ঢাকা: গত ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনামলে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিচ্ছে অর্ন্তবর্তী সরকার। এই পদোন্নতিতেও বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে।
চাকরিজীবনের পুরো সময় গুরুত্বপূর্ণ পদে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে চাকরি শেষ করে অবসরে গেছেন এমন কর্মকর্তাদের সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হলেও বঞ্চিত করা হচ্ছে ষড়যন্ত্রমূলক বিভাগীয় মামলা, ওএসডিসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার কর্মকর্তাদের।
অথচ আওয়ামী রেজিমে হয়রানির শিকার কর্মকর্তারাই পদোন্নতিতে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেটের কারণেই পদোন্নতিতে এই ধরণের বৈষম্য হচ্ছে বলে মনে করছেন বঞ্চিত কর্মকর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী রেজিমে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন তথাকথিত উত্তরা ষড়যন্ত্রে অভিযুক্তরা। এসকল কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিন ওএসডি থেকে অবসরে যাওয়া, গ্রেফতার হওয়া, ওএসডি থাকাকালীন সচিবালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়া, উচ্চতর গবেষণা কাজে নিযুক্ত থাকাকালে অনুমতি বাতিল করে ফিরিয়ে আনা হয়।
এদের বেশিরভাই নিয়মিত চাকরি করতে পারেননি। ওএসডি হয়েই চাকরিজীবন শেষ করতে হয়েছে। অবসরকালীন সুবিধাও নিতে পারেননি অনেকে। এছাড়া যেসকল কর্মকর্তা বিএনপি-জামায়াতের মন্ত্রীদের পিএস এবং এপিএস ছিলেন তারাও হয়রানির শিকার হয়েছে।
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পর অবসরপ্রাপ্ত পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি প্রদানের মাধ্যমে বঞ্চনার প্রতিকারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই লক্ষ্যে সাবেক সচিব জাকির আহমদ খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। নির্ধারিত সময়ে মারা যাওয়া কর্মকর্তাদের পক্ষে তাদের পরিবারের সদস্যদের করা ১৯টি আবেদনসহ মোট ১ হাজার ৫৪০টি আবেদন জমা পড়ে।
এর মধ্যে ১৩টি আবেদন নানা কারণে কমিটির আওতার বাইরে ছিল। ফলে কমিটি বাকি ১ হাজার ৫২৭টি আবেদন যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ তৈরি করে। কমিটি সচিব পদে ১১৯ জন, গ্রেড-১ (সচিবের সমান বেতন গ্রেড) এ ৪১ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন ও উপসচিব পদে চারজনকে পদোন্নতির সুপারিশ করেছে।
যেহেতু তারা অবসরে গেছেন, সে জন্য তাদের ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতি দেওয়া যেতে পারে বলে সুপারিশ করে কমিটি। ৭৬৪ কর্মকর্তার মধ্যে কমিটি ৯ জনকে চার ধাপ, ৩৪ জনকে তিন ধাপ, ১২৬ জনকে দুই ধাপ ও ৫৯৫ জনকে এক ধাপ পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার যৌথ আন্দোলনের ফলে হাসিনা সরকারের পতন হলে বর্তমান সরকার গঠিত হয়। এই সরকারের আমলে দল, মত নির্বিশেষে পদোন্নতি বঞ্চিত অফিসারদের বঞ্চনার প্রতিকার পাওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা তথাকথিত উত্তরা ষড়যন্ত্রের আসামি, দীর্ঘদিন পদায়ন না পেয়ে ওএসডি হয়ে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা এবং বিএনপি-জামায়াতের মন্ত্রীদের পিএস-এপিএসরা।
কিন্তু পদোন্নতিতে সেসব বিচেবনা না করে একটি রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে কতিপয় কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট তৈরি করে জাকির আহমদ খানকে চাপ দিয়ে তাদের পক্ষে সুপারিশ আদায় করেছে।
তড়িঘড়ি করে সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে গত বুধবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের অফিসের করিডোরে এক নজিরবিহীন বিক্ষোভ প্রকাশ করে। প্রায় শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ ফ্লোরে শুয়ে, কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করে।
তাদের দাবি, অবসরপ্রাপ্ত বঞ্চিত কর্মকর্তাদের প্রতিকার প্রদানের বিষয়ে গঠিত জাকির আহমদ খান কমিটির সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। এই বঞ্চিত কর্মকর্তাদের কেউ অতিরিক্ত সচিব, কেউ যুগ্মসচিব, কেউ উপসচিব, কেউ সিনিয়র সহকারী সচিব পদ থেকে অবসরে গেছেন।
এখন তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিতে হবে। তাদের দাবি মানা না হলে প্রেসক্লাবে গিয়ে তারা সাংবাদিক সম্মেলন করবেন। তারা সচিবালয়ে লাগাতার অবস্থান করে সচিবালয় অচল করে দেবেন।
বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলছেন, যারা আওয়ামী শাসনামলে চাকরি না করেই ওএসডি থেকে অবসরে গেছেন পদোন্নতিতে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রকৃত বঞ্চিতদের বাদ দিয়ে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে কতিপয় কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট চাপ দিয়ে জাকির খান কমিটিকে সুপারিশ করিয়ে পদোন্নতি নিবে এটা আমরা মেনে নেব না।
এজন্য কমিটিকে সুপারিশ পুন:বিবেচনাপূর্বক প্রকৃত বঞ্চিতদের পদোন্নতি দিতে হবে। এটা না করে বঞ্চিত করলে প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেব।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, চাকরি যারা করেন, তারা জানেন, ন্যূনতম একটি প্রক্রিয়ার ব্যাপার আছে। ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের একটি নির্দেশনা লাগবে। তবে ইতিবাচক চাকরির কিছু বিধিবিধান আছে। এটি মানতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
এটি ঠিক পদোন্নতি নয়। এটি হলো সামাজিক মানমর্যাদা। আর্থিক সুবিধা ও পদপদবি দিয়ে একটি সরকারি আদেশ জারি হবে। এর ভিত্তিতে অর্থনৈতিক আদেশে তারা এই টাকা পাবেন। সরকার নীতিগতভাবে একমত। একটু সময়ের ব্যাপার।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :