পদবি ও বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবি

আন্দোলনে যাচ্ছে অধিদপ্তর ও দপ্তরের সরকারি কর্মচারীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক:  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৫, ০৫:৪৯ পিএম
আন্দোলনে যাচ্ছে অধিদপ্তর ও দপ্তরের সরকারি কর্মচারীরা

ঢাকা: সচিবালয়ের মতো পাবলিক সার্ভিস কমিশন, হাইকোর্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রধান সহকারী, সহকারী, উচ্চমান সহকারীসহ সমপদগুলোকে প্রশাসনিক কর্মকর্তায় পদবি পরিবর্তনসহ বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে ১৯৯৫ সালে। অথচ গত ২৯ বছর পূর্বে সৃষ্ট পদবি ও বেতন বৈষম্য অদ্যাবধি অধিদপ্তর, দপ্তর ও সংস্থার প্রধান সহকারী, সহকারী, উচ্চমান সহকারী ও সমমানের কর্মচারীদের মধ্যে রয়েই গেছে। 

শনিবার (৪ জানুয়ারি) এক সভায় কর্মচারীদের এই বৈষম্য দূর করার দাবি জানিয়েছে ‘বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদ’-এর কেন্দ্রীয় কমিটি। আগামী ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্ট পদবি ও বেতনবৈষম্য নিরসন না করলে ২৫ জানুয়ারী সকল অধিদপ্তর ও দপ্তরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার হুঁশিয়ারি প্রদান করেছে সংগঠনটি।

সংগঠনের সভাপতি আবু নাসির খান তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভিতরে ও বাহিরে সরকারি দপ্তরের প্রধান সহকারী, সহকারী, উচ্চমান সহকারী সমপদের পদবি ও বেতন স্কেল এক এবং অভিন্ন ছিল। ১৯৯৫ সালের প্রজ্ঞাপন দিয়ে শুধু সচিবালয়ের বর্ণিত পদগুলো প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদবিসহ ১০নং গ্রেডে উন্নীত করা হয়। ফলে সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে পদবি ও বেতন বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। অত্র সংগঠন ২০০৯ সাল থেকে এ বৈষম্য নিরসরে দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। 

তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে সরকার প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী, সমস্কেল ও নিম্ন বেতন স্কেলের কর্মচারীদের মধ্যে ব্লক সুপারভাইজার, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, নার্স, খাদ্য পরিদর্শক, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশের এসআই ইত্যাদি পদবি ও বেতন স্কেল উন্নীত করায় প্রশাসনিক ক্রমবিন্যাস ভেঙে পড়েছে। নিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের উচ্চপদে আসীন করায় পরবর্তী প্রজন্ম উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি কর্মচারীদের দাবি দাওয়া বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কমিটি বারবার সকল দপ্তর থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং কমিটি গঠন করলেও আজ পর্যন্ত বৈষম্যটি কেন নিরসন করা হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি কর্মচারীদের পদবি ও বেতনবৈষম্য নিরসনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। 

এছাড়া দেশে বাজার মূল্যের উর্ধ্বগতিতে কর্মচারীরা স্বল্প বেতন নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। একজন ২০তম গ্রেডের কর্মচারীর বেতন ৮২৫০ টাকা। প্রথম গ্রেডের একজন কর্মচারীর বেতন গ্রেড ৭৮০০০ টাকা। সকল কর্মচারী একই বাজারে বাজার করেন। অথচ বেতন গ্রেডে চরম বৈষম্যের শিকার ১১-২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা। 

তিনি আরো বলেন, ৯ম পে-কমিশন দ্রুত গঠনসহ মহার্ঘ ভাতা সর্বনিম্ন ৫০ শতাংশ হারে দিতে হবে এবং জুলাই ২০২৪ হতে কার্যকর করতে হবে। সংস্কার কমিশন কর্তৃক পদবি ও বেতনবৈষম্য দূরীকরণে কর্মচারী প্রতিনিধির সাথে আলোচনাক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

সংগঠনের মহাসচিব মো: বেল্লাল হোসেন বলেন, সচিবালয়ের বাহিরের অধিদপ্তর/দপ্তরের প্রায় ১৪ হাজার প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী, সমপদের সংস্থাপন কর্মচারী পদবি বৈষম্যের শিকার। পক্ষান্তরে ১৪ হাজার কর্মচারীর ফিডার পদ হিসেবে তৃতীয় ও ৪র্থ শ্রেণির লক্ষ লক্ষ কর্মচারী পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। সচিবালয়ে অফিস সহকারী বা সমপদ থেকে সরাসরি প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদোন্নতি দেয়া হয় কিন্তু অধিদপ্তর/দপ্তরে ছোট ছোট বিভিন্ন পদ সৃজন করে বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি সচিবালয়ের ন্যায় নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী, সমপদগুলোকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদবি পরিবর্তনসহ বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীতের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পদবি ও বেতন বৈষম্য নিরসন করার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান।

সভায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে শিক্ষা, ডাক, পুলিশ, বন, যুব উন্নয়ন, খাদ্যসহ ২২টি অধিদপ্তরের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত থেকে মতামত প্রদান করেন। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- মোহাম্মদ জাকির হোসেন, মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইসলাম খান, মো. মামুনুর রশিদ, মো. বেল্লাল হোসেন, মো. হারুন অর রশিদ, মো. জুয়েল হোসেন, মো. আশিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ নুরুজ্জামান প্রমূখ।

আইএ

Link copied!