ঢাকা: ২৪ পেড়িয়ে ২৫ আমাদের দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। অর্থাৎ আমাদের জীবন থেকে পূর্ণ একটি বছর বিদায় নিতে চলছে। সেক্ষেত্রে নতুন বছরকে নতুন চেতনায় গ্রহণ করতে হলে মুহাসাবা ও আত্মসমালোচনার কোনো বিকল্প নেই। অথচ এই সময় আত্মসমালোচনার পরিবর্তে আত্মবিস্মৃতির দৃষ্টান্তই প্রকটভাবে দেখা যায়।
নতুন বছরকে (থার্টি ফার্স্ট নাইট) স্বাগত জানাতে দেশের শহর-নগরগুলোতে জমে ওঠে উদ্দাম নাচ-গানের আসর। আমাদের মিডিয়া একে আদর করে বলে ‘তারণ্যের উন্মাদনা’। যেন তরুণ মাত্রই উন্মাদ হওয়া অপরিহার্য।
অথচ ইসলামে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামে হারাম বিবেচিত হয় মূলত এর সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি কারণের জন্য, যেমন: অপচয়, হারাম কাজ, অমুসলিম সংস্কৃতি অনুসরণ, এবং আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন।
নিম্নে এই বিষয়গুলো কুরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করা হলো:
ক. অপচয় ও অযথা খরচ:
থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে সাধারণত অপচয় ও অপ্রয়োজনীয় খরচ হয়, যা ইসলামে নিষিদ্ধ।
এ বিষয়ে কুরআনে এসেছে :
"إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا"
অর্থ:
“নিঃসন্দেহে অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রভুর প্রতি অকৃতজ্ঞ।”-আল-ইসরা: ২৭
খ. হারাম কাজের অন্তর্ভুক্তি:
থার্টি ফার্স্ট নাইটে গান-বাজনা, নাচ-গান, মদ্যপান, মিশ্র পরিবেশে অনৈতিক কার্যকলাপ ইত্যাদি ঘটে, যা ইসলামে স্পষ্টত হারাম।
হাদিসে এসেছে: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
"لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْحِرَ وَالْحَرِيرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ"
অর্থ:
“আমার উম্মতের কিছু লোক থাকবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী বস্ত্র, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল বলে গ্রহণ করবে।”- বুখারি: ৫৫৯০
গ. অমুসলিমদের সংস্কৃতি অনুসরণ:
থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন অমুসলিমদের সংস্কৃতি থেকে আগত। ইসলামে তাদের অনুকরণ ও অনুসরণ নিষিদ্ধ।
হাদিসে রয়েছে : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
"مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ"
অর্থ:
“যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।”-আবু দাউদ: ৪০৩১
৪. সময় ও ইবাদতের অপচয়:
থার্টি ফার্স্ট নাইটে মানুষ সাধারণত আনন্দ-ফুর্তি ও অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় ব্যয় করে, যা ইসলামে সময়ের অপচয় হিসেবে গণ্য।
কুরআনে এসেছে:
"وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ"
অর্থ: “আর যারা অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকে।”-আল-মুমিনুন: ৩
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ: الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ"
অর্থ:
“দুটি নিয়ামত রয়েছে, যেগুলোর ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়: সুস্থতা এবং অবসর সময়।”-বুখারি: ৬৪১২
এ সময়ে আমাদের করণীয়:
ক. আল্লাহকে স্মরণ করা:
থার্টি ফার্স্ট নাইট বা যেকোনো সময় আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করা উচিত।
সুরা আনফালে বর্ণিত হয়েছে:
"وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ"
অর্থ: “তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।”
খ. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা:
মুসলিমরা অন্যদের সৎ কাজের প্রতি উৎসাহিত করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে।
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
"وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ"
অর্থ: “সৎকর্ম ও তাকওয়ার বিষয়ে পরস্পরকে সাহায্য করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের বিষয়ে সাহায্য করো না।”
-সূরা মায়িদা: ২
মুসলিমদের উচিত থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন থেকে বিরত থাকা এবং এ সময় আল্লাহর ইবাদত ও ভালো কাজে মনোনিবেশ করা। অপচয়, হারাম কার্যকলাপ ও অমুসলিমদের সংস্কৃতি অনুসরণ এড়িয়ে চলা ইসলামের দৃষ্টিতে অপরিহার্য।
এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ।মুহাদ্দিস-জামিয়া ইসলামিয়া মারকাযুদ দ্বীন, তিতাস, কুমিল্লা
আইএ
আপনার মতামত লিখুন :