আমার বঙ্গের বন্ধু যিনি

  • সূনৃত সুজন | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২১, ০৩:৩৮ পিএম
আমার বঙ্গের বন্ধু যিনি

ছবি : ছবি : বাঙালি জাতির কাছে অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

ঢাকা : শুরুতেই বলে রাখি বঙ্গবন্ধু আমার কাছে দেবতা নন, ঈশ্বর নন। বন্ধু ও আশ্রয়। এমন একজন বন্ধু যাঁকে যে কোন সমস্যার কথা বলে নির্ভার থাকা যায়। সেই সময়ের সৌভাগ্যবান মানুষ যাঁরা বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পেয়েছিলেন তাঁদের স্মৃতিলেখা ও কথায় এমনটাই মনে হয় আমার। মনে হয় ওই সময়ে আমি থাকলে নির্ঘাত ৩২ নম্বরে গিয়ে তাঁকে আবৃত্তি শোনাতাম। নতুন কিছু লিখলে পড়তে দিয়ে বলতাম- কেমন হলো লেখাটা? 

বঙ্গবন্ধু আমার কাছে একটি সুবিশাল বটবৃক্ষ। যাঁর ছায়ায় আরামবোধ করতেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ। মানুষ তো শেষ পর্যন্ত মানুষের জন্যই। একজন প্রজ্ঞাবান, সাহসী ও দূরদর্শী রাজনীতিবিদ কালের স্রোতে হাঁটতে হাঁটতে ঠিক সময়ে জ্বলে উঠেছিলেন বলেই আমরা স্ব-অধীন বাংলায় শান্তির নি:শ্বাস নিতে পারছি। সেই অর্থে বঙ্গবন্ধু আমার শিক্ষক।

রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান (১৯৪৯)

একজন মানুষ কি করে ৭ কোটি মানুষের প্রাণের মানুষ, মনের মানুষ হয়ে ওঠেন তাঁর সেই সবার হয়ে ওঠার ভ্রমণ কৌশল আমাকে বিস্মিত করে। আমাকে বিস্মিত করে ৭ মার্চের অনবদ্য বজ্রভাষণ। কতটা আত্মবিশ্বাস থাকলে, মেরুদণ্ড ও মাথা কতখানি সোজা থাকলে ওই সময়ে ওই রকম একটি সার্থক ভাষণ দেয়া যায় তা ভাবলে সাহসের বাতাসে ফুসফুস ভরে ওঠে, শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায় গর্বের দুর্দান্ত অনুভূতিতে। 

অথচ আজ বঙ্গবন্ধু যেন প্রতিষ্ঠার কাঁচামাল। ক্ষমতাসীন নেতাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারিক সম্পদ। অথচ বঙ্গবন্ধু তো সবার জন্য খোলা আকাশ হবার কথা ছিলো। আর একটা কথা বলি। ধরুন উত্তপ্ত এক দিগন্ত প্লাবিত ফসলের খোলা মাঠের মাঝখানে প্রকাণ্ড এক বটবৃক্ষ সুদীর্ঘকাল মধ্যদুপুরে ঘর্মক্লান্ত কৃষকের দুদণ্ড প্রশান্তির আশ্রয়। তো কোন কারণে সেই বটবৃক্ষটির মৃত্যু ঘটলো। পাতা শুকিয়ে গেলো। শেকড় শুকালো। গাছটি কাটা হলো। 
 

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে জনতার অভিবাদনের জবাব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পেছনে দাঁড়িয়ে তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা (২৩ মার্চ, ১৯৭১) ।

এরপর কেটে গেলো ৫০ বছর। সেখানে আর কোন গাছ লাগালো না কোন কৃষক। বরং তারা হাজার হাজার সাইনবোর্ডে ভরিয়ে তুললো ওই ফসলের মাঠ। তাতে শুধু লেখা ‘এইখানে বঙ্গবন্ধু নামে একটি বটবৃক্ষ ছিলো। খুবই উপকারি ও দরকারি।’  তাহলে সত্যিই কি ছায়া পাবে কৃষক? নাকি ছায়ার জন্য নতুন করে বৃক্ষ বুনতে হবে মাঠে? 

এই একটা জায়গাটায় কাজ হচ্ছে না একদমই। বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল বাংলাদেশের সংসদ ভবনে সাংসদেরা গান গেয়ে, বঙ্গবন্ধু বন্দনা করে, নিজেদের প্রশংসা করে মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট করেন।  অথচ ওই সময়টুকু দেশের কল্যাণ নিয়ে কথা হতে পারতো। অতীত নিয়ে জাবর কেটে কি লাভ?  বঙ্গবন্ধু এটা করেছেন, ওটা করেছেন। আরে বাবা! বঙ্গবন্ধু কি করেছেন সেটা গোটা বিশ্ব জানে। তুমি কি করছো এখন সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় আমার বঙ্গবন্ধুও এমনটাই ভাবতেন। 
 

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং কারামুক্তির পর কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পাশে আছেন বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ও পুত্র শেখ কামাল (১৯৬৯)।

আমি আওয়ামী লীগের নই। বিএনপির নই। জাতীয় পার্টির নই। আমি বাংলার। আমি বাংলাদেশের। যে সোনার বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। আমি সেই বাংলা মায়ের সচেতন সন্তান। আমার কাছে বঙ্গবন্ধু এ রকমই অন্তহীন অনুপ্রেরণা ও অফুরান সাহসের উৎস। দেবতা নন, গুরুগম্ভীর কোন মহান কেউ নন। নিতান্তই নিজের আপন কেউ। যাঁর কাছে প্রাণ খুলে বলা যায় হৃদয়ের যে কোন গভীর গোপন।

Link copied!