ঢাকা : কিছুদিন আগে বিগবাজেটের এক হাউজ থেকে চাকরি ছাড়তে হয়েছে অভিজ্ঞ এক সাংবাদিককে। আলাপে বললেন, অনেক কষ্টে চলতি মাসের বাসাভাড়া দিয়েছি। আসছে মাসে কীভাবে দেব, ভাবতেই হাত-পা অবশ হয়ে আসছে! আগে থেকেই ডায়াবেটিস আর হাইপ্রেশারে আক্রান্ত এই সিনিয়র চাকরির জন্য দৌড়ঝাঁপ করলেও মিলছে না। শরীর ভীষণ খারাপ যাচ্ছে। রাত এলেই নীরবে দু’চোখ ভাসিয়ে দিচ্ছেন।
পেশায় দেড় দশকের বেশি পার করা আরেক সংবাদকর্মী পাঁচ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। হাউজ বদলানোর চেষ্টা করেও পারছেন না। মাস কয়েক আগে এক হাউজে সিভি দিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলেন। সাক্ষাৎকারে নির্বাহী সম্পাদক বলেছিলেন, আপনি তো বয়স্ক, চটপটে নন। আপনাকে কেন নেব বলুন? তরুণদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবেন? ক্ষোভে, অপমানে তার ‘ভিক্ষা চাই না কুকুরটা সামলান’ অবস্থা।
উত্তরাঞ্চলের এক সিনিয়র হতাশ সুরে বললেন, ভাই বেতন না বাড়িয়ে বিজ্ঞাপনের চাপ বাড়ছে। সংবাদ নয়, বিজ্ঞাপন প্রতিনিধিত্ব করতে হচ্ছে এখন। টার্গেট পূরণ করতে না পারলে বেতন জোটে না। সিনিয়র হওয়ায় বড় হাউজেও নেয় না। ক্লান্তি আর হতাশা ছাড়া কিছুই নেই ভাই। দক্ষিণাঞ্চলের আরেক সিনিয়র বললেন, অভিজ্ঞতা তো আর কাজে আসছে না। নতুন ভালো হাউজ কম বেতন, সুযোগ সুবিধায় নতুনদেরই নিচ্ছে। আমরা বেকার হয়ে পড়ছি। পেশায় সম্মান যেমন নেই, পরিবেশও আগের মতো নেই।
ঢাকা আর ঢাকার বাইরে কর্মরত সিনিয়র আর অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের অবস্থা একই রকম। নতুন বিগবাজেটের হাউজগুলোতে ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে কিছু পদে একান্ত পরিচিত, সিন্ডিকেটভুক্তরাই সুযোগ পাচ্ছেন। অন্য পদগুলোতে কম বেতনে তরুণদের বেশি নিয়োগ দিয়ে ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা হচ্ছে। এতে চরম ঝুঁকিতে পড়ছেন অভিজ্ঞ, সিনিয়ররা। যাদের বেশিরভাগই বেকার হয়ে পড়ছেন।
বছর বছর যে নতুন ওয়েজবোর্ড আসে তার সুবিধা পান হাতে গোনা কিছু সাংবাদিক। বাকিরা চরম অনিশ্চয়তায় জীবন যাপন করেন। বিকল্প কর্মসংস্থানের পথও তৈরি হচ্ছে না। সরকার বা সংগঠনগুলো যদি চরম ঝুঁকিতে পড়া এসব অভিজ্ঞদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে নীরব মানবিকবিপর্যয় ঘটবে।
লেখক : সাংবাদিক
(গণমাধ্যমের অভিজ্ঞরা: ২১ মে, ২০২৩। এলিফেন্ট রোড, ঢাকা)
আপনার মতামত লিখুন :