ঢাকা: শর্তসাপেক্ষে সরকারের নির্বাহী আদেশে কারামুক্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে বেশ দূরেই থাকছেন। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) এ সময়ে কদাচিৎ দলীয় কাউকে সাক্ষাৎ দিলেও তা হচ্ছে সর্বোচ্চ সতর্কতায়। তার দিন কাটছে একান্তই পারিবারিক পরিমণ্ডলে। শারীরিক অবস্থা রয়েছে অপরিবর্তিত। যদিও তার দল বিএনপি ও পরিবারের সদস্যরা বলছেন, খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসা দরকার, করোনার কারণে এখনো চিকিৎসা শুরু হয়নি।
২৫ মাসেরও বেশি সময় কারাবন্দি থাকার পর গত ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে ‘মানবিক বিবেচনায়’ শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়ে সরকার নির্বাহী আদেশ জারি করে। এরপর আরও এক দফায় তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়। তারপর থেকে তিনি গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন।
সূত্রে জানা যায়, করোনার কারণে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় শুধু ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যরাই নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ করছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। প্রয়োজনে দলের কাউকে ডেকে পাঠান বিএনপিপ্রধান নিজেই। খালেদা জিয়া দীর্ঘ সময় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পত্রিকা পড়েন। মূলধারার সব পত্রিকাই তার বাসভবনে বান্ডিল করে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বেসরকারি টেলিভিশনের খবরও দেখেন নিয়মিত। টিভি দেখে বা পত্রিকা পড়ে দলকে কোনো দিকনির্দেশনা দেয়ার থাকলে কারও মাধ্যমে বার্তা পাঠান। জরুরি কোনো প্রয়োজন হলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বা আইনজীবী কোনো নেতাকে তিনি ডেকে পাঠান।
এছাড়া লন্ডনে থাকা বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, দুই পুত্রবধূ ও নাতনিদের সঙ্গে ফোনে কথাবার্তা বলে সময় কাটান তিনি। মাঝে মধ্যে বড় ভাই প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারের পরিবার, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের পরিবার, বোন সেলিনা ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও বাসায় কথাবার্তা বলে সময় কাটে বিএনপি চেয়ারপারসনের।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বাসার সাধারণ খাবারই খাচ্ছেন খালেদা জিয়া। তবে ডায়াবেটিস থাকায় সতর্কভাবে খাবার খান তিনি। তার পছন্দের খাবার হচ্ছে—স্যুপ, সবজি-রুটি, মুরগি, লাউ ও মাছের ঝোলের তরকারি। মাঝে মধ্যে সরু চালের ভাত ও পোলাও খান তিনি। তার বাসায় পুরোনো বাবুর্চিরাই রয়েছেন। অনেক সময় স্বজনরা বাসা থেকে রান্না করে খাবার নিয়ে যান তার জন্য।
দলীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। অস্টিও আর্থাইটিস, ডায়াবেটিসসহ অন্য সব রোগই বিদ্যমান। এখনো চলাফেরায় অন্যের সাহায্য নিতে হয়। জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা কমেনি। বাসায় দুজন নার্স স্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে। তারা বাসায় থেকেই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন এবং ফিজিওথেরাপি দিচ্ছেন। এছাড়া তার মেরুদণ্ড, বাঁ হাত ও ঘাড়ের দিকে শক্ত হয়ে যায়। তিনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খান। বাঁ চোখেও একটু সমস্যা রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের।
সূত্র মতে, প্রতিদিনই একজন চিকিৎসক খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলও যায় মাঝে মধ্যে। ওষুধ খেয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন তিনি। এখন নিয়মিত ডায়াবেটিসের মাত্রা ৮ থেকে ১৪’র মধ্যে ওঠানামা করে। লন্ডন থেকে পুত্রবধূ অর্থাৎ তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান তার চিকিৎসার সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন।
অবশ্য কিছুদিন আগে খালেদা জিয়ার লন্ডনে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার গুঞ্জন ওঠে। কিন্তু সে বিষয়ে এখনো কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়।
তার বোন সেলিনা ইসলাম এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানান, দ্বিতীয় দফায় মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনের সময় পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে (বিদেশে নিয়ে) উন্নত চিকিৎসার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।
উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে পাঠানোর আলোচনা প্রসঙ্গে সেলিনা ইসলাম বলেন, ‘সেখানে কীভাবে পাঠাবো? সেখানেও তো করোনার অবস্থা ভয়াবহ। এখনো লকডাউন চলছে। কেউ যেতেও পারছে না। আবার আসতেও পারছে না। দুই দেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো যায় কি-না তা চিন্তা-ভাবনা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। কারাগার থেকে এসেও শারীরিক তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। করোনাভাইরাসের কারণে উন্নত চিকিৎসাও করানো যাচ্ছে না। বাসায় থেকেই যতটুটু সম্ভব চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার শরীরের গিরায় গিরায় এখনো ব্যথা কমেনি। একা দাঁড়াতেও পারছেন না, হাঁটাচলাও করতে পারছেন না। বিছানা থেকে বাথরুমে যেতেও অন্যের সহযোগিতা প্রয়োজন হয় তার। এমনকি খাবার খেতেও সহায়তা নিতে হয়। রুম থেকে ড্রয়িং রুমে বা রিডিং রুমে যেতেও সহায়তা লাগে। তবে খাবারে কোনো সমস্যা নেই। স্বাভাবিক খাবারই খাচ্ছেন। যখন যেটা তার পছন্দ তা-ই রান্না করে দেয়া হয়।’
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, খালেদা জিয়া প্রচণ্ড অসুস্থ। তার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হয়েছে। সাজা স্থগিত হলে তো তার ওপর কোনো বিধি-নিষেধ থাকার কথা নয়। পার্থক্যটা হচ্ছে, শুধু হাসপাতাল থেকে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। ওখানে তিনি হোমলি পরিবেশের মধ্যে আছেন। যেটাকে সোজা কথায় বলা যায়— এটা হচ্ছে গৃহে অন্তরীণ করা। অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট তো এখানে হচ্ছে না। তার উন্নত চিকিৎসা জরুরি।’
সোনালীনিউজ/এইচএন
আপনার মতামত লিখুন :