প্রায়-প্রতিদিনের সংবাদ শিরোনাম আমাদেরকে ক্রমশ আতঙ্কিত করে তুলছে। মশার কামড়ের মৃত্যুর মিছিল কোনো ক্রমেই যেনো থামছেই না।
করোনার বিভৎস থাবা থেকে নিজেদেরকে কোনোরকম ফিরালেও বর্তমানে মশার কাছে যেনো হার মানছে আমাদের জীবন।এই ডেঙ্গু মশার ভয়াবহতা নতুন করে প্রতিবছর আবির্ভূত হচ্ছে আমাদের জীবনে। এ সমস্যা কিন্তু নতুন করে শুরু হয়নি।বেশ অনেক বছর ধরেই একই আলোচনা চলছে সারাদেশে।
অন্যবার বর্ষায় হলেও এবছর বর্ষার আগেই মানুষ মারা যাচ্ছে ডেঙ্গু মশাতে। শুনছি মশাও নাকি মিউটেশন করতে করতে এখন সর্বংসহা হয়ে গেছে। আগে তিনি কামড়াতেন কেবল একটা নির্দিষ্ট সময়ে, জন্মাতেন বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জলে (পানি)। আর এখন তার কামড়ানোর সময় নির্ধারিত নাই,জন্ম বা বাসেরও নির্ধারিত কোনো স্থান নেই।
সব সময় সব জলেই জন্মাচ্ছে এডিশ মশা।কিন্তু আমাদের কর্তৃপক্ষের যেনো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। তারা এখনও এক ফগার মেশিনেই বসে আছে।
এটা চরম সত্য যে, আমরা মানুষও অসচেতন। নিজেদের থাকার জায়গাটাও পরিষ্কার রাখতে পারি না আমরা। কিন্তু এটাতো অজানা নয় যে, সাধারণ মানুষ অসচেতন হবেই বা আছেও তাই। আর সব অসচেতনতা মাথায় রেখেইতো তবে আমাদের উদ্ধারের কাজটি করার কথা। আমাদের পাশের দেশের শহর কলকাতা। সকাল- বিকাল আমরা কলকাতা যাই নানান প্রয়োজনে। সেই কলকাতা ইতোমধ্যে ডেঙ্গুর মতো মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে।
কয়েক বছর আগে কলকাতার মেয়রদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের বিষয়টাও আমরা দেখেছিলাম। আমাদের সবকিছু আলোচনায়ই থেকে যায় কেন জানি না। ড্রোন ব্যবহার, জরিমানা করা সবকিছুই হয় ডেঙ্গু যখন তার ভয়াল থাবাটা ফেলতে শুরু করে।
এখনও বর্ষা চলে যায়নি। আগস্ট, সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকটতা আরও বাড়বে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে যে- প্রকট হয়ে সে আর কী কী ঘটনা ঘটাবে আর কত প্রাণ কেড়ে নেবে সামান্য মশার কামড়।
প্রস্তুতির ঘাটতির কথা বলা হয় প্রতিবছর। আলোচনার টেবিলেই পড়ে থাকে সেই প্রস্তুতির প্রস্তুতিমালা। মৌসুম শেষ তো সব শেষ। অপেক্ষা করি আবারও কবে মানুষ মরবে আবার কবে আলোচনার ঝড় উঠবে তারপর কাজে নামবে সিটি কর্পোরেশন এর মশা নিরোধক বাহিনী।
বিগত বছরগুলো ডেঙ্গু মশা কেবল ঢাকায়ই বেশি পাওয়া যেতো কিন্তু চলতি বছর ইতোমধ্যে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো হচ্ছে অসচেতনতার ফলে। কারণ গ্রামের মানুষ এখনও মশারি টানায় না। ডেঙ্গু মশা সম্পর্কে তাদের কোনো বাস্তব ধারণা নেই। ঠিক যেমনটা ছিল না করোনা ভাইরাস আগমনের শুরুতে।
এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত অনতিবিলম্বে শহর থেকে শুরু করে গ্রাম বা প্রত্যন্ত এলাকায় বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করে মানুষকে সচেতন না করা যাবে ততোক্ষণ পর্যন্ত এমন মহামারির হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আরও সক্রিয় কার্যক্রম দেখতে চাই আমরা। একজন মানুষের মৃত্যুও কিন্তু তাদের জবাবদিহিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দেয়।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
আপনার মতামত লিখুন :