ঢাকা : নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধর দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী সেলিমের ছেলে মোহাম্মদ ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নুর শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে, গত মঙ্গলবার এ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) আশফাক রাজীব হায়দার। ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নুর এ বিষয় শুনানির জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন।
ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিম থাকেন ‘চাঁন সরদার দাদা বাড়ি’ ২৬, দেবীদাস ঘাট লেন, চকবাজার, ঢাকা, এ বাড়িতে। ঐতিহ্যবাহী এ বাড়িতে সোমবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে অভিযান চালায় র্যাব-১০-এর একটি দল। অভিযানকালে কৌতূহল বশত শত শত মানুষ জড়ো হয় চকবাজার এলাকায়। আটতলা বিশিষ্ট বাড়িতে হাজি সেলিম নিজে এবং তাঁর ছেলেরা থাকেন।
হাজি সেলিমের তিন ছেলে। তাঁর মেজ ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম থাকেন পঞ্চম তলায়। চতুর্থ তলায় থাকেন ইরফান সেলিমের স্ত্রী, বাড়ির দ্বিতীয় তলায় হাজি সেলিম এবং ষষ্ঠ তলায় থাকেন বড় ছেলে সুলাইমান সেলিম। ছোট ছেলে আশিক সেলিম অস্ট্রেলিয়ায় পড়ালেখা করেন। বাকি তলাগুলো ভাড়া দেওয়া রয়েছে।
এদিকে ইরফান সেলিমের বাসা থেকে গত সোমবার বিপুল দেশি-বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার করেছে র্যাব। এ ছাড়া বাসা থেকে গুলিভর্তি একটি পিস্তল, এয়ার গান ও বেশ কিছু ওয়াকি টকি উদ্ধার করা হয়। অভিযানে থাকা র্যাব-১০-এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু সোমবার বিকেলে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিমের বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি অস্ত্র, বিপুল দেশি-বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এই অস্ত্র বৈধ নাকি অবৈধ তা যাচাই করা হচ্ছে। এখনো অভিযান চলছে।’
র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেত্বত্বে ও র্যাব-১০-এর সহযোগিতায় বিপুল র্যাব সদস্য হাজি সেলিমের ছেলের বাসায় অভিযান চালান। দুপুর ১২টার পর থেকে এ অভিযান শুরু হয়।
অভিযানের বিষয়ে জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ। তিনি জানান, অভিযানের সময় সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে কাউন্সিলর ইরফান সেলিম ও তাঁর দেহরক্ষী মো. জাহিদকে র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুর থেকে ‘চাঁন সরদার দাদা বাড়ি’ ঘিরে রাখেন র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। পরে তাঁরা বাসায় প্রবেশ করেন। হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম গত রোববার রাতে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদের ওপর হামলা মামলার প্রধান আসামি। ইরফানের দেহরক্ষী মো. জাহিদ মামলার ৩ নম্বর আসামি। ওই মামলার আসামি হাজি সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এর আগে ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী জানান, গত রোববার রাতের ঘটনায় সোমবার সকালে একটি মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর ১৬। এ মামলার বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদকে রক্তাক্ত দেখা যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘গত রোববার বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ নীলক্ষেত থেকে বই কিনে তাঁর স্ত্রীসহ মোটরসাইকেলে করে ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছিলেন। একটি জিপ যার মধ্যে সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো ছিল। ওই গাড়িটি পেছন থেকে মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। পরে মোটরসাইকেলটি থামিয়ে পরিচয় দেন লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ। তিনি ধাক্কা দেওয়ার বিষয়টি জানতে চান। একপর্যায়ে গাড়িতে থাকা লোকজনের সঙ্গে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি হয় এবং উনি আহত হন। এ নিয়ে রাতে জিডি করার পর সকালে তিনি ধানমণ্ডি থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এটা মূলত মারধরের ঘটনা। মামলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। মামলার এজাহারনামীয় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তাকে নিয়ে ঘটনার স্থান পরিদর্শন করেছি। আমরা এখানে সতর্কতার সঙ্গে সকল টেকনোলজি ব্যবহার করে এবং নথি সংগ্রহ করেছি। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসামি যত বড় ক্ষমতাধরই হোক না কেন, তাঁকে আইনের আওতায় আনা হবে।’ এজাহারে হত্যা হুমকির কথা রয়েছে বলে জানান ডিসি সাজ্জাদ।
এদিকে অভিযানে ৩৮টি ওয়াকিটকি, বিদেশি মদও অস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব। ইরফানকে ১৮ মাস ও তার দেহরক্ষী মো. জাহিদকে ছয় মাস কারাদণ্ড দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ
আপনার মতামত লিখুন :