায়ে যারা ত্রাণ দিচ্ছেন, তাদের হয়তো কোনো সমস্যা নেই। তারা নিজেরা টাকা তুলে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু আমাদের লেনদেন তো সব ব্যাংকে, এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অন্তত এই সিচ্যুয়েশনে কাজ করার জন্য আমাদের লেনদেনের লিমিটটা তুলে দেওয়া উচিৎ।

রিক্সায় ইচ্ছেমত ভাড়া, পণ্যের দাম ‘যেমন খুশি’ : ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে কাজীরবাগ যেতে এক রিকশাচালককে যাবে কিনা জিজ্ঞাসা করছিলেন একজন। সড়কে পানি থাকায় এক কিলোমিটারের চেয়ে কিছু্টা বেশি দূরত্বের এই পথে চালক ভাড়া হাঁকেন ১৬০০ টাকা। এ নিয়ে বাগবিতন্ডার একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি যাননি।

রিকশাচালক সিদ্দিক মিয়া বলেন, পানি দি হাঁটি যাইতেই কষ্ট, আর আমি রিকশা টানি টানি লই যামু। এখানে হাঁটু পানি, সামনে আরও বেশি পানি।

স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে পলিটেকনিকের সামনে থেকে এক রিক্সায় চেপে বসেন ওমর ফারুক। সার্কিট হাউজের সামনে যেতে ভাড়া ঠিক করেছেন ২০০ টাকা।

তিনি বলেন, দেখছেন ভাই, সবখানে ডাকাতি। ৫০ টাকার ভাড়া এখন ২০০ টাকা। কী করার আছে আর?

ছাগলনাইয়ার শিলুয়া গ্রামের এই বাসিন্দা গত ৫ দিন পানিবন্দি থাকা অবস্থায় ঘর থেকে সঙ্গে নেওয়া কিছু শুকনা খাবার খেয়ে দিন কাটিয়েছেন স্ত্রী-সন্তানসহ। শুকনা খাবার চাহিদা অনুযায়ী কেনার উপায়ও না থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাচ্চাগুলা চিড়া-মুড়ি খায় না। তাদের জন্য বিস্কিট কিনব, ২০ টাকার বিস্কিট ১০০ টাকা। ৫ টাকার কেক ১০ টাকা, ১০ টাকার চিপস ৩০ টাকা।

ক্ষোভ ঝেড়ে তিনি বলেন, মানুষ বিপদে পড়লে কিছু মানুষ সুযোগ পেয়ে বসে।

ফেনী সদরের বাসিন্দা ডালিম হাজারী বলেন, গতকাল একটা ডিমভাজি ১০০ টাকায় বিক্রি হইছে। পানি-বিস্কিট সবকিছুর দাম ডাবলের বেশি। তারপরেও দোকানদারদের পোষায় না। যত পানিই হোক, একটা জিনিস আনতে কি এত খরচ হয়?

বন্যার সময় শহরে কারেন্ট নাই, কোন মোমবাতিও পাওয়া যাইতেছিল না। আর মানুষ বিপদে পড়লে এসব কিছু সুযোগসন্ধানী সবসময়ই এমন করে।

স্বাভাবিক হচ্ছে শহরের জীবন : বানের পানি নামার পর ক্রমেই স্বাভাবিক হচ্ছে ফেনী শহরের জীবনযাত্রা। কিছু এলাকায় সোমবার পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ এসেছে। খুলতে শুরু করেছে দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

হঠাৎ বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় শহরের কোন দোকানিই তাদের মালামাল সরাতে পারেননি। ভবনের নিচতলায় থাকা প্রায় সব দোকানির বেশির ভাগ পণ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই দোকানগুলো খুলে ক্ষতিগ্রস্ত মালামাল ফেলে ধোয়ামোছার কাজ করছেন তারা।

মিলন ফার্মেসির সামনে দাড়িয়ে কতা হচ্ছিল দুর্লভ মজুমদারের সঙ্গে। ফার্মেসিটি তার এক আত্মীয়র জানিয়ে তিনি বলেন, সবমিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকার ওষুধ একেবারে শেষ হয়ে গেছে। ওষুধ রাখার ফ্রিজসহ কিছুই ভালো নেই দোকানের।

কলার ভেলায় লাশ, অচেনারা করছেন দাফন : ফেনীতে প্রবল বন্যার মধ্যে কয়েক জায়গায় লাশ ভেসে আসতে দেখেছেন স্থানীয় জনতা। এর মধ্যে দুটি লাশ কলার ভেলায় করে ভেসে আসতে দেখেন তারা। সেই দুটি লাশের সঙ্গে ছিল চিরকুট। যাতে লেখা, বন্যার মধ্যে মাটি না পেয়ে কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। কেউ পেলে লাশ যেন কবর দেওয়া হয়- সেজন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

শনিবার (২৪ আগস্ট) রাতে ফেনী শহরের মিজান রোডে সোনালী ব্যাংকের সামনে হাঁটু পানিতে একটি মরদেহ ভেলায় ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে সেখানে লোকজন ভিড় জমান। পরে কয়েকজন মানুষ সেই লাশটির জানাজা ও দাফনের জন্য নিয়ে যায়।

পরদিন রোববার ফেনী সদর উপজেলার লালপোল এলাকার উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামে বন্যায় ভেসে আসে এক শিশুর লাশ। তা দেখে স্থানীয়রা সেখানে যান। পরে শিশুটির দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।

উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল মিয়া এ শিশুসহ আরও এক ব্যক্তির লাশ ভেসে আসতে দেখেছেন।

এছাড়া ফেইসবুক পোস্টে আরও অনেকে লাশ দাফন করতে না পরে ভাসিয়ে দেওয়ার খবর দিয়েছন। তবে সেগুলো যাচাই করা যায়নি।

তবে ফেনীর জেলা প্রশাসক মুসাম্মৎ শাহীনা আক্তার রোববার সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, জেলা প্রশাসনের কাছে বন্যায় একজনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে।

এমটিআই

Link copied!