ঢাকা: ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি গাড়িতে ধাক্কা দেওয়া সেই যাত্রীবাহী বাসের চালক মোহাম্মদ নূরুদ্দিনকে আটক করেছে র্যাব। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব ১০–এর সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) তাপস কর্মকার।
তিনি বলেন, তিনটি গাড়িকে ধাক্কা দেওয়া বেপারী পরিবহন বাসটির চালক মোহাম্মদ নূরুদ্দিন (২৬)। এ ঘটনার পর তিনি পালিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জে যান। র্যাব ১০–এর সদস্যরা সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।
এদিকে জানা গেছে, টোল প্লাজায় ছয়জন নিহতের ঘটনায় ঘাতক বাসটির ব্রেকে সমস্যা ছিল এবং চালক নেশা করতেন।শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) র্যাব-১০-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপস কর্মকার বাসচালকের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বাসটি অনেক দিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়েছিল। মেরামতের পর সেদিনই সড়কে নামানো হয়। বাসচালক প্রথম থেকেই বুঝতে পারেন ব্রেকে সমস্যা ছিল। মালিককে সেটা জানালে তিনি আস্তে আস্তে চালিয়ে যেতে বলেন। দুর্ঘটনার সময় বাসটিকে অনেকবার ব্রেক কষেও থামানো যায়নি বলে দাবি করেছেন চালক।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাসচালক মোহাম্মদ নূরুদ্দিন র্যাবকে জানিয়েছেন, তার লাইসেন্স নবায়ন ছিল না এবং তিনি গাঁজা সেবন করতেন। তবে তার দাবি, শুক্রবার বাস চালানোর সময় তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন না।
এর আগে, শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে বাসচালক মোহাম্মদ নুর উদ্দিনকে আটক করা হয়। এদিন বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের কুচিয়াপাড়া এলাকার টোল প্লাজায় বাসের ধাক্কায় দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে থাকা ৬ জন নিহত হন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন- মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নন্দনকোনা গ্রামের বাসিন্দা ও দুর্ঘটনাকবলিত প্রাইভেট কারের মালিক নুর আলমের স্ত্রী আমেনা আক্তার (৪০), তার বড় মেয়ে ইসরাত জাহান (২৪), ছোট মেয়ে রিহা মনি (১১), ইসরাত জাহানের ছেলে আইয়াজ হোসেন (২), মোটরসাইকেলের চালক সুমন মিয়ার স্ত্রী রেশমা আক্তার (২৬) ও তাঁর ছেলে মো. আবদুল্লাহ (৭)।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ধলেশ্বরী টোল প্লাজার মাওয়ামুখী লেনে একটি মোটরসাইকেল টোল পরিশোধের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। এর পেছনে একটি মাইক্রোবাস দাঁড়ায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হয় আরও একটি প্রাইভেটকার। অল্প কিছুক্ষণ পরেই বেপরোয়া গতিতে বেপারী পরিবহনের একটি বাস দ্রুত টোল প্লাজার দিকে আসতে থাকে। টোল প্লাজার সামনে এলে বাসের গতি আরও বেড়ে যায়। এসময় বাসটি প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলকে দুমড়ে-মুচড়ে টোল প্লাজার বাইরে নিয়ে যায়।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নেটিজেনরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, ঘটনাটি ‘রহস্যজনক’। পরিকল্পিতও হতে পারে, আবার না-ও হতে পারে। তারা বলেছেন, যদি পরিকল্পিত না হয়, বাসটি যদি তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে থাকে, তাহলে যাত্রীদের বাঁচাতে টোল প্লাজার অন্য কোথাও আঘাত করতে পারত। বাসের গতিও স্বাভাবিক থাকত। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের গভীরভাবে খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করেন তারা।
আইএ
আপনার মতামত লিখুন :