ঢাকা : ১৯৫৪ সালে আমাদের পুঁজিবাজারের যাত্রা শুরু হলেও খুব একটা শক্ত ভিত্তি নিয়ে এগুতে পারেনি। যদিও জন্মলগ্ন থেকে চলে গেছে অনেকটা বছর। পুঁজিবাজারকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবেশপথ বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল কি মন্দ তা কেবলমাত্র সেই দেশের পুঁজিবাজারের শেয়ারের মূল্য সূচক দেখেই বোঝা যায়।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজার আর্টিফিশিয়ালি খুব নাজুক অবস্থা থেকে হঠাৎ তেজিভাব দেখা যায়, যদিও তা বেশি দিন টেকেনি। ১৯৯৬ সালের ১৩ নভেম্বর সর্বোচ্চ ট্রেড ভলিউম ছিল ১০৬ কোটি। এর পরই বাজার ক্রাস করে, ফলে অনেক বিনিয়োগকারী বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এর তালিকায় অনেক প্রতিষ্ঠানও ছিল। তবে সবাই-ই অপেক্ষা করে কিছু না কিছু চালান ফেরত পেয়েছিল কারণ তখন মার্জিন লোন ছিল না।
মার্জিন লোন: ১৯৯৯ সালে গ্রাহককে পুঁজিবারে বিনিয়োগ করার জন্য তার ইকুইটির বিপরীতে মার্জিন লোন দেওয়ার আইন পাশ হয়, যেটা পরবর্তীতে সবার জন্য গলার কাঁটা হয়ে যায়। বিনিয়োগকারী ও মার্জিন লোন দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো কেউ-ই রেহাই পাইনি বিপুল অংকের লোকসানের হাত থেকে। এই মার্জিন লোনের ফলে হয়ত কিছু স্মার্ট বিনিয়োগকারী লাভবান হলেও ৯৮% বিনিয়োগকারী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইকুইটি নেগেটিভ নামক নতুন কিছুর জন্ম নেয়, যেটা আগে কখনও ছিল না।
২০০৪ সালে ব্যাংক শেয়ারের প্রাইস দিয়ে বাজার বেশ গতি পায়, এভাবে চলতে চলতে ২০১০ সালে সার্বিকভাবে বাজার চূড়ান্ত গতি পায়, ইনডেক্স ৮৯০০ তে চলে যায়। ৩২০০ কোটি টাকার মত ট্রেড ভলিউম হয় একদিনের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। কোনো প্রকার বাছবিচার ছাড়াই, বিনিয়োগকারী ঝাপিয়ে পড়ে শেয়ার বাজার বুঝে না বুঝে। সব পেশার মানুষ সুতরাং যা হবার তাই হয়, ক্রাস ল্যান্ডিং। এক্সপোজার লিমিট ছিল ওপেন, মার্জিন লোন ইচ্ছামত দেওয়া হয় যে যার মত করে।
বাজারে বাবল ক্রিয়েট হয়, শুধু তাই নয় , মিউচুয়াল ফান্ডের দাম থাকা উচিৎ নেট এসেট ভ্যালুর কাছাকাছি, সেটি ফেস ভ্যালুর ৮/১০ দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। মহাধস, যতদূর জেনেছি গ্রাহক কি পরিমান তার ইকুইটি হারিয়েছেন তার সঠিক তথ্য জানা না গেলেও মার্জিন লোন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার মত ইকুইটি নেভেটিভ হয়ে যায়, যার খেসারত আজও গুলতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
মার্জিন লোন আমাদের শেয়ার বাজারের জন্য কতটুকু যৌক্তিক? মার্জিন লোনের কারণেই কী আমাদের বাজার বিকশিত হতে পারছে না? এই প্রশ্ন সবার কাছে ছুঁড়ে দিলাম। বিবেচনা আপনাদের।
করোনা পরবর্তী অবস্থা: কোভিড ১৯-এর কারণে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা আমরা কম বেশি সবাই ফেস করেছি। ২০২০ সালের ২৪ মার্চ আমাদের পুঁজিবাজার ৬৬ দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে ফ্লোর প্রাইস ইত্যাদি কিছু সিকিউরিটি পন্থা নিয়ে বাজার খুলে দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে ইন্সুরেন্সের শেয়ার দিয়ে বাজারের গতি ফেরানো হয়, অনেক দুর্বল বেইজের ইন্সুরেন্সের অস্বাভাবিক দাম বাড়ানো হয় কারসাজির মাধ্যমে। মার্জিন লোনের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার হয় এগুলোতে। সুতরাং সেই একই ফলাফল মুষ্টিমেয় কিছু লোক লাভবান হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারী; যারা নতুন করে বাজারমুখি হয়েছিলেন তারা পথে বসে যায়।
শুরু হয় আইটেম ভিত্তিক মূল্য বাড়ানোর নোংরা খেলা। এই সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পার্কিং বাণিজ্য বেশ সমাদৃত হয়। লিস্টেড বেশ কিছু ব্যাংক, অন্যান্য বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক হিসাব বিবরণীতে শেয়ারের বিনিয়োগ পর্যালোচনা করলেই সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।
লেখক : প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিআরবি সিকিউরিটিজ লিমিটেড
এআর
আপনার মতামত লিখুন :