সহিংসতার পেছনে দূষছে বিএনপিকে

ইউপিতে কৌশলী আওয়ামী লীগ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২১, ১২:১৮ পিএম
ইউপিতে কৌশলী আওয়ামী লীগ

ঢাকা : ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রমুখী করতে বিদ্রোহী প্রার্থীরাও ভূমিকা পালন করছেন। এতে নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। তাই বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে খানিকটা নমনীয়তা দেখাচ্ছে তারা।

তবে সহিংসতার পেছনে বিএনপির ভূমিকাকে ‘অদৃশ্য ছায়াশত্রু’ হিসেবে দেখছেন। এই অদৃশ্য ছায়াশত্রুর পাশাপাশি নির্বাচনে সহিংসতা মোকাবিলাকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছে ক্ষমতাসীন দলটি।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় প্রার্থী নির্বাচিত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় উভয় সংকটের মতো। কেননা, বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হলে ভোট না হওয়া নিয়ে সমালোচনা হয় বিভিন্ন মহল থেকে।

অন্যদিকে প্রতিদ্বন্ধিতা ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে গেলে মাঠে প্রার্থী রাখতে হচ্ছে। তাতে প্রতিদ্বন্ধিতায় হলেও সহিংসতার আশঙ্কাও থাকছে। আবার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজয়ের আশঙ্কাও বাড়ছে। তবে সহিংসতার পেছনে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সংস্কৃতিকেই দায়ী করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

এরইমধ্যে চলমান দশম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ শেষ হয়েছে। তবে শুরুতেই ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। কিন্তু তাতেও নিরঙ্কুশ সাফল্য আসছে না ব্যালট বাক্সে।

অনেক ইউপিতেই নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হচ্ছেন ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ বা দলের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিতদের কাছে।

কোথাও কোথাও অবশ্য ধানের শীষ না নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শামিল হচ্ছেন বিএনপি প্রার্থীরাও। সব মিলিয়ে ভোটের মাঠে কোথাও দ্বিমুখী, কোথাও ত্রিমুখী ‘ছায়াশত্রু’র প্রতিদ্বন্ধিতার মুখে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

এ পরিস্থিতিতেও নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থীদের পরাজয় নিয়ে আত্মসমালোচনা থাকলেও নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হওয়ায় সন্তুষ্টিও রয়েছে।

এদিকে, বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় অনেক প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে যাওয়া নিয়েও সমালোচনা রয়েছে বিরোধীদের মধ্যে। ফলে চ্যালেঞ্জ উত্তরণের মাধ্যমে ইউপি নির্বাচনের পরের ধাপগুলোতে উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করাকেই লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ একাধিক নেতা বলেন, আমরা সবসময় নির্বাচনের পক্ষে। নির্বাচনি পরিবেশ উৎসবমুখর ও গ্রহণযোগ্য করে ভোটযুদ্ধে শামিল হতে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা সবসময় প্রস্তুত। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ‘কূটকৌশলে’র বিপরীতে নির্বাচনের মাঠে ‘ছায়াশত্রু’ হিসেবে সক্রিয়।

তারা আমাদের দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পেছনে অদৃশ্য শক্তি হিসেবে উসকানি দিয়ে নির্বাচনকে সহিংস ও অগ্রহণযোগ্য করার তৎপরতা চালাচ্ছে। তবে এই ‘অপকৌশল’কে সফল হতে দেবো না। তাই আমাদেরও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের দমনে কৌশলী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে যেতে হচ্ছে।

আগামী ধাপের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা কমিয়ে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশে উপহার দেওয়াকেই আমরা সরকারি দলে থেকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।

ইউপি নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ভোটে মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ততা বেড়েছে, এটি আশার বিষয়। নাগরিকরা ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করছে। এখানে দলীয় প্রার্থী বা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মুখ্য বিষয় নয়।

আমি মনে করি, এর মধ্য দিয়ে জনগণের নির্বাচনের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষার প্রমাণ মিলছে। এই প্রমাণও মিলছে যে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারছে। ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে নাগরিকদের দায়িত্ববোধের প্রতিফলও ঘটছে। এটি দেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্রের প্রক্রিয়ার পথকে আরো সংহত করবে।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচনে জিতে আসতে পারছে না। আওয়ামী লীগ এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি দলের প্রতি নিবেদন, কর্তব্যবোধ এবং দুর্দিনে দলের প্রতি ভূমিকার মতো বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সব ক্ষেত্রেই দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে একটি বিষয় আছে, ত্যাগী নেতাকর্মীদের দলের প্রতি কমিটমেন্ট বেশি থাকে।

অনেক সময় স্থানীয়দের মধ্যে যারা অন্যান্য দলের সমর্থক, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের এরকম কমিটেড প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে রক্ষণশীল আচরণ করতে দেখা যায়। এরকম ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয় মানে এই নয় যে আওয়ামী লীগ উপযুক্ত প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে পারেনি। মনোনয়ন বোর্ড সঠিক লোকটিকেই মনোনয়ন দিয়েছে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্থানীয় ভোটারদের বিবেচনার ক্ষেত্রটি প্রসারিত।

স্থানীয় দলাদলি থাকে, বংশীয় দলাদলি থাকে, গোষ্ঠীর দলাদলি থাকে। এরকম বিভিন্ন ধরনের সমীকরণ থাকে। ফলে এই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় মানেই আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়তা হারিয়েছে এমন উপসংহারে পৌঁছানোর সুযোগ নেই। এরকম প্রবণতা আমরা অতীতেও দেখেছি।

‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা সবসময় ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী কমিয়ে আনার চেষ্টা করি। এ বিষয়ে আগের চেয়ে কঠোর অবস্থানে আমরা আছি। আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের শৃঙ্খলা ইস্যুতে কখনো ছাড় দিতে রাজি নন। আবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কেউ দল থেকে বেরিয়ে যাবেন এটিও চান না। তারপরও আমরা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়া নেতাদের বিষয়ে কঠোর রয়েছি। তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে বলা হচ্ছে। উপযুক্ত জবাব দিতে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে বহিষ্কারও করা হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ইস্যুতে আওয়ামী লীগ কঠোর হলেও বিষয়টিকে সম্পূর্ণরূপে নেতিবাচকভাবে দেখছেন না দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হচ্ছে গণতন্ত্রের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। দল থেকে তো একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। সুতরাং দলের সিদ্ধান্ত মানছে না এই প্রশ্ন যেমন রয়েছে, তেমনি এর মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক ভোটের মাধ্যমে ভালো নির্বাচনও হচ্ছে। এই যে ৭৩ শতাংশের বেশি মানুষ ভোট দিচ্ছে, মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছে এটি নিয়ে নেতিবাচক ভাবনার কিছু নেই। আর নির্বাচন হলে জয়-পরাজয় তো থাকবেই।

তিনি বলেন, ‘বিদ্রোহী’দের জন্য সাংগঠনিক কঠোর বিধান রয়েছে সে কখনোই আর দলের মনোনয়ন পাবে না। একজন রাজনৈতিক কর্মীর জীবনে এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কী হতে পারে! আমরা সাংগঠনিকভাবে এই বিধান মেনে চলব। কিন্তু এর বাইরে কিছু করতে গেলে সেটি সেই রাজনৈতিক কর্মীর গণতান্ত্রিক অধিকারে অকারণ বাড়তি চাপ প্রয়োগ করা হবে। তাই আমরা সেটি করতে চাই না।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!