করপোরেট সাংবাদিকতা

আটকে দিল ‘এখন’ টিভির সিকিউরিটি

  • নিয়ন মতিয়ুল | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৫, ০২:৩০ পিএম
আটকে দিল ‘এখন’ টিভির সিকিউরিটি

ঢাকা : ক’দিন আগে আমাদের স্মার্ট মোজো রিপোর্টার আরিফ বলল, “ভাইয়া, ‘এখন’ টিভিতে সিভি দিয়েছি। একটু দেখবেন?” বললাম, “তুষার ভাই তরুণদের আইডল। কাজ করার সুযোগ পেলে দারুণ হবে তোমার।” সে বলল, “ভাইয়া সেজন্যই তো বলছি।  প্লিজ, একটু দেখেন। ”

মনে পড়ল, গত বছরের মার্চে বনলতা ট্রেনে রাজশাহী থেকে ঢাকায় ফেরার সময় তুষার ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়-আলাপ। মুখোমুখি সিট পড়েছিল। স্টেশন ম্যানেজার স্বয়ং তার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। উপহার দিলেন। কয়েক ঘণ্টার জন্য আমরাও ভিভিআইপি হয়ে গিয়েছিলাম।  

ডিজিটাল মিডিয়ার দৌড়, টিভি মিডিয়ার গতি-গন্তব্য-এসব নিয়ে বেশ আলাপ হলো। নামার সময় মোবাইল নম্বর নিলাম। তুষার ভাই বললেন, “হাটখোলা রোডে আমার অফিসে আসুন। কথা হবে।” সেই সাক্ষাতের পর ফোন দেওয়া বা তার অফিসে যাওয়া হয়নি। কিছুদিন আগে বিশাল নেতার পদ পাওয়া আমার সাংবাদিক বন্ধু শাহীন বলল, “দোস্ত, মতিঝিলে আমার অফিস। একবার আসো।  কথা আছে।”

গত ৯ জানুয়ারি দুপুরে বন্ধুর অফিসে গিয়ে না পেয়ে ফোন দিলাম। শাহীন বলল,  “দোস্ত হঠাৎ করেই বগুড়ায় চলে এসেছি।” সঙ্গে থাকা সাবেক সহকর্মী সোহাগ ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ করতেই মনে পড়ল, আগের দিনে আমার জেলা বগুড়ায় তো ‘এখন’ টিভির সিইও তুষার আব্দুল্লাহর অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা। তার আগে বগুড়ায় ডকুমেন্টারি করতে গিয়েছিলেন তিনি। ঘটনা কী?

ভাবলাম, যাই তুষার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে আসি। সোহাগ ভাইকে বিদায় দিয়ে সোজা হাটখোলা রোড। ফোন দিলাম ‘এখন’ টিভির রিপোর্টার আমার সাবেক সহকর্মী মাহবুবকে। সে ফোন ধরছিল না। ‘এখন’ টিভির গলি খুঁজতে খুঁজতে বিরক্ত লাগল। লিফটের কাছে পৌঁছতেই দুই সিকিউরিটি পথ আটকাল।

তারা জানতে চাইল, কার কাছে যেতে চাই? বললাম, তুষার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করব। তারা বলল, অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে? বললাম, নাই। আটকে গেলাম। এর মধ্যেই এখন টিভির রিপোর্টার মাহবুব ফোন ব্যাক করল। বললাম, আপনার অফিসের নিচে। সে হতাশ করে দিয়ে বলল, “আমার তো ডে অফ ভাই”। কী আর করা, ফোন দিলাম তুষার ভাইকে। ফোন ধরলে পরিচয় দিয়ে বললাম, কিছু কথা ছিল।

জানতে চাইলেন, কী বিষয়ে কথা? বললাম, সাক্ষাতে বলি। তিনি বললেন, “নিউজে ব্যস্ত আছি। সময় লাগবে।” ‘ওকে’ বলে ফোন কেটে দিলাম। ভাবলাম, নিউজের পিক আওয়ারে এসে ভুলই করেছি। অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু কোথায় অপেক্ষা করব? গ্রাউন্ডে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই।

সিকিউরিটিকে বললাম, উপরে গিয়ে বসা যাবে না? বলল, স্যারের পারমিশন লাগবে। বললাম, এখানে তো বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। তারা অসহায়ের মতো তাকালেন আমার দিকে। আমি ঘামছি। জেলায় ৭ বছর আর ঢাকায় ১৪ বছর মিলে ২১ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা হঠাৎ জিরো হয়ে গেল করপোরেট মিডিয়ার দুই সিকিউরিটির কাছে।

বাসা থেকে সঙ্গিনীর ফোন। তুমি কখন ফিরবে? খাবার তো রেডি, চলে আস একসঙ্গে খাব। কী আর করা! লজ্জা, সংকোচে অনেকটা পালিয়ে জ্যাম ঠেলে বাসায় ফিরলাম। সঙ্গিনীর কাছে ঘটনা চেপে গেলাম। পুরোটা বিকেল কাটল করপোরেট ভাবনায়। মনে হলো, যে বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছিলাম, সেটা জানানো দরকার তুষার ভাইকে।

সন্ধ্যায় লিখলাম, “আমার জেলায় আপনার বিরুদ্ধে মানববন্ধন হয়েছে।  ঘটনাটি দুঃখজনক। খুব খারাপ লাগা থেকে কিছু শেয়ার করতে গিয়েছিলাম। তিনি লিখলেন, “মিটিং এ ছিলাম। বেরিয়ে দেখি আপনি নেই।” তার মানে তিনি নিউজরুম থেকে বের হয়ে মিটিংরুমে ব্যস্ত ছিলেন। প্রশ্ন জাগল, তিনি কি নিচে নেমে আমার খোঁজ করেছিলেন? চুপসে গেলাম, আর কিছু লেখা হলো না।

আসলে করপোরেট মিডিয়া সাংবাদিকদের শ্রেণীবিন্যাস করেছে ব্র্যান্ডের ভিত্তিতে। ‘চৌবাচ্চাসম’ ব্র্যান্ড নিয়ে আপনি ‘মহাসাগরসম’ ব্র্যান্ডকে ছুঁইতে পারেন না। তাছাড়া স্যাটেলাইট স্ক্রিন ব্র্যান্ড তারকাদের ‘মহান’ হিসেবে দেখায় শুধু। বাস্তবে তাদের চারপাশে থাকে বৈষম্যবাদের অসংখ্য পুরু দেয়াল। যেসব দেয়ালের এপার-ওপার শুধুই সিকিউরিটি।

লেখক : সাংবাদিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Link copied!