ঢাকা: সরকারের ৫ মাস মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা সম্ভব হয়নি।
প্রতিনিয়ত সরকারি পর্যায়ে, ছাত্র নেতৃবৃন্দ পর্যায়ে ও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দোষারোপ করা হচ্ছে নানারকম বিষয়। যেমন: ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলারা কথা শুনছে না, সঠিকমত কাজ করছে না, কাজ এগুচ্ছে না, বিচার আচার করা যাচ্ছে না, পুলিশ কাজ করছে না ইত্যাদি ইত্যাদি।এইভাবে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে দিয়ে কি পার পাওয়া যাবে।
ইতোমধ্যে অনেক কাজ হয়েছে। প্রথমত: ৬টি কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে আরো ৯টি সহ মোট ১৫টি কমিশন/ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জুডিশিয়ারিতে চেঞ্জ, এডমিনিস্ট্রেশনে চেঞ্জ, বিশ্ববিদ্যালয়ে চেঞ্জ, পুলিশে চেঞ্জ, পাবলিক সার্ভিসে চেঞ্জ, নির্বাচন কমিশনে নতুন নিয়োগ, দুর্নীতি দমন কমিশনে চেঞ্জ ইত্যাদি ইত্যাদি করা হয়েছে। গুটিকয়েক উপদেষ্টা নতুন নেয়া হয়েছে। এডমিনিস্ট্রেশনে বঞ্চিতদের পূনর্বাসন ইত্যাদি হয়েছে।
তাহলে প্রশ্ন হলোঃ সরকার যেভাবে চলার কথা সেভাবে চলছে না কেন? অর্থনীতিতে গতি আসছে না কেন? বিনিয়োগ বাড়ছে না কেন? আসলে শর্শের মধ্যে ভূত থাকলে সেটা তাড়াবে কে?
দেশের মানুষের কষ্ট বা দূরাবস্থার কথা কেউ কি আমরা দৃকপাত করছি? উত্তরঃ না।
উত্তরাঞ্চলে যে ভয়াবহ শীত সেদিকটা কি কেউ নজর দিচ্ছেন? উত্তরঃ না। উত্তর না কেন? কারণ আমরা উল্লেখযোগ্য কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করছি না। ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ কি দেশে আছে? নেই। বেশি বেশি ধরপাকড় বা চাঁদাবজি করলে কি পরিবেশ ঠিক থাকবে? মোটেও না।
Right man in right place যতক্ষণ এনশিয়োর করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবেশ উন্নত হবে না। প্রশ্ন হলো Right man কে? সঠিক মানুষ খোঁজার জন্য তো কোনো কমিশন করা হয় নি? তা লাগেও না।
আবেগ বিরাগ অনুরাগ ইত্যাদির বশবর্তী না হয়ে একটু ভালো মন ও ইচ্ছা থাকাই যথেষ্ট। অবশ্যই সমাজে এখনো যথেষ্ট কর্মদক্ষ, সৎ, সাহসী, পরিশ্রমী, কৌশলী, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন লোক রয়েছেন। কিন্তু যারা ক্ষমতায় রয়েছেন বা নিয়োগ দিতে পারেন তারা সেসব লোক চান কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
কথায় বলে, যে যায় লংকায় সে হয় রাজা। জনগণ পড়েছে হবু চন্দ্র রাজা গবু চন্দ্রের দেশে।
ড. ইউনুস সাহেব ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যে উপদেষ্টা পরিষদ বানিয়েছেন তাকে কি সঠিক চয়েস বলা যাবে? নিশ্চয় না। ভোট দিন। দেখবেন ৯০% বা ততোধিক মানুষ বলবেন না।
ড. ইউনুস এনজিও পারসন হিসেবে সফল, ফিলোসফার হিসেবে ঠিক আছে, থিউরেটিশিয়ান হিসেবে ঠিক, পৃথিবীব্যাপী পরিচিতি আছে এটা ঠিক কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় তার দক্ষতা প্রশ্নাতীত নয়। আবার তার কাছে সব পাওয়া যাবে এরকমটা ভাবাও বোকামি।
তিনি ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। ধরুন ঐক্য হলো না বা হবে না তাহলে কি কাজ করবেন না। আমাদের পরামর্শ হলো আপনি একটি দক্ষ অভিজ্ঞ উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করুন। উপদেষ্টা পরিষদে মোসাহেবি জো হকুম জাঁহাপনাদের বাদ দেন। আপনার সাথে যুক্তিতর্ক করবে এমন ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন লোকদের বাছাই করুন।
মনে রাখবেন চাটুকার তৈলমর্দনকারীরা কখনো ভালো উপদেশ দিতে পারে না। তারা কোনো কাজেরও না। তাদেরকে বলা হয় ঢপের পানসারা। যুগে যুগে এদের কারণেই সরকার প্রধান রাজা বাদশারা পঁচে গেছে।
ছাত্রজনতা কি জন্য রক্ত দিয়ে অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে? তারা সত্যিকার গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার, বৈষম্যহীন সমাজ ব্যাবস্থা, ন্যায় বিচার, মানবিক মর্যাদা ইত্যাদির প্রতিষ্ঠা চেয়েছে। এরমধ্যে অন্যায্য কি কিছু আছে? নিশ্চয় না। তাহলে এতো ডাকাডাকির কি আছে?
তারা তো ক্ষমতায় ছিলো। অলরেডি টেষ্টেড। দীর্ঘ পনের ষোলোবছর জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন তারা করেছে? কখনো নেতার মুক্তি, কখনো ভোটাধিকার, কখনো গণতন্ত্রের আন্দোলন তারা করেছেন কিন্তু মানুষ তাদের কথায় আন্দোলনে শরিক বা সম্পৃক্ত হননি। আর হলে অনেক আগেই অভ্যুত্থান হতো।
ছোট ছোট কিছু দল যারা শুধু ভাঙ্গে আর জোড়া লাগে। মানুষ যাদের ওয়ান ম্যান টু ম্যান পার্টি বলে। রাতদিন প্রেসক্লাব বা শাহাবাগে চিল্লায় তারাও জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। এর বড় কারণ হলো "আপনে মানে না বাপের নাম" আমি বড় নেতা লোকে মানুক আর না মানুক। পিছনে তাকায় না সে কোত্থেকে উঠে এসেছে? অতীত ইতিহাসই বা কি? গণতন্ত্রের মানসিকতা থাকলে তারা তো বড় দলে যেতে পারতো। না প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারি থাকা চাই।
নির্বাচন আসলে এদের গতি বাড়ে কদর বাড়ে। জোটে টানাটানি হয় আর যদি কিছু পয়সা পাওয়া যায়। জনগণের সমর্থন থাক আর না থাক অন্তত বক্তৃতা তো দেয়া যায়। আবার জিজ্ঞেস করে কেমন বক্তৃতা দিলাম ইত্যাদি ইত্যাদি।
বিডিআর হত্যাকান্ডের তদন্ত সংক্রান্ত একটি কমিশন ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। প্রধান যাকে নিয়োগ করা হয়েছে তিনি মেজর জেনারেল (অব:) এ এল এম ফজলুর রহমান। Right man in Right place হয়েছে বলে সাধারণ মানুষ মনে করে। মানুষ তাকে বাংলার বীর বলে মনে করে। সাহসী সৎ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হিসেবে চিনে।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আপনি দেশের সকল মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন না। কেউ পারেনি, পারবেও না। আপনি শুধু দুটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারেন। আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের উপযুক্ত পলিসি প্রয়োগ করুন।
আপনার প্রতি আস্থা আছে কিনা এই বিষয়ে সংবিধান এমেন্ডম্যান্ড বা জুডিশিয়াল মতামত গ্রহণ পূর্বক রেফারেন্ডাম দিয়ে সংস্কার অব্যাহত রাখুন। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর ওপেন মতামত গ্রহণ করুন।
লেখক: সাবেক কর কমিশনার ও আহবায়ক-কাঙ্খিত বাংলাদেশ।
আইএ
আপনার মতামত লিখুন :