গণমাধ্যম ভাবনা

দেশে ভালো সম্পাদক, বার্তা সম্পাদকের সংকট

  • নিয়ন মতিয়ুল | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৪, ০৪:০৯ পিএম
দেশে ভালো সম্পাদক, বার্তা সম্পাদকের সংকট

ঢাকা : অসম্ভব মেধাবী, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির এক সম্পাদকের অধীনে কাজ করছেন সাবেক এক সহকর্মী। কথার ফাঁকে বললেন, ‘স্টাডিতে ডুবে থাকা, অসাধারণ সব আইডিয়া নিয়ে কাজ করা এমন সম্পাদক আগে দেখিনি। সেই সকালে অফিসে ঢুকে গভীর রাতে বাসায় ফেরেন’।

বললাম, ‘এর আগে তো আপনি ‘প্রভাবশালী’, ‘দেশবরেণ্য’ কয়েকজন সম্পাদকের অধীনে কাজ করেছেন। তাদের চেয়েও বর্তমান সম্পাদক ভালো? তিনি বললেন, ‘প্রভাব’, ‘বরেণ্য’ এসব গুণের চেয়ে বেশি দরকার ‘মেধা’ আর ‘আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি’।

সত্যিই, দেশে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির সম্পাদক আর বার্তা সম্পাদকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সিংগভাগ পত্রিকা যে কৌশলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারি বিজ্ঞাপন নিয়ে ‘উৎসবমুখরতায়’ চলছে তা একটি ফাঁপা ‘বিজনেস মডেল’। এতে ‘প্রভাবশালী’ সম্পাদক হওয়া যায়, সংবাদপত্রকে শিল্পের উচ্চতায় তুলে আনা যায় না।

মূলত, তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ফোরণে বিশ্ব এখন মানচিত্রহীন। রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে অর্থনীতির হাতে। রাজনৈতিক আদর্শের সীমারেখাও মুছে যাচ্ছে। প্রথগত সব কাঠামো ভেঙে পড়ছে। প্রতিটি দেশ জটিল আর্থ-সামাজিক-জলবায়ু সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে। একবিংশ শতকের দুই যুগ পেরিয়ে এমন বাস্তবতায় আমাদের সম্পাদকেরা এখনও পড়ে আছেন আশি-নব্বই দশকের রাজনৈতিক মূল্যবোধে।

আমাদের প্রভাবশালী সম্পাদকদের বেশিরভাগের দৃষ্টিভঙ্গি এখনও ব্রিটিশ ফরমেটে আটকে আছে। তাদের পত্রিকাগুলোর ‘ন্যারেটিভ’ সময়ের দাবি পূরণ আর সংকট সমাধানে সক্ষম নয়। বিশাল বিনিয়োগের যেসব পত্রিকা বা গণমাধ্যম প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে সেগুলো শুরুর পরেই মুখ থুবড়ে পড়ছে।

মূলত, মেধা, আধুনিক ও সময়োপযোগী দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে বেশির ভাগ সম্পাদক আর বার্তা সম্পাদক সংবাদমাধ্যমের বিজনেস চ্যালেঞ্জে সফল হতে পারছেন না। ফলে অন্যভাবে সংবাদমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখতে রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করছেন। এতে তারা নীতি আদর্শের মুখোশে নিজেদেরই পণ্য বানিয়েছেন। যে কারণে গোটা সংবাদপত্র শিল্প বা সংবাদমাধ্যম অস্থির, বিতর্কিত সময়ের সঙ্গী হয়ে পড়ছে।

বিগত নব্বই থেকে শূন্য দশক পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের নেতৃত্বে দেশ কাঁপিয়েছেন অভিজাত শ্রেণি দাবিদার এক তারকা সাংবাদিক গোষ্ঠী। যারা নতুন মেধাবীদের জায়গা দিয়ে ধারাবাহিকতা রক্ষার চেষ্টা করেননি। তারপরও তরুণ মেধাবীদের অনেকে ক্ষতবিক্ষত হয়েও নিজেদের টিকিয়ে রেখেছেন পেশায়। কেউ কেউ আবার ছিটকে পড়েছেন। এতে মেধাবী আর আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির ভালো সম্পাদক, বার্তা সম্পাদকের শূন্যতা তৈরি হয়েছে দেশে।

লেখক : সাংবাদিক

Link copied!