ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা: ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’—এই প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। দিনটি যেন শুধুই একটি উৎসব নয়, বরং এক প্রতীকী প্রতিবাদও। প্রাণের রঙে, কণ্ঠের সুরে, আর শিল্পের হাত ধরে বাঙালি জানিয়ে দিচ্ছে—সময় বদলেছে, এবার মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার পালা।
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকার রাজপথে নামে জনস্রোত। চারুকলার প্রাঙ্গণে জমে ওঠে উৎসবের রঙ। বিশাল মুখোশ, ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি, কাঠ ও বাঁশের বিশালাকৃতির পাখি, বাঘ, মাছ—সব মিলিয়ে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে বাংলার মাটি ও মানুষের সংগ্রামী জীবনচিত্র। একদিকে শেখ হাসিনার মুখের শিল্পরূপ, অন্যদিকে পানির সংকটকে উপজীব্য করে ‘পানি লাগবে পানি’ থিম—সব মিলিয়ে বর্ষবরণ হয়ে ওঠে প্রতিবাদের ভাষা।
চারুকলা অনুষদ থেকে সকাল ৯টায় শুরু হওয়া শোভাযাত্রা ঘুরে বেরিয়েছে শাহবাগ, টিএসসি, শহিদ মিনার, দোয়েল চত্বর হয়ে আবার চারুকলায় ফিরেছে। ভিন্নরকম চিত্র ছিল এবার—নিরাপত্তা বাহিনী প্রথম সারিতে না থেকে পাশে পাশে হাঁটছিল, যেন উৎসবের সুরে কোনো কণ্টক না আসে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ কোনো শঙ্কা নেই, তবে বিকেল ৫টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশ সীমিত থাকবে।
উৎসবে অংশ নিয়েছেন চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা এবং নানা বয়সী মানুষ। বিদেশি নাগরিকরাও মেতে উঠেছেন এই বর্ণিল আয়োজনে।
তবে এবারের বৈশাখে আবহটা ছিল আলাদা। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের রাজনৈতিক গুমোট হাওয়া কেটে এবার যেন এসেছে সত্যিকারের মুক্তির পরশ। অতীতে যেখানে উৎসবের রঙে ছিল সরকারি নজরদারির ছায়া, এবার সেখানে দেখা যাচ্ছে এক স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছ্বাস। মানুষ আর ‘উপরের অনুমতির’ দিকে তাকিয়ে নেই—এবার তারা নিজেরাই উৎসবের মালিক।
নতুন বছরের প্রথম দিন তাই শুধু হাসি, গান আর আলপনায় সীমাবদ্ধ থাকেনি—এটি হয়ে উঠেছে এক নতুন প্রত্যয়ের সূচনা। পুরোনো বছরের ক্লান্তি, দমন-পীড়ন আর হতাশা ঝেড়ে ফেলে বাঙালি পা রাখছে নতুন সময়ের দিকে।
বাংলার গ্রামে-গঞ্জে, শহর-বন্দরে, অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে বৈশাখী গান। ‘এসো হে বৈশাখ’ শুধু সুর নয়, আজ যেন তা একটি ডাক—নতুন দিনের, নতুন রাষ্ট্রচিন্তার, নতুন আশার।
এসআই
আপনার মতামত লিখুন :