ঢাকা : সাত বছর পর আবার লন্ডনে যেতে বিমানবন্দরের পথে রওনা হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া; পথে পথে তাকে বিদায় দিতে ভিড় করেছেন নেতাকর্মীরা, বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘ সারিবেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাত ৮টা ১৪ মিনিটে গুলশানের বাসা থেকে ক্রিম কালারের একটি গাড়িতে করে রওনা দেন তিনি। গাড়িতে তার পাশে রয়েছেন ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান সিঁথি।
তাকে নিয়ে বাসার সামনে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে ধীরে ধীরে যাত্রা শুরু করে গাড়ি বহর। গুলশান থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কজুড়ে ঢল নেমেছে নেতাকর্মীদের। তাদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে আশপাশের পুরো এলাকা।
বিমানবন্দর সড়কে দুই কিলোমিটারের মত এলাকাজুড়ে নেতাকর্মীরা ফুটপাতে অবস্থান নিয়েছেন।
তার গাড়ি সরাসরি শাহজালাল বিমানবন্দরের টারমাকে যাবে, যেখানে তাকে নিয়ে যেতে অপেক্ষমান রয়েছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স।
রাত ১০টায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করবে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। এটি সোমবারই ঢাকায় এসেছে, সেটিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টারমাকে রাখা হয়েছে।
ফিরোজায় খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতিমা, প্রয়াত ভাই সাঈদ ইস্কান্দারের সহধর্মিনী নাসরিন ইস্কান্দারসহ আত্বীয় স্বজনরা বিদায় জানান।
দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে যেতে গত কয়েক বছর থেকে চেষ্টা চালাচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যরা ও বিএনপি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পাঁচ মাস বাদে সেই পথ সুগম হয়। চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ হয়।
প্রাথমিক পরিকল্পনায় তার লন্ডন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা বলা হলেও এখন যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়াই চূড়ান্ত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভর্তি হবেন ‘লন্ডন ক্লিনিকে’, যেখানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি ধনাঢ্য ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিতে যান।
সবশেষ সাড়ে সাত বছর আগে যুক্তরাজ্যেই চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। সেবার চোখ ও পায়ের চিকিৎসা নিয়েছিলেন।
লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় তিনি ভুগছেন।
সেই কারণে ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডনযাত্রার পর আর কোনো বিদেশ সফর হয়নি।
খালেদা জিয়া রওনা হওয়ার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্য দিনের চেয়ে সেখানে বেশি সংখ্যায় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ম্যাডাম বাসা থেকে রওনা হয়েছেন। তিনি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীসহ সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
সন্ধ্যার পর ফিরোজায় এসে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেন মির্জা ফখরুল।
চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা টিম ‘সিএসএফ-চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স’ খালেদা জিয়াকে বহন করা পাজারো গাড়িটি চারদিক থেকে ঘিরে নেতাকর্মীদের ডিঙিয়ে এগোতে থাকে।
তার বাসার সামনের সড়ক থেকে গুলশান অ্যাভিনিউ, গুলশান-২, বনানী সড়কের একপাশে নেতাকর্মীদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায়। দীর্ঘক্ষণ ধরে তাদের নানা স্লোগানে সড়ক ছিল সরব।
ফিরোজার বাসার সামনে সহস্রাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল সন্ধ্যা থেকে। আর এদিন সকাল থেকে বাসা ও আশপাশের সড়কে ভিড় লেগে ছিল। সময় গড়ানোর সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। বিএনপিসহ সব অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নেত্রীকে দেখতে ভিড় করেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে বিদায় জানানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ কারণে বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তা বাড়িয়েছে পুলিশ। নিরাপত্তা বাড়ানো হয় গুলশান এলাকাতেও। ফিরোজার সামনের রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডনযাত্রা পথে দোহায় যাত্রা বিরতি রয়েছে।
সঙ্গে যাচ্ছেন কারা : লন্ডনের পথে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিশেষ উড়োজাহাজে তার পুত্রবধূ ছোট ছেলে আরফাত রহমানের স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান সিঁথি থাকবেন। সঙ্গে থাকবেন চারজন চিকিৎসক ও প্যারামেডিক্স।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ডের ছয়জন সদস্যও যাবেন তার সঙ্গে। তারা হলেন, মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক এফএম সিদ্দিক, অধ্যাপক নরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন।
এছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী বলেন, বিমানটিতে সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধার যন্ত্রপাতি, মেসিনারি ও ল্যাবরেটরিও হয়েছে।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :