এইচআরএসএস’র মানবাধিকার প্রতিবেদন

মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ মৃত্যু, ১৮ জনই বিএনপির

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২৫, ০৯:১৭ পিএম
মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ মৃত্যু, ১৮ জনই বিএনপির

ঢাকা : দেশে গত মার্চে ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ জন নিহত হয়েছে এবং নিহতের এ সংখ্যা গত ফেব্রয়ারি মাসের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি।  সহিংসতার ৮৮টি ঘটনা ঘটেছে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে এবং বিএনপির সঙ্গে অন্যান্য দলের সহিংসতায়। নিহতদের মধ্যে ১৮ জন বিএনপি নেতা, কর্মী ও সমর্থক।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৩৩ জন নারী যাদের মধ্যে ৮৩ জন শিশু। একই সময়ে ৪১ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) মাসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

এক মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসেও মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা ছিল হতাশাজনক। পবিত্র মাহে রমজান মাসে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দ্রব্যমূল্য ও ঈদযাত্রা কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।   

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৭৩৩ জন। আধিপত্য বিস্তার,  রাজনৈতিক প্রতিশোধ পরায়ণতা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলকেন্দ্রিক অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। নিহত ২৩ জনের মধ্যে বিএনপির ১৮ জন, আওয়ামী লীগের ৩ জন এবং ইউপিডিএফের ২ জন রয়েছেন।

এতে বলা হয়, ৯৭ টি সহিংসতার ঘটনার ৮৮টিই ঘটেছে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ও বিএনপির সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে। মার্চ মাসে সহিংসতার ৯৭টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ৬৪টি ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ৫০২ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে ১১টি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও ৫২ জন আহত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ১০টি সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও ৮১ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া বিএনপি-এনসিপির মধ্যে ৩টি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় কিছুটা কমলেও নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১০৪টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ৭৫৫ জন আহত হয়েছিলেন।  

এইচআরএসএস’র তথ্য অনুযায়ী, মার্চে কমপক্ষে ২৮৪ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ১৩৩ জন, যাদের মধ্যে ৩০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ২ জন। যৌন নির্যাতনের শিকার ১৩৩ জনের মধ্যে ৮৩ জন ১৮ বছরের কমবয়সী শিশু।

প্রতিবেদনে মাগুরায় ৮ বছরের এক শিশুকে তার বোনের শ্বশুর কর্তৃক ধর্ষণ এবং শিশুটি ৮ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়।

এইচআরএসএস’র তথ্য অনুযায়ী, এ মাসে অন্তত ২৯টি ঘটনায় কমপক্ষে ৪১ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ সকল ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ২৩ জন সাংবাদিক। এছাড়া ৩টি মামলায় ৭ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মার্চে গণপিটুনির অন্তত ৪০টি ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৪৪ জন আহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে এইচআরএসএস।

একই সময়ে ২১টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় ৭ জন নিহতের তথ্য জানানো হয়। এর মধ্যে ১ জন শিশু গৃহকর্মী মালিকের নির্যাতনে নিহত হয়। এছাড়া মার্চ মাসে ভারত- বাংলাদেশ সীমান্তে ৬টি হামলার ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক গুলিতে ২ জন বাংলাদেশি নিহতের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

এইচআরএসএস’র প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চে রাজনৈতিক মামলায় কমপক্ষে ১ হাজার ৬৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী অন্তত ১ হাজার ৬৪৪ জন। মার্চে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর কমপক্ষে ৩টি হামলার ঘটনায় ২ জন আহত এবং ২টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।

এইচআরএসএস’র নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক। নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন, সাংবাদিক নিপীড়নও তুলনামুলক বেড়েছে।

তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ব্যত্যয় হলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে।’

এমটিআই

Link copied!