উপনির্বাচন সিলেট-৩

কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি?

  • সিলেট প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২১, ০২:৪২ পিএম
কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি?

সিলেট : সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন আবেদন বিক্রি শুরু হয়েছে। আগামী ১০ জুন পর্যন্ত ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন আগ্রহীরা। প্রয়াত মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর এ আসনে আবেদনপত্র বিক্রির প্রথমদিনই গতকাল শুক্রবার ৭ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানিয়েছে,প্রথম দিনে সিলেট-৩ আসনের মনোনয়ন সংগ্রহকারীদের মধ্যে রয়েছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী,আওয়ামী লীগে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ,জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান,সাঈদুর রহমান।

এর আগে, গত বুধবার এ আসনে উপনির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী,শূন্য হওয়া সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ১৫ জুন। ১৭ জুন যাচাই বাছাইয়ের পর ২৩ জুন পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। ভোট হবে ১৪ জুলাই।

এদিকে, সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন অন্তত দুই ডজন দেশি ও প্রবাসী নেতা। এর মধ্যে কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংসদ হওয়ার ইচ্ছাপোষণ ও দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির দাবি জানিয়ে আসছেন। আর মাঠে কাজ করছেন প্রায় অর্ধডজন নেতা।

মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকের ধারণা, সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেওয়ায় আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলেই সাংসদ হওয়ার বড় সুযোগ রয়েছে। এমন ধারণা থেকেই দলের মনোনয়ন পেতে এলাকায় গণসংযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন তারা।

তবে এবার তাদের লড়াই ঢাকায়। ১০ জুন পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন বিক্রি শেষে আগামী ১১ অথবা ১২ জুন সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। তাই এখন থেকেই ঢাকায় দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের সাথে সাক্ষাত ও লবিং তদবির অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণে তাঁর ঘনিষ্টদের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, প্রয়াত সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের তিনবারের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বিএমএর কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার আওয়ামী লীগের সভাপতি এনাম উল ইসলাম, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ মুজিবুর রহমান জকন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সায়ফুল আলম রুহেল, সদস্য বদরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, কোষাধ্যক্ষ শমসের জামাল, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কফিল আহমদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আ স ম মিসবাহ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট দেওয়ান গৌস সুলতান, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মনির হোসাইন, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাছিত টুটুল, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা শাখার সভাপতি সাইফুল আলম, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাহিদ ও বালাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুর রহমান মফুর।

এছাড়া সিলেট-৩ আসনের বাইরের বাসিন্দা হলেও আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ইনাম আহমদ চৌধুরী।

এদিকে, সিলেট শহরের সন্নিকটে সিলেট-৩ আসনের অবস্থান। ভৌগোলিক দিক দিয়েও এই আসনের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জকে সিলেটের শিল্প নগরী বলা হয়ে থাকে। এখানে সার কারখানা, বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় এই আসনের মর্যাদা অনেকটা শানদার। সংসদ সদস্যদের জন্য এই আসন খুবই কাঙ্খিত। এখানে জাতীয় পার্টি, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ সবারই আধিপত্য ছিল। জাতীয় পার্টি সিলেট ৩ আসনকে তাদের মূল ঘাঁটি মনে করলেও এখান থেকে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী। সর্বশেষ একাধারে তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। আসনটি  নিয়ে হিসাব-নিকাশ চলছে বিভিন্ন ভাবে। তবে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি আসনটি চায়। আসনটি ছাড় দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের কাছে তারা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, আসনটিতে আওয়ামী লীগ এমপি ছিলেন তাই জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

এই আসনে ২০০৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এমপি ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। গত ১৮ মার্চ তিনি করোনা থাবায় মারা গেলে থমকে দাড়ায় চলমান উন্নয়ন। সামাদ চৌধুরীর উন্নয়ন ধারাবাহিকতা চলমান রাখার অঙ্গিকার নিয়ে আওয়ামীলীগের দুই ডজন নেতা নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। জনগণও চায় এর ধারাবাহিতা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!